আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ শুক্রবার, ২৫শে অক্টোবর, ২০২৪ ইং
  • ১০ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২১শে রবিউস-সানি, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, রাত ৮:২৪
আসিফ নজরুল কি তখন ঘুমিয়ে ছিলেন, প্রশ্নে ফরহাদ মজহার

আসিফ নজরুল কি তখন ঘুমিয়ে ছিলেন, প্রশ্নে ফরহাদ মজহার

প্রকাশিতঃ

অনলাইন ডেস্ক : ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা: আসন্ন চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের বক্তব্য ঘিরে চলছে আলোচনা-সমালোচনা ও বিশ্লেষণ। এবার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার। শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে আসিফ নজরুলের বক্তব্যকে খণ্ডন করে ৯টি পয়েন্ট যুক্ত করে।

নিচে পাঠকের জন্য তা হুবহু তুলে ধরা হলো:

১. আসিফ নজরুল দাবি করেছেন, “সাংবিধানিক পথে যাত্রা ভুল হলে সেটা এই আন্দোলনে থাকা সবার ভুল”। না, মোটেও না। সেটা সবার ভুল হতে পারে না। সেটা একান্তই আসিফ নজরুলের ভুল, কিংবা রাজনৈতিক দল ও সেনাপ্রধানসহ যারা গণঅভ্যুত্থানকে ফ্যাসিস্ট সংবিধানের অধীনে ঢুকিয়েছে তাদের সকলেরই ভুল।

২. বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরাও উপস্থিত ছিলেন উল্লেখ করে, আসিফ নজরুল দাবি করেছেন, ‘পুরো আলোচনা প্রক্রিয়ায় কেউ তো তখন বলেন নাই যে আমরা কেন শপথ নেব, সাংবিধানিক পথে যাব, চলেন বিপ্লবী সরকার গঠন করি?’।

যদি তাই হয় তাহলে আসিফ নজরুল সেই ক্ষেত্রে চুপ করে ছিলেন কেন? কেন বলেন নি এটা ‘বিপ্লবী সরকার’ গঠনের মামলা নয় একদমই, এটা হচ্ছে গণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শহিদদের রক্ত ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা (Popular বা Peoples’ Sovereignty) প্রতিষ্ঠা এবং বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রূপ দেওয়ার দায়। অর্থাৎ বাংলাদেশের জন্য নতুন গণতান্ত্রিক গঠনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে জনগণের গণতান্ত্রিক অভিপ্রায়কে ধারণ এবং তাকে গাঠনিক রূপ দেবার কর্তব্য। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জনগণের যে গাঠনিক ক্ষমতা (Constituent Power) ঐতিহাসিক ভাবে তৈরি ও হাজির হয়েছে তাকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিয়ে নতুন বাংলাদেশ গঠন করাই আমাদের কাজ।

আসিফ নজরুল কি তখন ঘুমিয়ে ছিলেন? তিনি সেনাপ্রধান ওয়াকারুজ্জামানকে বিভ্রান্ত ও ভুল পথে পরিচালিত করেছিলেন কেন? পুরা সেনাবাহিনী তো তখন জনগণের পক্ষে ছিল। এখন তিনি নিজের দায় অস্বীকার করে দোষ অন্যদের ঘাড়ে চাপাতে চান কেন? কেন তার অজ্ঞতা, মূর্খতা এবং দায়িত্বহীনতার দায় এখন সেনাপ্রধান নেবেন? গণ সার্বভৌমত্বের রাজনৈতিক ও আইনি যুক্তি তো সেনা প্রধানের জানার কথা না। সেটা আসিফ নজরুলেরই জানার কথা। কোন বিদেশি শক্তিরও চাপ ছিল না।

৩. তাহলে দেখা যাচ্ছে স্রেফ ক্ষমতার লোভে আসিফ নজরুল ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সংবিধানের অধীনে গণঅভ্যুত্থানকে বিসর্জন দিয়ে সবচেয়ে শক্তিধর ব্যক্তি হওয়ার জন্যই ভুল পথে বাংলাদেশকে নিয়ে গিয়েছেন। এই দায় একান্তই আসিফ নজরুলের। এই দায় আর কারো না।

এখন আসিফ নজরুল বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরাও উপস্থিত ছিলেন। তার মানে তিনি এখন তাদেরকেও তার দোষের দায়ভার চাপিয়ে দিচ্ছেন। দাবি করছেন, শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থার বা সংবিধানের অধীনে সেনা সমর্থিত উপদেষ্টা সরকার গঠনে তাদেরও সায় ছিল। তাই কি আসলে? মাহফুজ, নাহিদ, আসিফ? কিন্তু কেউ না বলুক, তিনি শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সংবিধান বাতিল করবার কথা বললেন না কেন? কেন তিনি গণ সার্বভৌমত্বের (Popular Sovereignty) প্রশ্ন তুললেন না? বাংলাদেশের বিদ্যমান সংবিধানও যে ধারণা মানে বা অন্তত স্বীকার করে? এখন আবার জনগণকে বিভ্রান্ত করারা জন্য আসিফ নজরুল ‘বিপ্লব বিপ্লব’ বকোয়াজি শুরু করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন বটে, কিন্তু আমরা তো বিভ্রান্তি এড়াবার জন্য একবারও বিপ্লবের কথা বলি নি? তার কাছ থেকেই আইন ও রাজনীতির সম্বন্ধ বিচার বা পর্যালোচনা সবাই আশা করেছিল। তিনি আমাদের আশা ভঙ্গ করেছেন।

৪. শুধু তাই নয়, “কেউ কেউ বলেন কেন শহীদ মিনারে শপথ নিলাম না, কেন বিপ্লবী সরকার হলো না, কেন সাংবিধানিক পথে গেলাম—এসব উল্লেখ করে আসিফ নজরুল কটাক্ষ করে বলেন, ‘এখন আপনি দেখবেন, কোনো কোনো মানুষ, তারা পৃথিবীর সবকিছু জানেন। তাঁদের একজন সম্পর্কে মনির হায়দার বললেন, আসিফ ভাই, মনে হয় তাঁকে “জাতির পিতা” না বানিয়ে দেওয়া পর্যন্ত থামবে না। অথবা তাঁকে “জাতির পিতা” বানিয়ে দিলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’ যে খানে গুরুতর রাজনৈতিক সংকটের সময় পরস্পরকে বোঝা এবং চিন্তার পার্থক্য কাটিয়ে তোলা প্রধান কাজ, তখন এই ধরনের অর্বাচীন কটাক্ষ এবং তামাশা আরও বিভেদ সৃষ্টি করে। রাজনৈতিক সংকট সমাধানের জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য এই ধরনের অহংকারী মন্তব্য ক্ষতিকর।

৫. ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা: আসন্ন চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় আইন উপদেষ্টা ভুলের দায় থেকে বাঁচবার জন্য এই ধরনের মিথ্যা সাফাই গেয়েছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলা একাডেমিতে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আদর্শ ও গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান ব্রেইন যৌথভাবে এই সভার আয়োজন করে। চুপ্পুর অপসারণ এবং হাসিনার ফ্যাসিস্ট সংবিধান বাতিলের দাবি জোরদার হয়ে ওঠায় এটা ছিল আইন ও তথাকথিত সংবিধানের অজুহাতে যারা ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থার পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে চায় এবং বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট শক্তি ও রাষ্ট্র টিকিয়ে রাখতে চায় নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তাদের পক্ষে সাফাই গাইবার অনুষ্ঠান।

৬. ‘বিপ্লব’ কথাটা সাধারণত বলশেভিক কিংবা চিনা বিপ্লবের ‘প্যারাডাইম’ হিসাবে ব্যবহার হয়। বিভ্রান্তি এড়াবার জন্য ‘বিপ্লব’ বর্গটি এড়ানো ভাল। তাছাড়া জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশের জনগণ বলশেভিক বা চিনা ধাঁচের ‘বিপ্লব’ করে নি। গণ অভ্যুত্থানের সেটা উদ্দেশ্যও ছিল না। শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সংবিধান ও ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থা বাতিল করে বাংলাদেশের জনগণ চেয়েছে নিজেদের রাজনৈতিক ভাবে নতুন ভাবে ‘গঠন’ (Constitute) করা – অর্থাৎ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণ। জনগণ নিজেরা নিজেদের জন্য একটি গণতান্ত্রিক গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করবে যা তাদের ‘অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি’ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হবে — এটাই জুলাই গণ অভ্যুত্থানের সারকথা। একেই বলা হয় গণ সার্বভৌমত্ব (Popular Sovereignty) বা জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা। এমনকি বাংলাদেশের বিদ্যমান সংবিধানের প্রস্তাবনা এবং ‘প্রজাতন্ত্র’ অধ্যায়ও গণসার্বভৌমত্ব স্বীকার করে। দেখুন, প্রস্তাবনা এবং অনুচ্ছেদ ৭(২)। স্বীকার করলেও মূল সংবিধান গণ সার্বভৌমত্বের বিরোধী অতএব স্ববিরোধী। একে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া ছাড়া গত্যন্তর নাই। এই সকল বিষয় বিবেচনার দাবি না করে আসিফ নজরুল কেন সেনা সমর্থিত উপদেষ্টা সরকার কায়েম করে শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রই কায়েম করলেন?

৭. সেনাপ্রধানের সঙ্গে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় রাজনৈতিক দল উপস্থিত ছিল। থাকতেই পারে। কিন্তু সেনাপ্রধানকে আইনি পরামর্শ আসিফ নজরুলই দিয়েছেন। তিনি তারই ফলশ্রুতিতে আইন উপদেষ্টাও হয়েছেন। সাংবিধানিক পথে যাত্রা ভুল হলে আমরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে সেই ভুল আবার এখন শোধরাতে পারি। সেই পথ এখনও খোলা রয়েছে। কিন্তু আসিফ নজরুলের ফাঁপা ও অন্যায় দাবি আমাদের পরস্পরকে বোঝার এবং বাংলাদেশের বর্তমান সংকট কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে না। বরং আরও জটিল হবে। তিনি বিভেদ ও বিপদ আরও বাড়িয়ে তুলছেন।

৮. আসিফ নজরুলের আলোচনায় সেনাবাহিনী ও সেনা প্রধানের প্রতি অকারণ কটাক্ষ রয়েছে। সেনাবাহিনী তাঁকে ডাকলেই মেরে ফেলবে এই বক্তব্য সেনাবাহিনী – বিশেষত সেনাপ্রধানের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করে না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট সমাধানের ক্ষেত্রে অবশ্যই নাগরিক হিসাবে সৈনিকদেরও ভূমিকা আছে এবং থাকবে। সাধারণ সৈনিকেরা গুলি করতে অস্বীকার করায় গণঅভ্যুত্থানের তীব্রতার মুখে শেখ হাসিনা দিল্লিতে পালাতে বাধ্য হয়েছে। জাতীয় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত শুধু রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্ত হতে পারে না। রাজনৈতিক দল জনগণের খণ্ড খণ্ড অংশের প্রতিনিধি। আমাদের অবশ্যই রাজনৈতিক দলের বাইরে নাগরিক হিসাবে শ্রমিক, কৃষক, মেহনতজীবী শ্রেণিসহ সমগ্র জনগণের রাজনৈতিক অভিপ্রায়ের কথা মনে রাখতে হবে।। জনগণের কাতারে সৈনিকেরাও আছেন।

৯. বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে আসিফ নজরুলের ফাঁপা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বলতে হয় এই দায় আসলে একান্তই তার একার। এতো আত্মত্যাগ ও রক্তপাতের পর আমরা পেলাম সেনা সমর্থিত উপদেষ্টা সরকার? কেন? এর ব্যাখ্যা আসিফ নজরুল কীভাবে দেবেন? এটাই যে হচ্ছে সেটা আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি। তিনি কর্ণপাত করেন নি।

আসিফ নজরুলের এই সাফাই আমরা তাই প্রত্যাখ্যান করতে বাধ্য হচ্ছি। গণঅভ্যুত্থানকে যারা শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সংবিধানের অধীনস্থ করেছেন এবং দাবি করছেন ‘সাংবিধানিক ভাবে যাওয়া দোষের ব্যাপার নয়’, তারা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছেন। তারা শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারের নিয়োজিত ফ্যাসিস্ট প্রেসিডেন্ট চুপ্পুর অধীনে উপদেষ্টাদের শপথ নিতে বাধ্য করেছে, সেই ভুল হতেই পারে। আমরা মেনে নিয়েছি। কারণ শোধরাবার পথ বন্ধ হয়ে যায়নি। কিন্তু নির্লজ্জ সাফাই গাওয়ার কোনো যুক্তি নাই। বলা উচিত ছিল, আমরা ভুল করেছি, কিন্তু শোধরাবার সুযোগ শেষ হয়ে যায় নি। আসুন সবাই মিলে শোধরাই এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠন করি। সংশোধনের জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ রাখুন। আসিফ নজরুল, প্লিজ, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ রাখাই এখনকার কাজ। নিজের দোষ ঢাকবার চেষ্টা করবেন না। ভুল আমরা যে কেউ করতেই পারি,কিন্তু যখন নিজের দায় অস্বীকার করেন, তখন সেটা মেনে নেওয়া যায় না।

 

সংবাদদাতা/ ইলিয়াস

Facebook
WhatsApp
Twitter

এ সম্পর্কিত আরো খবর

সম্পাদকঃ

সুভাষ সাহা

যুগ্ন সম্পাদকঃ

কাজী কবির হোসেন

ঠিকানাঃ

নারায়ণগঞ্জ অফিসঃ
পদ্মা সিটি প্লাজা, কক্ষ নংঃ ২২২, ৫৫/বি
এস, এম মালেহ রোড, টানবাজার
নারায়ণগঞ্জ-১৪০০

যোগাযোগ

ফোনঃ ৭৬৪০৬৯৯
মোবাইলঃ ০১৭১১৫৬১৩৯০
ইমেইলঃ bisherbashi.com.bd@gmail.com

USA OFFICE:

Wasington DC Bureau Chief:
Dastagir Jahangir,
3621 Columbia Pike Suit #104
Arlington USA, VA
22204
Phone: 7036770679
Email: tugrilcz@gmail.com

 

Website Design & Developed By
MD Fahim Haque
<Power Coder/>
www.mdfahim.com
Web Solution – Since 2009

error: Content is protected !!