গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু : অবশেষে সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নবীনগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ‘চেয়ারম্যান’ পদে ফারুক আহমেদ (আনারস), ‘ভাইস চেয়ারম্যান’ (পুরুষ) পদে মো. মেহেদী হাসান (চশমা) ও ‘ভাইস চেয়ারম্যান’ (নারী) পদে মাহমুদা আক্তার শিউলী (ফুটবল) বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। গতকাল গভীর রাতে ভোট গণনা শেষে নবীনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা তানভীর ফরহাদ শামীম নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন।
পরে সাংবাদিকদের কাছে দেয়া দুই সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ইউএনও তানভীর ফরহাদ শামীম ও নির্বাচন কর্মকর্তা আজগর আলীর যৌথ স্বাক্ষরযুক্ত নির্বাচনী ফলাফল শিটে দেখা যায়, চেয়ারম্যান পদে আনারস প্রতীকে বিজয়ী ফারুক আহমেদ পেয়েছেন ৫৮ হাজার ৩৪৭ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঘোড়া প্রতীকে অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম ফেরদৌস পেয়েছেন ২৫ হাজার ৬৮১ ভোট। অপরদিকে ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে চশমা প্রতীকে বিজয়ী মো. মেহেদী হাসান পেয়েছেন ৩২ হাজার ৪০৪ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মাইক প্রতীকে মো. খাইরুল আমীন পেয়েছেন ২৩ হাজার ৫৪৪ ভোট।
এদিকে ভাইস চেয়ারম্যান (নারী) পদে ফুটবল প্রতীকে বিজয়ী মাহমুদা আক্তার শিউলী পেয়েছেন ৫৮ হাজার ৫৪৯ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কলস প্রতীকে সাবিনা ইয়াছমিন পুতুল পেয়েছেন ৩১ হাজার ৩৩৯ ভোট। নির্বাচনে তিনজন প্রার্থী বিজয়ী হলেও, এ নির্বাচনে মোট ২০ জন প্রার্থী অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৮ জন, ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে ৯ জন ও ভাইস চেয়ারম্যান (নারী) পদে ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। উল্লেখ্য, নবীনগর উপজেলায় ১টি পৌরসভা ও ২১টি ইউনিয়নের মোট ৪ লাখ ৩৮ হাজার ১৬৯ জন ভোটার রয়েছে। যারমধ্যে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ২৮ হাজার ৬৯৮ এবং নারী ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৯ হাজার ৪৬৯ জন। তবে গতকালের নির্বাচনে কাস্টিং ভোট পড়েছে ২৭%।মোট ১৫৬টি কেন্দ্রে সকাল ৮ থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ্লেষণ : এদিকে এবার এই প্রথম নির্দলীয়ভাবে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও, বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থী ফারুক আহমেদ বিএনপি’র অনুসারী, ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) মেহেদী হাসান ইসলামী ঐক্যজোট ও হেফাজতে ইসলামের অনুসারী এবং ভাইস চেয়ারম্যান (নারী) মাহমুদা আক্তার শিউলী আওয়ামীলীগের অনুসারী বলে এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে। কিন্তু বিএনপির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় নির্বাচনের প্রাক্কালে ফারুক আহমেদকে স্থানীয় বিএনপির উপদেষ্টার পদ থেকে কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা রিজভী আহমেদের স্বাক্ষরযুক্ত এক চিঠিতে ‘বহিস্কার’ করা হয়। অন্যদিকে এ নির্বাচনে এবার সবমহলেই সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিলো, এবারই প্রথম নবীনগরে অনুষ্ঠিত কোন নির্বাচনের শুরু থেকে একদম ফলাফল ঘোষণার ঠিক আগ মুহুর্ত পর্যন্ত নানা নাটকীয়তা নিয়ে।
নির্বাচনটি কতটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে, এ নিয়েও নানা আলোচনা ও অজানা শংকা বিরাজ করেছিলো! এছাড়া সবকিছুকে ছাপিয়ে কিছু আদর্শচ্যুত আলোচিত লোভী নেতার রহস্যজনক আচরণ, প্রকাশ্য নির্বাচনী জনসভায় কারও কারও বেফাঁস কথাবার্তা ও টিম মেকারের ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ চরম ক্ষতিকর সিদ্ধান্তের কল্যাণে বিভিন্ন রঙের দারুণ দারুণ সব উত্তেজনাপূর্ণ ‘খেলা’ উপভোগ করেন পৌরসভাসহ নবীনগরের ২১টি ইউনিয়নের আট লক্ষাধিক জনসাধারণ। সব মিলিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, বহুল আলোচিত এবারের নবীনগর উপজেলা নির্বাচনে একটি দলের জন্য চরম ক্ষতিকর কিছু আদর্শচ্যুত নেতার “প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত” নানা রঙের অদূরদর্শী বাজে দৃষ্টান্তের অশোভন খেলাগুলো শুধু তৃণমূলের নেতাকর্মী সমর্থকেরাই নয়, হৃদয়ের গভীরে অনেকদিন মনে রাখবেন এখানকার রাজনৈতিক সচেতন জনগণও?
তবে নির্বাচনটি নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে কিছু রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কল্যাণে নানা রঙের অশোভন খেলা হলেও, শেষ পর্যন্ত কোন ধরণের সহিংসতা ছাড়াই চমৎকার পরিবেশে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনটি সম্পন্ন হওয়ায়, নবীনগরের মাননীয় সংসদ সদস্য ফয়জুর রহমান বাদল, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনসহ নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে আমরা আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তবে নির্বাচন চলাকালে ১৫/১৬ টি ভোটকেন্দ্র সরজমিনে পরিদর্শন করে নির্বাচনে ভোটারদের যে অনুপস্থিতি দেখেছি, সেটি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমার কাছে মোটেই কাংখিত মনে হয়নি।
নিউজ২৪/ সংবাদদাতা/ ইলিয়াস