অনলাইন ডেস্ক : ছাগল কাণ্ডের নায়ক রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমান অবশেষে মাথা ন্যাড়া করে ছদ্মবেশ ধারন করে সীমান্ত অতিক্রম করে পালিয়েছেন:সূত্র : কালের কণ্ঠ। গতকাল রবিবার বিকেলের দিকে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে মতিউর পালিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ একাধিক কাস্টমস কর্মকর্তা।
গতকালই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাঁর দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করতে তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করেছে। একই দিনে কাস্টমস,এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে তাঁকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত (ওএসডি) করা হয়েছে। হারিয়েছেন তিনি সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পদও।
২) দেশ টিভি’র টকশোতে এসে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান বদিউর রহমান মতিউর রহমানের ক্ষমতার দাপট সম্পর্কে ভয়ংকর তথ্য দিয়েছেন!ঘটনা ১/১১ সেনা সমর্থিত সরকারের সময়কার
৩)তিনি জানান,”আমি এনবিআরের চেয়ারম্যান হিসেবে বদলির আদেশ জারি করলাম, ওই দুই দিনে যোগি ভাতেরে কয় অন্ন’ তারা মার্সাল ল দেয় নাই কিন্তু সেই ক্ষমতা এক্সেরসাইজ করে ওরা একটা অর্ডার করে ফেলল যে তাদের ক্লিয়ারেন্স ছাড়া মতিউর এবং ফরিদকে রিলিজ করা যাবে না। মেজর জেনারেল সিনহাই জামালই আমাকে ফোন করল। বলল,মতিউরের বদলি আদেশটা কেনসেল করতে হবে। এর পরে দেখলাম আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন থেকে আবার একটা অর্ডার পাঠিয়ে দিল,অর্ডারটা কেনসেল করতে হবে। তাজ্জব হলাম: মঈন ইউ আহমেদ আমাকে টেলিফোন করলো,চেয়ারম্যান সাহেব,আমি কোন সময় তদবির করি টরি নাই। আমার একটা রিকুয়েষ্ট রাখতে হবে।
এদিকে “আমার চার মেম্বারও বলছে তাকে বদলি করে রাখা যাবেনা। সে এতো ক্ষমতাশালী। সেজন্যই তার বদলির আদেশ কেনসেল করি নাই। সেদিনই টের পেলাম,আসলে মতিউর কতো ক্ষমতাশালী। তারপর মতিউর একদিন সরাসরি আমার..অফিসে গেল দেখা করতে। আমি তাইজ্জব বনে গেলাম। মেম্বারের নিচের কেউ নরমালি আমার সাথে দেখা করতে যেত না বা আসতো না। আমি এলাউ করতাম না।
আমি দেখা করলাম না। বদলি অর্ডার দশটার মধ্যে পাঠিয়ে দিলাম। নাছোড় বান্দা…. মতিউর তারপরে আমার ধানমন্ডি বাসায় চলে আসলো। আমি একটু বিরক্ত হইলাম। নিচে বসি রইল। ড্রাইভারকে বলতেছে একটু দেখা করবো। আমি বলি দিয়েছি না। দেখা হবেনা। এরপরে যেটা ঘটলো সেটা আরো তাজ্জব। চট্টগ্রামে তখন ব্রিগেডিয়ার হাসান নাসির চিটাগং পোর্ট.. টোর্ট তার চার্জে দেখে
ব্রিগেডিয়ার হাসান নাসির আমার অফিসেও আসছে। আমি বলে দিলাম না আমি কেনসেল করবোনা। আমি তার কথা রাখলাম না। পরে মেজর জেনারেল জামাল আমাকে টেলিফোন করলো। বলল যে মতিউরের আদেশটা কেনসেল করতে হবে। বললাম সম্ভব না। এরপর আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন থেকে আবার একটা অর্ডার পাঠিয়ে দিল তার অর্ডারটা কেনসেল করতে হবে। জেনারেল মাসুদও টেলিফোন করলো। মতিউরের অর্ডারটা কেনসেল করতে হবে। বললাম যে সম্ভব না। হোয়াট এ সারপ্রাইজ মঈন ইউ আহমেদও একই অনুরোধ করলেন… তিনি বলেন,আমার একটা অনুরোধ রাখতে হবে। ফরিদকে ছেড়ে দিলাম। মতিউরের অর্ডার টা কেনসেল করতে হবে।
বলি,স্যার, মতিউর তো যতোটুকু শুনেছি ভালো না। খুব পাওয়ারফুল মানুষ। ফাইনান্স মিনিষ্টার কিবরিয়া সাহেবের বেডরুমেও যেতে পারতো। সাইফুর রহমানের বেডরুমেও গেছে। আমার চার মেম্বারও বলছে তাঁকে বদলি করলে রাখা যাবে না। সে এতো ক্ষমতাশালী। সেজন্যই তার বদলির আদেশটা আমি কেনসেল করবোনা। তাইলে আমার ক্ষমতা আর থাকে না। আমাকে বদলি করার পরে তাইলে তাকে নিয়ে আসবেন।
মতিউরকে বদলি করলাম না। আই ডিড নট। আমি যখন সেচ্ছা অবসরে চলে আসলাম। তারপরে দেখলাম ঠিকই মতিউর রহমান আবার চিটাগং আসলো। এ ঘটনার পর মতিউর প্রচার করে তাঁর বদলি কেনসেল না করায় চেয়ারম্যান বদিউর রহমান বদলি হয়েছেন! এই হচ্ছে সেই মতিউর রহমান। যাই হোক! শেষ রক্ষা হয়নি মতিউরের। আপাতত গা ঢাকা দিয়ে আত্মরক্ষা করছেন। প্রায় দেড় মাস আগেই মহাবিপদ সংকেত আঁচ করেছিলেন মতিউর চোরের মন চোর চোর… ছাই দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টায় গত ৩০ এপ্রিল অখ্যাত একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে আত্মবন্দনা ও নিজের সততার গল্প লেখায় মতিউর রহমান।
২. সেই গল্পের শিরোনাম ছিল : “সততা একজন কর্মকর্তার মূল্যায়নের মূল চাবিকাঠি” — ড.মতিউর রহমান। সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক ড.মতিউর রহমান সম্পর্কে শুরুতে লিখেন ; মতিউর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফাইন্যান্স বিষয়ে সম্মান ডিগ্রি এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রিস্টস ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি ভ্যাট এবং কাস্টমস বিষয়ে দেশ-বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।
যার হাত ধরে নতুন ভাবে ঢেলে সেজেছে কাস্টমস / এনবিআর। বিসিএস (শুল্ক ও অবগারী) ১১তম ব্যাচের এই কর্মকর্তা তার সততা,মেধা,দক্ষতা ও পরিশ্রম দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন কাস্টমসকে। বর্তমানে তিনি এনবিআরের সদস্য,কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইবুনালের প্রেসিডেন্ট। তার আগে ট্রাইবুনালের সদস্য ছিলেন। ট্রাইবুনালে মামলার জট নিরসনে পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্টদের সাথে নিয়ে নিষ্পত্তি করেছেন প্রায় চার হাজার মামলা। বর্তমানে ট্রাইবুনালে মামলার জট নেই বললেই চলে।
আত্মবন্দনায় ড. মতিউর রহমান আরো জানান, ”স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকারের সাথে আমরা কাজ করে যাচ্ছি “। ইতোমধ্যে স্মার্ট ডিজিটালাইজেশনের অংশ হিসেবে এনবিআরের সহযোগিতা নিয়ে ‘ডি-নথি’ চালু করার উদ্যোগ নিয়েছি। তিনি বলেন, ‘বরিশাল বিভাগীয় অফিসার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ইতোমধ্যে বরিশালের সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের সম্পৃক্ত করতে পেরেছি।
সম্প্রতি ড. মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,‘অভিযোগ গুলো সর্বৈব মিথ্যা। কালেরকণ্ঠে বেনজিরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ ও ঈদেপূর্ব কুরবনীর হাটে মতিউর রহমানের গুণধর পুত্রের ১৫ লাখ টাকায় ছাগল কাণ্ড ভাইরাল হওয়ার জেরে অবশেষে মতিউর রহমান আপাততঃ ধরাশায়ী। দৈনিক ইত্তেফাকের অনুসন্ধানে বের হয়ে এসেছে মতিউর রহমানের ক্ষমতার উৎসের রহস্য!
পত্রিকাটি প্রখ্যাত সাংবাদিক আব্দুল গাফফার চৌধুরীর একটি ভবিষ্যৎবানীর পুনরাবৃত্তি করে উল্লেখ করেন ; মৃত্যুর আগে গাফফার চৌধুরী কলামে লিখেছিলেন,’নব্য আওয়ামী লীগ সেজে বহু স্বাধীনতাবিরোধী সুবিধা ভোগ করছে। এর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে একসময় ভুগতে হবে।’ পর্যবেক্ষকদের অনেকে মনে করছেন: প্রয়াত: কলামিস্ট আ:গাফফার চৌধুরীর ভবিষ্যৎবাণী ইতোমধ্যে ফলতে শুরু করেছে।
ইত্তেফাকের অনুসন্ধানে জানা যায় : মতিউরের বাবা রাজাকার ছিলেন,তার প্রথম স্ত্রী নরসিংদির রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেত্রী লায়লা কানিজ লাকি র বাবাও ছিলেন রাজাকার। মতিউর রহমানকে যে তিন প্রভাবশালী প্রশ্রয়ে দিয়েছেন, তাদের এক জনের বাবাও রাজাকার। মতিউরকে প্রশ্রয় দেওয়া তিন প্রভাবশালীর একজন ক্ষমতাধর সচিব। একজন প্রশাসন ক্যাডারের অত্যন্ত প্রভাবশালী কর্মকর্তা।
আরেক জন বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যতম শীর্ষ পদে আছেন। তার বদৌলতেই মতিউর সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হন। অন্য প্রভাবশালী হলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা। তার কাছ থেকেই বিশেষ সুবিধা পেয়ে মতিউর প্লেসমেন্ট শেয়ারের কারসাজি করে হাজার হাজার কোটি টাকা অবৈধভাবে হাতিয়ে নিয়েছেন। এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য মো.মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা একের পর এক সম্পদের তথ্য বেরিয়ে আসছে।
এখন পর্যন্ত তাঁর দুই স্ত্রী দুই স্ত্রী দুই সন্তান ভাই বোনসহ নিকটজনদের নামে ছয় জেলায় জমি,ফ্লাট,শিল্প প্রতিষ্ঠান,রিসোর্টসহ নানা সম্পত্তির খোঁজ পাওয়া গেছে। এর বাইরে পুঁজি বাজারেও তাঁর বিনিয়োগ রয়েছে। সম্পদের পরিমান মতান্তরে হাজার কোটি টাকা।
সংবাদদাতা/ ইলিয়াস