দেশে ১৬ থেকে ৩০ মাস বয়সী শিশুদের মাঝে অটিজম বিস্তারের হার প্রতি হাজারে ১ দশমিক ৭ জন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)-এর ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরো ডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজম (ইপনা) কর্তৃক দেশব্যাপী শিশুর ওপর পরিচালিত জরিপে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
২০১৭ সালের মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশের ৮টি বিভাগের ৩০টি জেলার ৮৫টি এলাকা চিহ্নিত করে ৩৮ হাজার ৪৪০ জন শিশুর ওপর এ জরিপ পরিচালনা করা হয়।
জরিপে দেখা গেছে, গ্রামের চেয়ে শহরে অটিজম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন শিশুর সংখ্যা বেশি। গ্রামীণ এলাকায় প্রতি হাজারে ১ দশমিক ৪ জন, শহর এলাকায় প্রতি হাজারে ২ দশমিক ৫ জন আক্রান্ত পাওয়া যায়। জরিপে প্রাপ্ত ফলাফলে আক্রান্ত মেয়ে শিশুর চাইতে ছেলে শিশুর সংখ্যা প্রায় আড়াই গুণ বেশি দেখা যায়।
বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এ’ ব্লক অডিটোরিয়ামে ইপনা’র আয়োজনে ডিসেমিনেশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে জরিপে প্রাপ্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই ডিসেমিনেশন প্রোগ্রামে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, আইসিডিডিআর, বি’র উপ-নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম এবং সূচনা ফাউন্ডেশনের ভাইস-চেয়ারপার্সন ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত।
অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউ’র উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ শিকদার, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে জরিপে প্রাপ্ত ফলাফল উপস্থাপন করেন ইপনা’র পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহীন আখতার। জরিপ নিয়ে প্রারম্ভিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইপনার ডা. জান্নাতআরা শেফা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইপনাকে এ ধরনের বড় জরিপ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার দেশের প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি আন্তরিক। বিশেষ করে অটিজম ও অন্যান্য স্নায়ু বিকাশজনিত সমস্যায় আক্রান্ত শিশু ও তাদের পরিবারের সুরক্ষায় সরকার দু’টি আইন করেছে।
এই জরিপের মাধ্যমে প্রাপ্ত হারকে ভিত্তি করে ভবিষ্যতে অটিজম আক্রান্ত শিশু ও তাদের পরিবারের সেবায় সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি হাতে নেয়া সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া ইপনা প্রতিষ্ঠায় প্রধানন্ত্রী ও তার সুযোগ্য কন্যা, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন অটিজম বিশেষজ্ঞ, স্কুল সাইকোলজিস্ট, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক অ্যাডভাইসরি প্যানেলের বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশের অটিজম বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল’র প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, অটিজম আক্রান্ত শিশু ও তাদের পরিবারের সেবায় ইপনা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সব সময় পাশে থাকবে। সব ধরনের সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখতে হবে।
উল্লেখ্য, ইপনা তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অটিজম ও অন্যান্য স্নায়ু বিকাশ জনিত সমস্যা সংক্রান্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় সেবা ও পরামর্শ দেবার পাশাপাশি উচ্চতর গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছে।