অনলাইন ডেস্ক : ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে খুনের উদ্দেশে অপহরণের মামলার অন্যতম আসামি সেলেস্তি রহমান ওরফে শিলাস্তি রহমান (২২) আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। সোমবার (৩ জুন) ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি। ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। রাত ৮ টা ৪০ মিনিটে সেলেস্তির জবানবন্দী গ্রহণ শেষ হয়। এরপর স্বীকারোক্তি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত।
আদালত ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জবানবন্দিতে শিলাস্তি বিচারককে জানান, ভারতের থানায় আখতারুজ্জামান শাহিনের স্ত্রী হিসাবে ফরম পুরণ করা হয়। পরে সেই ফরম দেখিয়ে সঞ্জীভা গার্ডেনসের ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেয়া হয়। সঞ্জীভা গার্ডেনসের ওই ফ্ল্যাটটির মালিক সন্দীপ রায়। তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আবগারি দপ্তরে কাজ করেন। তার কাছ থেকে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী শাহীন।
মামলার অভিযোগে ডরিন উল্লেখ করেছেন, মানিক মিয়া এভিনিউয়ের বাসায় আমরা সপরিবারে বসবাস করি। ৯ মে রাত ৮টার দিকে আমার বাবা আনোয়ারুল আজিম আনার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ যাওয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেন। ১১ মে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে বাবার সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বললে বাবার কথাবার্তায় কিছুটা অসংলগ্ন মনে হয়। এরপর বাবার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও বন্ধ পাই।
১৩ মে বাবার ভারতীয় নম্বর থেকে উজির মামার হোয়াটসঅ্যাপে একটি ক্ষুদে বার্তা আসে। এতে লেখা ছিল, ‘আমি হঠাৎ করে দিল্লি যাচ্ছি, আমার সঙ্গে ভিআইপি রয়েছে। আমি অমিত সাহার কাজে নিউটাউন যাচ্ছি। আমাকে ফোন দেওয়ার দরকার নাই। আমি পরে ফোন দেব।’ এছাড়া আরও কয়েকটি বার্তা আসে। ক্ষুদে বার্তাগুলো আমার বাবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অপহরণকারীরা করে থাকতে পারে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বিভিন্ন জায়গায় বাবার খোঁজ করতে থাকি। কোনো সন্ধান না পেয়ে তার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস বাদী হয়ে ভারতীয় বরাহনগর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপরও আমরা খোঁজাখুজি অব্যাহত রাখি। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজসে বাবাকে অপহরণ করেছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, শিলাস্তি রহমানসহ তিনজনের গত ২৪ মে আটদিন এবং ৩১ মে পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। অপর দুই আসামি হলেন—শিমুল ভূঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্যাহ সাঈদ (৫৬) এবং তানভীর ভূঁইয়া (৩০)। এর আগে, গত ২২ মে শেরেবাংলা নগর থানায় নিহত সংসদ সদস্যের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বাদী হয়ে অপহরণ মামলাটি দায়ের করেন। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ৪ জুলাই দিন ধার্য করেছেন আদালত।
প্রসঙ্গত, ১২ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যান এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার। সেদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে কলকাতায় তার পারিবারিক বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের সঙ্গে দেখা করতে যান। পরের দিন, ১৩ মে চিকিৎসক দেখাতে হবে জানিয়ে দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে গোপালের বাড়ি থেকে বের হন আনার। কিন্তু আর ফেরেননি। এরপর থেকে এমপি আনারের খোঁজ পাওয়া যায়নি। ২০ মে এমপি আনারের খোঁজ করতে গিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তার মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করে। বুধবার (২২ মে) ভারতের এনডিটিভির খবরে বলা হয়, কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জিভা গার্ডেন্সের একটি ফ্লাটে এমপি আনারকে খুন করা হয়েছে।
নিউজ২৪/ সংবাদদাতা/ ইলিয়াস