অনলাইন ডেস্ক : শেখ হাসিনার পদত্যাগের বিষয়ে বক্তব্যের পর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গত কয়েকদিন ধরে রাজনৈতিক অঙ্গনে এটি সবচেয়ে বহুল আলোচিত বিষয় ছিল।পরিস্থিতি বিবেচনায় রাষ্ট্রপতি যদি পদত্যাগ করেন, তাহলে সেটি কোনো প্রক্রিয়ায় হবে এবং অন্য কোনো কারণে যদি এই পদ শূন্য হয়, তাহলে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কীভাবে নির্বাচিত হবেন— এ নিয়ে আলোচনা চলছে। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে মঙ্গলবার বঙ্গভবনের বাইরে দিনভর বিক্ষোভের পর সম্ভাব্য নতুন রাষ্ট্রপতির নাম নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে যায়। সেখানে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নামও ভাসছিল।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সংস্কার কাজ অসমাপ্ত রেখে বিচার বিভাগ ছাড়ার আগ্রহ প্রধান বিচারপতির নেই। তাদের একজন বলেছেন, বিচার বিভাগের সংস্কার আর অন্যান্য যেসব পরিবর্তন প্রয়োজন, সেসব নিয়েই তিনি বেশি মনোযোগী। মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সরকারের অন্তত দুজন উপদেষ্টার বৈঠকের পর গুঞ্জন শুরু হয়েছিল, বিচারপতি আহমেদই হতে যাচ্ছেন বঙ্গভবনের পরবর্তী বাসিন্দা। তবে প্রধান বিচারপতির ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র বলেছেন, ওই প্রসঙ্গ আসলে আলোচনাতেই ছিল না।
বিচার অঙ্গনের শীর্ষ পদে মাত্র কয়েক সপ্তাহ কাটিয়ে রাষ্ট্রের শীর্ষ পদে যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে প্রধান বিচারপতি ওই সূত্রদের মধ্যে একজনকে বলেছেন, ‘ওটা নিছকই জল্পনা।’ অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠা রাষ্ট্রপতির বিদায়ের আলোচনা বুধবার হঠাৎ করেই অন্য দিকে মোড় নেয়, যখন তথ্য উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপতির থাকা না থাকা ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়, সাংবিধানিক নয়’। আর সেজন্য বঙ্গভবনের বাইরে আন্দোলনেরও প্রয়োজন নেই। মঙ্গলবার মধ্যরাতে বঙ্গভবনের বাইরে যারা রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করছিল, তাদের মধ্যে এক পর্যায়ে মতভিন্নতা তৈরি হয়েছিল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুজন গুরুত্বপূর্ণ সমন্বয়ক যখন দুদিন সময় চেয়ে বিক্ষোভকারীদের সরে যেতে অনুরোধ করছিলেন, গণ অধিকার পরিষদের একাংশের এক নেতা ছিলেন অনড়। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ বা অপসারণে সাংবিধানিক সংকট হতে পারে– আইনজ্ঞদের এমন মতামতের মধ্যে বিএনপি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে বলেছে, তারা সাংবিধানিক সংকট চায় না। তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ বুধবার এ বিষয়ে কথা বলার আগেই বিএনপির দুই জ্যেষ্ঠ নেতা তাদের দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির ওই দুই নেতাই বলেন, রাষ্ট্রপতির অপসারণ বা পদত্যাগ নিয়ে নতুন করে কোনো জটিলতা তৈরি হোক, তারা তা চান না।
সকালে যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে নজরুল ইসলাম খান তার দলের স্থায়ী কমিটির অন্য দুই সদস্যকে পাশে নিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, দেশে নতুন কোনো সাংবিধানিক বা রাজনৈতিক সংকট যেন সৃষ্টি না হয় সেদিকে সবার খেয়াল রাখতে হবে। যদি কেউ সেটা করতে চায় সেটাকে আমরা সবাই মিলে মোকাবেলা করব। মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বুধবার বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদ পরে গুলশানে সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপতির পদটা একটা সাংবিধানিক পদ বা একটা প্রতিষ্ঠান, সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদ। এই পদে হঠাৎ করে পদত্যাগের মাধ্যমেই হোক শূন্যতা সৃষ্টি হলে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হবে, রাষ্ট্রীয় সংকটের সৃষ্টি হবে।
বিএনপি যে কারণেই এমন অবস্থান নিক না কেন, দলটির নেতাদের এমন বক্তব্য আর ছাত্রদের অন্তত দুজন সমন্বয়ক ও উপদেষ্টা নাহিদের বিবৃতি অন্তত কিছু সময়ের জন্য হলেও বঙ্গভবনের বাইরের আন্দোলনকারীদের থমকে দিয়েছে। মো. সাহাবুদ্দিনের ওপর এই চাপের সূচনা হয়েছিল তার এক কথিত বক্তব্য এবং তার প্রতিক্রিয়ায় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের মন্তব্যের পর। গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর সেনাপ্রধান প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের খবর দেন। সেই রাতেই জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করার কথা বলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
সংবাদদাতা/ ইলিয়াস