অনলাইন ডেস্ক : এবার রাজধানী ঢাকায় পরকীয়া প্রেমিককে/ হত্যা করে প্রেমিকা পালিয়েছে কানাডায়। খুনী লাশের পাশে চিরকুটে লিখে যান ‘আমার জীবনের শান্তি নষ্ট করে দিছে ব্লাকমেইলার রেপিস্ট। নিজের ইচ্ছায় আমার হাতে ধরা দিছে। নিজের হাতে এই রেপিস্ট ব্লাকমেইলারকে মেরে শান্তি নিলাম।’ পারভীন কেন খুন করেন আরিফকে? পরকীয়ার জেরে এই খুন। বিয়ের নাটক সাজিয়ে পারভীন আক্তারকে ব্লেক মেইল করে ভোগ করে সুখের সংসার তছনছ করেছিল আরিফ। সর্বশেষ ভিডিও ফাঁসের হুমকি দিয়ে পারভীনকে কানাডা থেকে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য করেছিল জাপানপ্রবাসী আরিফুল।
এরই জেরে পারভীন কানাডা থেকে এলেন, খুন করলেন, উড়াল দিলেন।। রাজধানীর বসুন্ধরার ভাড়া বাসায় ১৭ মে একসঙ্গে ঢোকেন আরিফুল ও পারভীন সিসিটিভি ফুটেজ দৃশ্য দেখে বিষয় টি পরিষ্কার এটি সুপরিকল্পিত প্রতিশোধ স্বামীর সঙ্গে সুখের সংসার করতে নরসিংদীর মনোহরদীর কাহেতরগাঁও এলাকার পারভীন আক্তার মাস দুয়েক আগে পাড়ি জমান কানাডায়। তাঁর স্বামী নাজমুল হাসান প্রায় সাত বছর কানাডায় বাস করছেন। নাজমুলের গ্রামের বাড়িও নরসিংদী। তবে স্বজন কাউকে না জানিয়ে আকস্মিক ১৬ মে ঢাকায় আসেন পারভীন। ২৪ ঘণ্টার মতো রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকার একটি বাসায় অবস্থান করে পরদিন ফের কানাডার মন্ট্রিলে চলে যান তিনি। তদন্তে বেরিয়ে আসে নিহত ওই যুবকের নাম আরিফুল ইসলাম।
অনলাইনে যোগাযোগের মাধ্যমে বসুন্ধরার ওই ফ্ল্যাট এক সপ্তাহের জন্য ১৩ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়েছিলেন আরিফুল। তিনি ১৭ মে জাপান থেকে ঢাকায় ফিরে ওই ফ্ল্যাটে ওঠেন। বছরখানেক ধরে জাপান অবস্থান করছিলেন নরসিংদীরই যুবক আরিফুল। নানামুখী তদন্তে এ হত্যার আদ্যোপান্ত উঠে এসেছে। পারভীনের বাবা-মা আত্মীয়রা কেউ জানতেন না পারভীনের আসার খবর। মেয়ে ঢাকায় এসে আবার এক দিনের মধ্যে কানাডায় চলে গেছে, শুনে প্রথমে চমকে ওঠেন নুরুল ইসলাম। গতকাল রাতে ফোনের ওপাশ থেকে পারভীন বাবাকে গোপন করতে পারেননি আসল ঘটনা।
পারভীন বলেন, ‘বিশ্বাসঘাতককে মারতে ঢাকায় গিয়েছি। ও নরপিশাচ। এমন মৃত্যু ওর প্রাপ্য ছিল। ওকে মেরে আমার কোনো অনুশোচনা নেই। কোনো দুঃখ নেই। এ জীবনে আর দেশে ফিরতে চাই না।’ তদন্ত সূত্র জানায়, স্বামী কানাডায় থাকার সময় পারভীনের সঙ্গে ‘গভীর’ সম্পর্ক গড়ে তোলেন আরিফুল। টোপ দিয়ে বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে নিয়ে যেতেন। অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি তুলে রেখেছিলেন চতুর আরিফুল। ওই ছবি ব্যবহার করে দীর্ঘদিন পারভীনের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক বজায় রাখেন। ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে মাঝে মাঝে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করতেন আরিফুল। এক পর্যায়ে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর হলফনামার মাধ্যমে পারভীনকে বিয়ে করেন, তবে সংসার করেননি কখনও। বিয়ের বিষয়টিও গোপন রাখা হয়েছিল।
বছরখানেক আগে আরিফুল চলে যান জাপান। সেখানে এক জাপানি তরুণী নাচুকিকে বিয়ে করেন। জাপানি ওই তরুণী বর্তমানে অন্তঃসত্ত্বা। সম্প্রতি জাপান থেকে দফায় দফায় পারভীনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন আরিফুল। বাংলাদেশে ফেরত আসার জন্য চাপ দিতে থাকেন। দেশে ফেরত না এলে ভিডিও পারভীনের স্বামী ও স্বজনের কাছে পাঠানোর হুমকি দেন। কথা না শোনায় পারভীনের স্বামীর কাছে কিছু ভিডিও পাঠিয়ে দেন আরিফুল। এসব দেখে পারভীনকে দেশে ফেরত এসে আরিফুলের সঙ্গে সব মিটমাট করতে চাপ দেন তাঁর স্বামী নাজমুল। বিষয়টি নিয়ে এক ধরনের সমঝোতায় যেতে ঢাকায় আসেন তিনি।
আরিফুলও জাপান থেকে আসেন ঢাকায়। একই বাসায় ওঠার পর পুরোনো ভিডিও ডিলিট করতে আরিফুলকে বারবার অনুরোধ করেন পারভীন। এবং জাপানে নিজের সংসারে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন। তবে আরিফুল নাছোড়। জোর করে ওই ফ্ল্যাটে পারভীনের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়ান। এ পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ায় প্রথমে আত্মহত্যার কথাও ভাবতে থাকেন পারভীন। পরে নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আরিফুলকে ঘুমের মধ্যে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেন। কানাডা থেকে ফেরার সময় পারভীনের কাছে টিকিটের খরচ বাদে আড়াই লাখ টাকার মতো ছিল।
পুলিশের জব্দ করা ভবনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, ১৭ মে বিকেল ৪টা ৯ মিনিটে আরিফুল ও পারভীন অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকেছেন। দু’জনের মুখেই ছিল মাস্ক। আরিফুলের হাতে একটি লাগেজ। ১৮ মে ভোর ৬টা ৩১ মিনিটে পারভীন অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বের হয়ে যান। পারভীন স্বীকার করেন, ১৭ মে রাত ২টার দিকে আরিফুলকে হত্যা করা হয়। এর পর নিজে খুনের দায় স্বীকার করে ওই ফ্ল্যাটে চিরকুট লিখে রাখেন। আরিফুল হত্যাকাণ্ডে তাঁর বোন সাফরিজা আক্তার রেলি বাদী হয়ে গতকাল রোববার ভাটারা থানায় মামলা করেছেন। এতে পারভীন আক্তার ও তাঁর কানাডা প্রবাসী স্বামী নাজমুল হাসান বাবুকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া আসামি করা হয়েছে মাটি প্রপার্টিজের মালিক ও কর্মচারীকেও।
নিউজ২৪/ সংবাদদাতা/ ইলিয়াস