যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক মাস বাদেই ভোট। তার আগেই মুখ পুড়ল সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলেন সাবেক রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্ট। যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম। ব্যবসায়ীক নথিপত্রে তথ্য গোপনের অভিযোগে করা মামলায় আনা ৩৪টি অভিযোগের সবগুলোতে দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত।
বৃহস্পতিবার (৩০ মে) নিউ ইয়র্কের আদালতে দুই দিনের আলোচনার পর ১২ জুরি ট্রাম্পকে আলোচিত এ মামলায় ৩৪টি অভিযোগেই দোষী সাব্যস্ত করেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আগামী ১১ জুলাই এ মামলায় ট্রাম্পের সাজা ঘোষণা করা হবে। সাবেক এ প্রেসিডেন্টের সর্বোচ্চ চার বছর কারাদণ্ড হতে পারে। তবে আইনজ্ঞরা বলছেন, তাকে জরিমানা করার সম্ভাবনাই বেশি।
৭৭ বছর বয়সী ট্রাম্পের বিরুদ্ধে করা এই মামলায় অভিযোগে বলা হয়, ২০০৬ সালে স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে তার যৌন সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। পরে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে এ বিষয়ে মুখ না খুলতে ট্রাম্পের পক্ষ থেকে স্টর্মিকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার ঘুষ দেওয়া হয়। তার হাতে এ অর্থ তুলে দিয়েছিলেন ট্রাম্পের আইনজীবী মাইকেল কোহেন। তবে ব্যবসায়ীক নথিপত্রে এ লেনদেনের তথ্য গোপন করা হয়েছিল। যদিও এসব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে এসেছেন ট্রাম্প।স্টর্মি ড্যানিয়েলস। ছবি: সংগৃহীতস্টর্মি ড্যানিয়েলস। ছবি: সংগৃহীত
নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে দীর্ঘ পাঁচ সপ্তাহ ধরে শুনানির পর বৃহস্পতিবার (৩০ মে) এ রায় ঘোষণা করেন ১২ জন বিচারকের একটি বেঞ্চ। এর আগে তারা রায় নিয়ে ১১ ঘণ্টা আলাপ-আলোচনা করেছেন। এমন সময় এ রায় ঘোষণা করা হলো, যখন কয়েক মাস পরেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনে অংশ নিয়ে আবার প্রেসিডেন্ট পদে আসতে চাচ্ছেন ট্রাম্প। তবে রায়ের কারণে তার নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় কোনো বাধা আসবে না।
এদিকে রায় ঘোষণার পর আদালত কক্ষ থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, এটা তার জন্য মর্যাদাহানিকর। তিনি ন্যায়বিচার পাননি। আদালতের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিনি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করে যাবেন।
ট্রাম্পের এই বক্তব্য থেকে বোঝাই যায়, তিনি এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। তবে এটাই কিন্তু ট্রাম্পের বিরুদ্ধে একমাত্র মামলা নয়। ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল বদলে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বর্তমানে একটি মামলা চলছে। এ ছাড়া প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেয়াদ শেষের পর হোয়াইট হাউস থেকে সরকারি গোপন নথিপত্র সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে করা আরও একটি মামলা ঘাড়ে নিয়ে ঘুরছেন তিনি।
উল্লেখ্য, নভেম্বরে হতে যাওয়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের জন্য এ রায় বড় ধরনের ধাক্কা। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে হটিয়ে আবার হোয়াইট হাউজে যেতে নির্বাচনী লড়াইয়ের আগে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প ঐতিহাসিক এ মামলায় হেরে গেলেন। তৃতীয় দফায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়ছেন ব্যবসায়ী থেকে প্রেসিডেন্ট হওয়া ৭৭ বছর বয়সী ট্রাম্প, যিনি নানা ঘটনার জন্ম দিয়ে দীর্ঘদিন থেকে বিশ্বজুড়ে আলোচনায় এসেছেন।