অনলাইন ডেস্ক : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নতুন নতুন দাবি হাজির করছে। তাদের প্রতিনিধিরা সরকারেও আছেন। তাই তাদের এসব দাবির প্রতি সরকারেরও সমর্থন আছে কি না, এই প্রশ্ন তুলেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। ঢাকায় এক আলোচনা সভায় তাঁরা বলেছেন, কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে অর্জন বিসর্জনে পরিণত হতে পারে। আজ সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ৮০ দিন: গতিমুখ ও চ্যালেঞ্জসমূহ’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের নেতারা এই আলোচনায় অংশ নেন।
ঐকমত্যের বিষয়ে আমীর খসরু বলেন, কিছু বিষয়ে ঐকমত্য আছে। এর বাইরেও দাবি এসেছে, কোনো আলোচনা, কথাবার্তা ছাড়া। তাহলে ঐকমত্য কি সিলেক্টিভলি (বেছে বেছে) করা হচ্ছে—এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, সিলেক্টিভলি ঐকমত্য করলে হবে না। আমীর খসরু বলেন, সংস্কারের দাবি নতুন কিছু নয়। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। যে বিষয়গুলো নিয়ে ঐকমত্য হবে, সেগুলো বাস্তবায়ন করা যায়। যে বিষয়গুলোতে হবে না, সেগুলো নিয়ে জনগণের কাছে যেতে হবে। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিষয়ে ঐকমত্য হয়ে আছে। জনগণ ভোট দিতে চায়। এতে কোনো দ্বিমত নেই।
আলোচনার শুরুতে সূচনা বক্তব্যে সরকারের ৮০ দিন নিয়ে ১০টি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। সেখানে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের সদিচ্ছার ঘাটতি না থাকলেও তাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, শ্লথগতি, সরকার পরিচালনায় অভিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতার অভাব রয়েছে। গত ৮০ দিনে তাদের নানা বেফাঁস ও আবেগপ্রবণ কথাবার্তায় তাঁদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তির সুযোগ তৈরি হয়েছে। তাদের কিছু পদক্ষেপ ও ঘোষণাও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
সাইফুল হক বলেন, সরকারের গঠন করা ১০টি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে মতৈক্যের ভিত্তিতে করণীয় নির্ধারণ করার কথা। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন মহল থেকে নতুন নতুন ইস্যু সামনে নিয়ে আসায় গোটা সংস্কার এজেন্ডা এই মুহূর্তে অনেকটা পেছনে পড়ে গেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। সে কারণে তাঁদের তোলা ইস্যুর পেছনে সরকারের সম্মতি বা সমর্থন আছে কি না, এই প্রশ্ন জোরালোভাবে দেখা দিয়েছে।
সমাপনী বক্তব্যে সাইফুল হক বলেন, যেসব বিষয়ে ঐকমত্য আছে, সেগুলো অন্তর্বর্তী সরকার করবে। বাকি যেগুলোতে দ্বিমত থাকবে, সেগুলোর বিষয়ে নির্বাচিত সরকার এসে সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু এখন নতুন নতুন দাবিতে বিভাজন বাড়ছে। সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহের দানা বাঁধছে। কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে অর্জন বিসর্জনে পরিণত হতে পারে। সাইফুল হক বলেন, কোনো নির্বাহী সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়ায় গেলে তা হিতে বিপরীত হয়। ট্রাইব্যুনাল হয়েছে, সেখানে যার যা শাস্তি, তা নিশ্চিত হবে।
৮০ দিনে সরকারের তিনটি অর্জন দেখতে পাচ্ছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। সেগুলো হলো, উন্নয়ন সহযোগীরা বড় অর্থসহায়তা দেবেন বলেছেন, দুই মাসে রিজার্ভে হাত না দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ঋণ শোধ করেছেন এবং আরব আমিরাতে বন্দী ৫৭ জনকে মুক্ত করা। তিনি বলেন, সরকার গত ৮০ দিনে এই তিনটি ভালো কাজ করেছে। এর বাইরে সরকারের উল্লেখযোগ্য কোনো কাজ দেখা যায় না। জনগণের কল্যাণে তারা কোনো সংস্কার করেছে, তার প্রমাণ নেই।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার হওয়া উচিত নির্বাচন—এমন মন্তব্য করে মাহমুদুর রহমান বলেন, এ জন্য যা যা করা দরকার এবং যত সময় দরকার, তা সবার দেওয়া উচিত। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচির সমালোচনা করে মাহমুদুর রহমান মান্না বলনে, এটি ভালো বার্তা দেয়নি। তাঁরা (আন্দোলনকারীরা) সরকারে থেকেই সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছেন। তিনি বলেন, পথ একটাই ন্যূনতম ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। এই সরকার যেন বুঝে, এজেন্ডার বাইরে যেন তারা না যায়।
সংবাদদাতা/ ইলিয়াস