আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২১শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, ভোর ৪:২৮
প্রাণ-প্রকৃতি : সুন্দরী পোকা লেডিবার্ড বিটিল

প্রাণ-প্রকৃতি : সুন্দরী পোকা লেডিবার্ড বিটিল

প্রকাশিতঃ

অনলাইন ডেস্ক : শরৎকালটা বরাবরই খুব পছন্দের ঋতু। এ দেশের পল্লী অঞ্চলে শরৎকাল যেভাবে আসে, সেভাবে শহরে দেখি না। গ্রামের ভেজা মাটির আইলের পথ ধরে হেঁটে যেতে যেতে যেভাবে নীল আকাশছোঁয়া সবুজ শ্যামল কচি ধানের ক্ষেত দেখা যায়, সেভাবে শহরে দেখা যায় না। শরতের ভোরটা হয় আরো অন্য রকম।

দূর্বাঘাসের মাথায় জমতে শুরু করে শিশিরবিন্দু, পাতলা কুয়াশায় মায়াবী হয়ে ওঠে দূরের গাছপালা। তাই শরতের এই রূপ দেখতে প্রায় প্রতিবছরই কোনো না কোনো গ্রামে ছুটে যাই। ধানক্ষেতের আইলে বসে ধানগাছগুলো মাথা দোলানো অভিবাদন গ্রহণ করে তৃপ্ত হই। খানিকক্ষণ সে গাছগুলোর পাশে বসে উপভোগ করি সেসব ক্ষেতে নানা রকম প্রাণের খেলা।

এক শরতের সকালে খুলনার বটিয়াঘাটার এক গ্রামে ধানক্ষেতের পাশে বসে ধানগাছের সঙ্গে বিভিন্ন পোকামাকড়ের খেলা দেখছিলাম। ধানগাছগুলো গর্ভবতী হয়ে উঠেছে, গাছের গোড়ার কুশিগুলো ফুলতে শুরু করেছে। কিছুদিন পরই সেসব গাছে শীষ বের হবে। নতুন ধানের গন্ধে আমোদিত হবে হেমন্ত।
এই সময় ধানগাছগুলো আপন মনে কেবল সেসব শীষ গঠনেই ব্যস্ত হয়ে ওঠে। অন্যদিকে তাদের যেন কোনো খেয়াল করার সময় নেই। আর সেই সুযোগে ধানগাছকে আক্রমণ করতে ছুটে আসে নানা রকমের পোকামাকড়। সৃষ্টিকর্তাও সে কথা জানেন। সে জন্য তিনি আবার সেসব শত্রু পোকাকে শায়েস্তা করার জন্য পৃথিবীতে অনেক বান্ধব পোকা পাঠিয়েছেন। তাদের একটা পোকা হলো লেডিবার্ড বিটিল।

এসব কথা ভাবতে ভাবতে উড়ে এসে পাতার ওপর বসল চকচকে লাল ডানার গোলগাল একটা লেডিবার্ড বিটিল। পরিচ্ছন্ন দেহ, রাজকীয় ভঙ্গিতে সে ধীরপায়ে পাতার ওপর হাঁটতে শুরু করল। হন্যে হয়ে খুঁজতে শুরু করল তার খাবার। আমিও ক্যামেরা তাক করে তার ছবি তুলে নিলাম। দেখে যেতে থাকলাম সেই সুন্দরী পোকার চালচলন। পাতার উল্টোপিঠে কোনো পোকা কিছু ডিম পেড়ে রেখে গিয়েছিল।

সেগুলো সে খাওয়া শুরু করল। এরপর গুটিসুটি মেরে ঢুকে পড়ল একটা মোড়ানো পাতার সুড়ঙ্গে। ধানের পাতাটা ওভাবে মোড়ায় পাতা মোড়ানো পোকার বাচ্চা। হয়তো তারই কোনো ছানাকে খাওয়ার লোভে ওখানে লেডি বিটিলটা ঢুকে পড়েছে। আর দেখা হলো না ওর ক্রিয়াকর্ম, কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর দেখলাম মোড়ানো পাতা থেকে বেরিয়েই সে উড়াল দিয়ে চলে গেল।

সারা পৃথিবীতে প্রায় ছয় হাজার প্রজাতির লেডিবার্ড বিটিল রয়েছে। বাংলাদেশে অন্তত ৯৩ প্রজাতির লেডিবার্ড বিটিল আছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে ৮০টি প্রজাতিই উপকারী, যারা পরভোজী স্বভাবের, ফসলের বিভিন্ন ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে ওরা কৃষকদের উপকার করে। মাত্র ১৩টি প্রজাতি উদ্ভিদভোজী। উদ্ভিদভোজী হলেও ওরা অন্য পোকাদের মতো ধানগাছের ক্ষতি করে না, ধানগাছে ফুল ফুটলে সেসব ফুলের রেণু খেয়ে ওরা বেঁচে থাকে।

ধানের ফুল ফোটে সকালে মাত্র দু-তিন ঘণ্টার জন্য। চাল তৈরির জন্য লাগে একটি রেণু, একটি ফুলে থাকে শত শত রেণু। কাজেই সেসব উদ্ভিদভোজী রেণু খেলেও তাতে ধানের কোনো ক্ষতি হয় না। কিছু প্রজাতি আছে, যারা সবজি ও আগাছার পাতা খায়  ফুটো করে। তবে বেশির ভাগ লেডিবার্ড বিটিল সবজির চরম ক্ষতিকর জাব পোকা ও ছাতরা পোকাদের খেয়ে উপকার করে। নির্বিচারে শত্রু পোকাদের মারতে আমরা যে বিষাক্ত কীটনাশক ছিটাই ওরাও তাতে মরে যায়। বন্ধুদের এভাবে মেরে ফেলার সাজাও তাই কৃষকদের ভোগ করতে হয়।

প্রতিটি প্রজাতির লেডিবার্ড বিটিল পোকার রং ও ডানার দাগ ভিন্ন, আকারও ছোট-বড় হয়। যেটি দেখলাম সেটি ঈড়পপরহবষষধ ঃত্ধংাবত্ংধষরং প্রজাতির লেডিবার্ড বিটিল, গোত্র কক্সিনেলিডি। একে চেনার সহজ উপায় হলো ওদের পিঠের কালো দাগগুলো। ১৭৮১ সালে এই প্রজাতির লেডিবার্ড বিটিলের প্রথম বিবরণ দেন ড্যানিশ প্রাণিবিদ জোহান ক্রিস্টিয়ান ফেব্রিসিয়াস। এরা চার থেকে সাত মিলিমিটার লম্বা ও তিন থেকে ছয় মিলিমিটার চওড়া হয়।

ছোট্ট এই পোকাটি দেখতে খুবই সুন্দর। ডানার ওপর আড়াআড়িভাবে দুটি চওড়া ডোরা ও ডানার পেছন দিকে একটি কালো ফোটা থাকে। দুই পাখার ওপর একইভাবে কালো ঢেউয়ের মতো দাগগুলো থাকে। এদের ডিম মাকুর মতো, লম্বাটে, পেট মোটা ও দুই প্রান্ত সরু, হলদে-কমলা রঙের। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হলে তারা প্রায় দুই থেকে তিন সপ্তাহ বাঁচে।

বাচ্চারা দেখতে মায়ের উল্টো, কুমিরের বাচ্চার মতো চেহারা আর রং কমলা-সাদা ফুটিযুক্ত কালো। বাচ্চারাও জাব পোকা খায় আঙুর ফলের মতো রসিয়ে রসিয়ে। একটা বাচ্চা দিনে পাঁচ থেকে ১০টা জাব পোকা খেতে পারে। এরা অন্য পোকার ডিমও খায়, এমনকি মাকড়সার ডিম খেতেও ছাড়ে না। প্রাপ্তবয়স্ক পোকা বাঁচে প্রায় এক মাস। ফসলের ক্ষেতে এসব বন্ধুকে চিনে রক্ষা করা উচিত।

 

সংবাদদাতা/ ইলিয়াস

Facebook
WhatsApp
Twitter

এ সম্পর্কিত আরো খবর

সম্পাদকঃ

সুভাষ সাহা

যুগ্ন সম্পাদকঃ

কাজী কবির হোসেন

ঠিকানাঃ

নারায়ণগঞ্জ অফিসঃ
পদ্মা সিটি প্লাজা, কক্ষ নংঃ ২২২, ৫৫/বি
এস, এম মালেহ রোড, টানবাজার
নারায়ণগঞ্জ-১৪০০

যোগাযোগ

ফোনঃ ৭৬৪০৬৯৯
মোবাইলঃ ০১৭১১৫৬১৩৯০
ইমেইলঃ bisherbashi.com.bd@gmail.com

USA OFFICE:

Wasington DC Bureau Chief:
Dastagir Jahangir,
3621 Columbia Pike Suit #104
Arlington USA, VA
22204
Phone: 7036770679
Email: tugrilcz@gmail.com

 

Website Design & Developed By
MD Fahim Haque
<Power Coder/>
www.mdfahim.com
Web Solution – Since 2009

error: Content is protected !!