আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ১৮ই জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, দুপুর ১২:২৭
হতে চলেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, কে এই জেডি ভ্যান্স?

হতে চলেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, কে এই জেডি ভ্যান্স?

প্রকাশিতঃ

অনলাইন ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আবারও বিজয়ী হয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনে ট্রাম্পের ‘রানিং মেট’ হিসাবে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের জন্য ভোটের ময়দানে লড়েছেন জেডি ভ্যান্স। ট্রাম্প জয় পাওয়ায় এবার তিনি হবেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। জেডি ভ্যান্সের নির্ভরযোগ্য রক্ষণশীল ভোটিং রেকর্ড, যুবসম্প্রদায় এবং মধ্য-পশ্চিমা শিকড় ব্যালট বাক্সে রিপাবলিকানদের পক্ষে সমর্থন বাড়িয়ে তুলবে বলে আগেই অনেকে অনুমান করেছিলেন।

২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মনোনীত প্রার্থীদের দৌড়ে তিনি প্রথম দিকে থাকবেন বলেও আগাম অনুমান করা হচ্ছে। এককালে ট্রাম্পের ‘কড়া সমালোচক’ হিসাবে পরিচিত ভ্যান্স সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনের প্রচারাভিযানের সময় পরবর্তী রিপাবলিকান প্রার্থী হিসাবে নিজেকে ইতোমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন।

তবে কে এই জেডি ভ্যান্স। ডোনাল্ড ট্রাম্পের কড়া সমালোচক থেকে তার রানিং মেট হয়ে ওঠা এবং নির্বাচনে জয়ের মাধ্যমে জেডি ভ্যান্সের নতুন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হতে যাওয়ার এই সফর বেশ আকর্ষণীয়। এই প্রতিবেদনে জেডি ভ্যান্সের সেই সফরেরই উল্লেখযোগ্য কিছু অংশ তুলে ধরা হয়েছে।

ব্যক্তিগত জীবন

জেডি ভ্যান্সের জন্ম ওহাইয়োর মিডলটাউনে। তার নাম ছিল জেমস ডোনাল্ড বোম্যান। তার ছেলেবেলার অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর ছিল না। তার বাবা যে সময় বাড়ি ছাড়েন, তখন জেডি ভ্যান্সের বয়স খুবই কম আর মা লড়াই করছিলেন মাদকাসক্তির সঙ্গে। পরিস্থিতির কারণে প্রায়শই নানা-নানির বাড়িতে আশ্রয় নিতে হতো তাকে। পরে জেডি ভ্যান্সকে তার নানা-নানি দত্তক নেন। বর্তমানে তাদের পদবিটাই ব্যবহার করেন ভ্যান্স।

তার ছাত্রজীবন আর কর্মজীবন বেশ উল্লেখযোগ্য। মিডলটন হাইস্কুল থেকে পাস করার পর যুক্তরাষ্ট্রের মেরিন কর্পসে যোগ দেন। পরে ইরাকে মোতায়েন করা হয় তাকে। এরপর ওহাইয়ো স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং ইয়েল ল স্কুল থেকে পড়াশোনা করেন।

পরবর্তীতে ক্যালিফোর্নিয়ায় বিনিয়োগকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। জেডি ভ্যান্সের বেড়ে ওঠা এবং তার ব্যক্তিত্ব শ্রমজীবী ভোটারদের আকৃষ্ট করতে পারে ভেবেই তাকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প মনোনীত করেছিলেন বলে মনে করা হয়।

ভ্যান্সের ভারতীয় সংশ্লিষ্টতা

ভ্যান্সের একটা ভারতীয় সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তার স্ত্রী ঊষা চিলুকুরি ভারতীয় বংশোদ্ভূত। ২০১৩ সালে ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে পড়াকালীন তাদের পরিচয় হয়। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইয়েল ল স্কুলে পড়ার সময় ‘শ্বেতাঙ্গ-অধ্যুষিত যুক্তরাষ্ট্রে সামাজিক অবক্ষয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রথম দেখা হয় তাদের। ২০১৪ সালে বিয়ে করেন এই যুগল। তারপর অনেকটা পথ একসঙ্গে পেরিয়ে এসেছেন তারা। বর্তমানে এই দম্পতির তিন সন্তান রয়েছে– ইভান, বিবেক ও মিরাবেল।

লেখক হিসাবে খ্যাতি

‘হিলবিলি এলেজি’ নামক স্মৃতিকথার সাফল্য জেডি ভ্যান্সকে জনপ্রিয় করে তোলে। সর্বাধিক বিক্রি হওয়া বইয়ের তালিকায় রয়েছে তার লেখা ‘হিলিবিলি এলেজি’, যার অবলম্বনে ছায়াছবিও তৈরি হয়েছে। নেটফ্লিক্সে দেখা যেতে পারে এই সিনেমা। ভ্যান্সের লেখনীতে উঠে এসেছে অ্যাপেলেচিয়া অঞ্চলের কথা যেখানে তার বর্ধিত পরিবারের সদস্যরা থাকতেন। এই বিশাল পার্বত্য অঞ্চল যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলের বিরাণ এলাকা থেকে শিল্পন্নোত মধ্য-অঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বের প্রান্ত পর্যন্ত প্রসারিত। এই অংশে দেশের কয়েকটা দরিদ্রতম এলাকাও রয়েছে।

‘হিলবিলি এলেজি’-তে ভ্যান্সের বেড়ে ওঠা, তার চারপাশের পরিস্থিতি, বন্ধু ও পরিজনদের ভুল সিদ্ধান্ত আর অন্যান্য সমস্যা মোকাবেলা করার অভিজ্ঞতার কথা ফুটে উঠেছে। রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই তিনি বর্ণনা করেছেন কীভাবে তার পরিচিত মানুষেরা পরিশ্রম করার বদলে সরকারি অনুদানের ওপর নির্ভর করতেন।

এই বইয়ের সাফল্য তাকে লেখক হিসাবে বিখ্যাত করে তোলার পাশাপাশি, ভাষ্যকার হিসাবেও পরিচিতি দিয়েছিল। বিভিন্ন নামকরা অনুষ্ঠানে ভাষ্যকার হিসাবে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হতো যেখানে তিনি মূলত শ্বেতাঙ্গ শ্রমজীবী এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্যের বিষয়ে কথা বলতেন।

সেই সময়, তৎকালীন রিপাবলিকান পার্টির মনোনীত প্রার্থী ট্রাম্পের সমালোচনা করার সুযোগ খুব কমই হাতছাড়া করতেন তিনি। ২০১৬ সালের অক্টোবরে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমি মনে করি এই নির্বাচন সত্যিই নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, বিশেষত শ্বেতাঙ্গ শ্রমিক শ্রেণির ওপর। এটা (তৎকালীন নির্বাচন) মানুষকে অন্যদের দিকে আঙুল তোলার অজুহাত দিচ্ছে, তা সে মেক্সিকান অভিবাসী হোক, চীনা বাণিজ্য বা অভিজাত ডেমোক্র্যাট হোক বা অন্যরা।” প্রসঙ্গত, ট্রাম্পের প্রচারের অংশ হিসাবে তিনি নিজেও এই একই কাজ করে এসেছেন।

ভেঞ্চার ক্যাপিটাল থেকে রাজনীতি

২০১৭ সালে ওহাইয়োতে ফিরে আসেন এবং আর্থিক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করেন জেডি ভ্যান্স। রাজনীতিতে তার প্রবেশকে কেন্দ্র করে অনেকদিন থেকেই গুঞ্জন চলছিল। এই গুঞ্জন বাস্তবে পরিণত হয় ২০২২ সালে যখন ওহাইয়োর রিপাবলিকান সেনেটর রব পোর্টম্যান পুনর্নির্বাচনের জন্য প্রার্থী না হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

প্রথমদিকে ভ্যান্সের রাজনৈতিক প্রচার বেশ ধীর গতিতে চলছিল। তার প্রাক্তন বস পিটার থিয়েল তাকে এক কোটি ডলার দিয়ে সাহায্য করলে নির্বাচনি প্রচারে গতি আসে। ক্রমশ ভ্যান্সের আলোচনার ফোকাস অন্যত্র স্থানান্তরিত হতে থাকে। ‘হিলিবিলি এলেজি’তে যাদের ব্যর্থতার বিষয়ে লিখেছিলেন, তাদের নিয়ে কথা বলার জন্য ক্রমশ কম সময় ব্যয় করতে থাকেন তিনি। পরিবর্তে ডেমোক্র্যাট ও অভিজাতদের সম্পর্কে বলার জন্য বেশি সময় ব্যয় করতে দেখা যায় তাকে।

সেই সময় তার একাধিক বিতর্কিত মন্তব্যের ক্লিপিং আবার সামনে এসেছে। তবে তার রাজনৈতিক ময়দানে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি তার অতীতের সমালোচনা। কারণ ওহাইয়োতে রিপাবলিকানদের সমর্থকের সংখ্যা বেশ উল্লেখযোগ্য।

ওয়াশিংটন পোস্টের কাছে থাকা টেক্সট বার্তা অনুসারে, ২০২০ সালের শেষের দিক পর্যন্ত ট্রাম্পের বিষয়ে সংশয় ছিল ভ্যান্সের। চার বছর আগে তিনি লিখেছিলেন, প্রেসিডেন্ট “তার অর্থনৈতিক জনপ্রিয়তা (একটা বিচ্ছিন্ন চীন সম্পর্কিত নীতি ছাড়া) বাস্তবায়িত করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন” এবং ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদ হারাবেন।

তবে সিনেটের জন্য প্রচারের সময় তার আগের মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন ভ্যান্স। এইভাবে তিনি ট্রাম্পের এবং ক্রমশ রিপাবলিকানদের সমর্থন পেতে সক্ষম হন যা তাকে সিনেটে যেতে সাহায্য করে। একইসঙ্গে তিনি ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ রাজনীতির একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হয়ে ওঠেন – এবং প্রায় সম্পূর্ণভাবেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির সঙ্গে তাকে সহমত পোষণ করতেও দেখা যায়।

ফলে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর হিসেবে বিবেচিত এই পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার প্রতিযোগিতায় সামিল হয়েছেন জেডি ভ্যান্স। প্রসঙ্গত, তার স্ত্রী ঊষা ভ্যান্সও তার ক্যারিয়ারে সফল। তিনি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টসের কেরানি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সম্প্রতি মুঙ্গার, টোলস অ্যান্ড ওলসন নামক শীর্ষস্থানীয় ল ফার্মের অংশ ছিলেন। তবে ট্রাম্প জেডি ভ্যান্সকে তার রানিং মেট হিসাবে মনোনীত করার পর ওই প্রতিষ্ঠান থেকে পদত্যাগ করেন।

গাজা-ইউক্রেন সহ অন্যন্য ইস্যুতে তার অবস্থান

সিনেটে তিনি নির্ভরযোগ্য কনজারভেটিভ (রক্ষণশীল) ভোটার হিসাবে পরিচিত তিনি। জনপ্রিয় অর্থনৈতিক নীতিকে সমর্থন করতে দেখা যায়। ইউক্রেনকে সহায়তার ক্ষেত্রে সংশয় প্রকাশ করেছেন ভ্যান্স।ডেমোক্র্যাটিক নেতৃত্বাধীন চেম্বারে তার সংক্ষিপ্ত মেয়াদের কারণে, তার অনুমোদন করা বিল খুব কমই এগিয়ে গেছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নীতি পরিবর্তনের বদলে ‘বার্তা পাঠানোই’ এই বিলগুলো উপস্থাপনের পেছনে উদ্দেশ্য ছিল বলে মনে করা হয়।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে, গাজায় চলমান যুদ্ধের বিরুদ্ধে শিবির তৈরি হয়েছে বা প্রতিবাদ দেখানো হয়েছে এমন কলেজ এবং অনিবন্ধিত অভিবাসীদের নিয়োগকারী কলেজের জন্য ফেডারেল তহবিল থেকে যাওয়া টাকা আটকে দেওয়ার জন্য বিল উপস্থাপন করেছিলেন। গত মার্চ মাসে এমন এক আইনের অনুমোদন করেছিলেন তিনি যেখানে বলা হয়েছিল, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আইন অনুসরণ না করলে চীন সরকারকে মার্কিন মূলধন বাজার থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে।

গত জুলাইয়ে ন্যাশনাল কনজারভেটিজম কনফারেন্সে এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, “আমেরিকান গণতন্ত্রের জন্য আসল হুমকি হলো আমেরিকান ভোটাররা অভিবাসন কমানোর পক্ষে ভোট দিচ্ছে এবং আমাদের রাজনীতিবিদরা আমাদের আরও সংখ্যক অভিবাসীদের নিয়ে এসে আমাদের পুরস্কৃত করে চলেছেন।”

তিনি বলেছিলেন, ‘আমেরিকান ড্রিম’ ধারণার মূল কথাই হলো – “যে দেশকে আপনি নিজের বাড়ি বলে চেনেন, সেখানে আপনি নিজের এবং আপনার পরিবারের জন্য একটা ভালো জীবন গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন” যা “বামপন্থিরা অবরুদ্ধ” করে রেখেছে। ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সম্পর্কে তার মত– “এই বিষয়ে কোনও দিশা বা উপসংহার নেই যেদিকে আমরা যাচ্ছি বা ইতোমধ্যে অর্জন করেছি বলে দাবি করতে পারি।”

ওই একই সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, অভিবাসনের কারণে যুক্তরাজ্য “তেমন ভালো অবস্থায় নেই” এবং দাবি করেছিলেন, লেবার পার্টির নেতৃত্বে ওই দেশ “প্রথম সত্যিকারের ইসলামপন্থি দেশ” হয়ে উঠবে যাদের হাতে পারমাণবিক বোমাও আছে। তার মনোনয়নের পরপরই জুলাই মাসে মিলওয়াকিতে রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনে প্রবেশের সময় তিনি উচ্ছ্বসিত অভ্যর্থনা পেয়েছিলেন। তবে তারপর থেকে তার নাম খবরের শিরোনামে এসেছে মূলত বিতর্কের কারণেই।

 

সংবাদদাতা / ইলিয়াস

Facebook
WhatsApp
Twitter

এ সম্পর্কিত আরো খবর

সম্পাদকঃ

সুভাষ সাহা

যুগ্ন সম্পাদকঃ

কাজী কবির হোসেন

ঠিকানাঃ

নারায়ণগঞ্জ অফিসঃ
পদ্মা সিটি প্লাজা, কক্ষ নংঃ ২২২, ৫৫/বি
এস, এম মালেহ রোড, টানবাজার
নারায়ণগঞ্জ-১৪০০

যোগাযোগ

ফোনঃ ৭৬৪০৬৯৯
মোবাইলঃ ০১৭১১৫৬১৩৯০
ইমেইলঃ bisherbashi.com.bd@gmail.com

USA OFFICE:

Wasington DC Bureau Chief:
Dastagir Jahangir,
3621 Columbia Pike Suit #104
Arlington USA, VA
22204
Phone: 7036770679
Email: tugrilcz@gmail.com

 

Website Design & Developed By
MD Fahim Haque
<Power Coder/>
www.mdfahim.com
Web Solution – Since 2009

error: Content is protected !!