অনলাইন ডেস্ক : শরৎকালটা বরাবরই খুব পছন্দের ঋতু। এ দেশের পল্লী অঞ্চলে শরৎকাল যেভাবে আসে, সেভাবে শহরে দেখি না। গ্রামের ভেজা মাটির আইলের পথ ধরে হেঁটে যেতে যেতে যেভাবে নীল আকাশছোঁয়া সবুজ শ্যামল কচি ধানের ক্ষেত দেখা যায়, সেভাবে শহরে দেখা যায় না। শরতের ভোরটা হয় আরো অন্য রকম।
সেগুলো সে খাওয়া শুরু করল। এরপর গুটিসুটি মেরে ঢুকে পড়ল একটা মোড়ানো পাতার সুড়ঙ্গে। ধানের পাতাটা ওভাবে মোড়ায় পাতা মোড়ানো পোকার বাচ্চা। হয়তো তারই কোনো ছানাকে খাওয়ার লোভে ওখানে লেডি বিটিলটা ঢুকে পড়েছে। আর দেখা হলো না ওর ক্রিয়াকর্ম, কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর দেখলাম মোড়ানো পাতা থেকে বেরিয়েই সে উড়াল দিয়ে চলে গেল।
সারা পৃথিবীতে প্রায় ছয় হাজার প্রজাতির লেডিবার্ড বিটিল রয়েছে। বাংলাদেশে অন্তত ৯৩ প্রজাতির লেডিবার্ড বিটিল আছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে ৮০টি প্রজাতিই উপকারী, যারা পরভোজী স্বভাবের, ফসলের বিভিন্ন ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে ওরা কৃষকদের উপকার করে। মাত্র ১৩টি প্রজাতি উদ্ভিদভোজী। উদ্ভিদভোজী হলেও ওরা অন্য পোকাদের মতো ধানগাছের ক্ষতি করে না, ধানগাছে ফুল ফুটলে সেসব ফুলের রেণু খেয়ে ওরা বেঁচে থাকে।
ধানের ফুল ফোটে সকালে মাত্র দু-তিন ঘণ্টার জন্য। চাল তৈরির জন্য লাগে একটি রেণু, একটি ফুলে থাকে শত শত রেণু। কাজেই সেসব উদ্ভিদভোজী রেণু খেলেও তাতে ধানের কোনো ক্ষতি হয় না। কিছু প্রজাতি আছে, যারা সবজি ও আগাছার পাতা খায় ফুটো করে। তবে বেশির ভাগ লেডিবার্ড বিটিল সবজির চরম ক্ষতিকর জাব পোকা ও ছাতরা পোকাদের খেয়ে উপকার করে। নির্বিচারে শত্রু পোকাদের মারতে আমরা যে বিষাক্ত কীটনাশক ছিটাই ওরাও তাতে মরে যায়। বন্ধুদের এভাবে মেরে ফেলার সাজাও তাই কৃষকদের ভোগ করতে হয়।
প্রতিটি প্রজাতির লেডিবার্ড বিটিল পোকার রং ও ডানার দাগ ভিন্ন, আকারও ছোট-বড় হয়। যেটি দেখলাম সেটি ঈড়পপরহবষষধ ঃত্ধংাবত্ংধষরং প্রজাতির লেডিবার্ড বিটিল, গোত্র কক্সিনেলিডি। একে চেনার সহজ উপায় হলো ওদের পিঠের কালো দাগগুলো। ১৭৮১ সালে এই প্রজাতির লেডিবার্ড বিটিলের প্রথম বিবরণ দেন ড্যানিশ প্রাণিবিদ জোহান ক্রিস্টিয়ান ফেব্রিসিয়াস। এরা চার থেকে সাত মিলিমিটার লম্বা ও তিন থেকে ছয় মিলিমিটার চওড়া হয়।
ছোট্ট এই পোকাটি দেখতে খুবই সুন্দর। ডানার ওপর আড়াআড়িভাবে দুটি চওড়া ডোরা ও ডানার পেছন দিকে একটি কালো ফোটা থাকে। দুই পাখার ওপর একইভাবে কালো ঢেউয়ের মতো দাগগুলো থাকে। এদের ডিম মাকুর মতো, লম্বাটে, পেট মোটা ও দুই প্রান্ত সরু, হলদে-কমলা রঙের। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হলে তারা প্রায় দুই থেকে তিন সপ্তাহ বাঁচে।
বাচ্চারা দেখতে মায়ের উল্টো, কুমিরের বাচ্চার মতো চেহারা আর রং কমলা-সাদা ফুটিযুক্ত কালো। বাচ্চারাও জাব পোকা খায় আঙুর ফলের মতো রসিয়ে রসিয়ে। একটা বাচ্চা দিনে পাঁচ থেকে ১০টা জাব পোকা খেতে পারে। এরা অন্য পোকার ডিমও খায়, এমনকি মাকড়সার ডিম খেতেও ছাড়ে না। প্রাপ্তবয়স্ক পোকা বাঁচে প্রায় এক মাস। ফসলের ক্ষেতে এসব বন্ধুকে চিনে রক্ষা করা উচিত।
সংবাদদাতা/ ইলিয়াস