আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ শনিবার, ১৬ই নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ২রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ১৩ই জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, রাত ৮:৪১
শিক্ষাঙ্গনে এখনো শৃঙ্খলা ফেরেনি

শিক্ষাঙ্গনে এখনো শৃঙ্খলা ফেরেনি

প্রকাশিতঃ
অনলাইন ডেস্ক : আমাদের দেশে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় চার কোটি। এই খাতে এখনো শৃঙ্খলা ফেরেনি। নানা ইস্যুতে প্রায়ই আন্দোলনে নামছে শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায়ে শিক্ষাঙ্গন ছেড়ে তারা সড়কে নামছে একাধিকবার সচিবালয় ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি দিয়েছে। এমনকি শিক্ষা প্রশাসন এখনো ফ্যাসিস্টমুক্ত হয়নি। ফলে মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা ব্যবস্থাপনায়ও তেমন পরিবর্তন আসেনি। এভাবে শিক্ষাঙ্গনের সর্বত্র অস্থিরতা চলছে।

শিক্ষাসংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞজনরা বলছেন, আন্দোলনসহ নানা কারণে শিক্ষায় যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠার কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শিক্ষার গুণগত মানে জোর না দিলে ভবিষ্যতে ভুগতে হবে। তাঁদের প্রত্যাশা, সরকার দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়ে শিক্ষার সব ক্ষেত্রকে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসবে। সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের ৫৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ও প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা পদত্যাগ করেন।
তাঁরা এসব দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁদের মূল পদ শিক্ষকতায় ফিরে গেছেন। কিন্তু এর জের ধরে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের প্রধানদেরও পদত্যাগে বাধ্য করানো হয়। এই পদত্যাগে বাধ্য করানোয় অংশ নেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও। কিন্তু এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করার পর তাঁদের আর চাকরিতে থাকারই কোনো সুযোগ নেই। এমনকি এ ব্যাপারে শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ একাধিকবার বিবৃতি দিয়ে এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ঠেকাতে পারেননি।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদের বেশির ভাগই সরকার পূরণ করলেও স্কুল-কলেজে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দিয়ে চলছে, যা নিয়ে অন্য শিক্ষকদের মধ্যেও অসন্তোষ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর এইচএসসির স্থগিত পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। তারা সচিবালয় ঘেরাও করে তাদের দাবি আদায় করেই ছাড়ে। এরপর অনেকে একই পথে হাঁটতে থাকে। দাবি আদায়ে নেমে আসে সড়কে, এরপর সচিবালয় ঘেরাও করে। এইচএসসিতে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরাও অটোপাসের দাবিতে সচিবালয় ঘেরাও করে।সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাঁদের পাঁচ দফা দাবিতে সচিবালয় ঘেরাও করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা পৃথক বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে একাধিকবার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ করেছেন। শিক্ষার্থীদের ঘন ঘন রাস্তায় নেমে আসার ঘটনায় শিক্ষাঙ্গনের শৃঙ্খলা ব্যাহত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা এখন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতেও নানা চিন্তাভাবনা করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, এটা অরাজকতা। এতে ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে। তাদের পরস্পরের প্রতি আস্থা নেই। এতে শিক্ষকের প্রতি ছাত্রের সম্মানবোধও থাকবে না। এ ছাড়া করোনা, আন্দোলনসহ নানা কারণে পড়ালেখার যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠার ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অটোপ্রমোশন, সংক্ষিপ্ত সিলেবাস—এগুলো সমাধান নয়, সমস্যা। আমরা যদি শিক্ষার গুণগত মানে জোর না দিতে পারি, তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের ভুগতে হবে।’

জানা যায়, শিক্ষা প্রশাসনে ১৫ বছর ধরে জেঁকে বসেছেন আওয়ামী সরকারপন্থী কর্মকর্তারা, যাঁরা ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী হিসেবে পরিচিত। সেসব জায়গায় এখনো বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়নি। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালকের চুক্তি বাতিল করলেও এখন যিনি দায়িত্বে রয়েছেন, তিনি আওয়ামী সুবিধাভোগী একজন কর্মকর্তা। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে বসানো হয়েছে ঢাকা অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে, যিনি বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের অন্যতম নেতা। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) এখনো আওয়ামী লীগপন্থী কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে। আওয়ামী লীগপন্থী এক শিক্ষক নেতার ভাই ইউজিসিতে পরিচালক হিসেবে আছেন বহাল তবিয়তে। জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির (নায়েম) পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ), জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সচিবসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে দাপটের সঙ্গে আছেন আওয়ামী লীগপন্থীরা। এভাবে প্রশাসনের বেশির ভাগই এখনো ফ্যাসিস্টদের দখলে। তাঁরা নিজেরাও শিক্ষার শৃঙ্খলা চান না।

শিক্ষা ও শিশু রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক রাখাল রাহা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শিক্ষায় অনেক দিন ধরেই টালমাটাল পরিস্থিতি। তবে এখন সেই ভয়ের পরিবেশ নেই। তাই সবাই মনে করছে, যার যার অধিকার পাওয়ার এখনই সময়। শুধু শিক্ষা নয়, সব ক্ষেত্রেই একই অবস্থা। এটা স্তিমিত করতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, প্রশাসনে স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। শিক্ষায় আমাদের বড় ধরনের পরিকল্পনাও দরকার। আমরা প্রত্যাশা করব, সরকার তাদের সিদ্ধান্তে বা কমান্ডের মাধ্যমে দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়ে সব ক্ষেত্রকেই একটা শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসবে।’

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শিক্ষা খাতে ধারাবাহিকতা বজায় রাখাটা জরুরি। নয় তো শিক্ষার্থীরা নানা ঝামেলায় পড়বে। অন্তর্বর্তী সরকার এসেই নতুন কারিকুলাম থেকে পুরনো কারিকুলামে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেয়, যাকে সাধুবাদ জানায় সবাই। তবে স্কুল-কলেজগুলোতে ধারাবাহিকতা রক্ষা না করে হুট করেই চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে একগাদা সিলেবাস। এমনকি আগামী সপ্তাহ থেকে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। এতে প্রচণ্ড চাপে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। এমনকি সরাসরি আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী এখনো ট্রমার মধ্যে রয়েছেন। অথচ তাঁদের শিক্ষাবর্ষ কমিয়ে আনা হচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় টিউশিন ফি পাওয়ার লক্ষ্যে দ্রুত সেমিস্টার শেষ করার উদ্যোগ নিয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ট্রমা আরো বাড়ছে।

স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের অসহায়ত্বের সুযোগে দৌরাত্ম্য বেড়েছে প্রাইভেট-কোচিংয়ের। শিক্ষকরা সব নীতিমালা ভেঙে প্রাইভেট-কোচিংয়ে মেতেছেন। শিক্ষার্থীরাও বাধ্য হয়ে শিক্ষকদের কাছে দৌড়াচ্ছে। স্কুল, কলেজ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের বিদ্যমান টিউশন ফি নতুন করে বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও টিউশন ফিতে ছাড় নেই। একদিকে টিউশন ফির চাপ, অন্যদিকে প্রাইভেট-কোচিংয়ের চাপে চিড়েচ্যাপটা অভিভাবকরা। সূত্র জানায়, জানুয়ারিতে নতুন বই পাওয়া স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি উৎসব। কিন্তু এবার বছরের প্রথম দিনে বা প্রথম মাসেও সব বই পাওয়ার সুযোগ নেই। এনসিটিবি এখনো পাঠ্য বই ছাপার কাজ পুরোপুরি শুরু করতে পারেনি।

জানা যায়, শিক্ষকদের বেতন-ভাতা নিয়েও চরম অসন্তোষ রয়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা দশম গ্রেডে বেতন দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করছেন। নন-এমপিও শিক্ষকরা এমপিওভুক্তির দাবিতে একাধিকবার আন্দোলনেও নেমেছেন। বিশেষ করে নন-এমপিও অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি শিক্ষক, বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, সরকারি প্রাথমিক স্কুলের দপ্তরিসহ একাধিক গ্রুপের শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে বেশ ক্ষোভ রয়েছে।

সূত্র জানায়, নতুন পরিস্থিতিতে শিক্ষা খাতের ঘুষ-দুর্নীতিও সেভাবে কমেনি। আগে সরাসরিই ঘুষ নিতেন কর্মকর্তারা। এখন ঘুরপথে নেন। এখনো টাকা ছাড়া শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। আগের মতো ধাপে ধাপে টাকা দিয়ে এমপিও পেতে হয়। স্কুল-কলেজে প্রতিষ্ঠানপ্রধান ও কর্মচারী নিয়োগে এখনো চলে বড় লেনদেন। সম্প্রতি কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) একজন সহকারী পরিদর্শক প্রকাশ্যে ঘুষ চেয়ে মারধরের শিকার হন, যা শিক্ষাঙ্গনের দুর্নীতি নিয়ে নতুন করে ভাবার সুযোগ করে দিয়েছে।

ডিআইএ পরিচালক অধ্যাপক কাজী মো. আবু কাইয়ুম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত টিম ঘটনাস্থলেও গেছে। অন্য যার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তার বিরুদ্ধেই তদন্ত করছি। তবে আমাদের টিমের প্রায় বেশির ভাগ সদস্যই নতুন। তবে আরো কিছুদিন যাওয়ার পর আগের সঙ্গে বর্তমানের পার্থক্যটা বোঝা যাবে।’

 

সংবাদদাতা / ইলিয়াস

Facebook
WhatsApp
Twitter

এ সম্পর্কিত আরো খবর

সম্পাদকঃ

সুভাষ সাহা

যুগ্ন সম্পাদকঃ

কাজী কবির হোসেন

ঠিকানাঃ

নারায়ণগঞ্জ অফিসঃ
পদ্মা সিটি প্লাজা, কক্ষ নংঃ ২২২, ৫৫/বি
এস, এম মালেহ রোড, টানবাজার
নারায়ণগঞ্জ-১৪০০

যোগাযোগ

ফোনঃ ৭৬৪০৬৯৯
মোবাইলঃ ০১৭১১৫৬১৩৯০
ইমেইলঃ bisherbashi.com.bd@gmail.com

USA OFFICE:

Wasington DC Bureau Chief:
Dastagir Jahangir,
3621 Columbia Pike Suit #104
Arlington USA, VA
22204
Phone: 7036770679
Email: tugrilcz@gmail.com

 

Website Design & Developed By
MD Fahim Haque
<Power Coder/>
www.mdfahim.com
Web Solution – Since 2009

error: Content is protected !!