অনলাইন ডেস্ক : আবার শতক ছুঁয়েছে দেশি পেঁয়াজের দাম। কোরবানির ঈদের আগেও রাজধানীর খুচরা বাজারে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজের কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা থাকলেও এখন ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা কম থাকায় মুরগি, আদা ও রসুনের দাম কিছুটা কমেছে। কমেছে ফার্মের ডিমের দামও। বৃহস্পতিবার (২৮ জুন) রাজধানীর মহাখালী, জোয়ারসাহারা, বাড্ডা ও রামপুরা কাঁচাবাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে। খুচরা বিক্রেতারা বলেছেন, ঈদ উপলক্ষে পেঁয়াজের চাহিদা বেড়েছিল। অন্যদিকে ঈদের ছুটি ও বৃষ্টির কারণে সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেওয়ায় পেঁয়াজের দাম নতুন করে বেড়েছে। দাম আবার কমে যাবে বলেও তারা জানান।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারে ফার্মের ডিম ডজনে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত কমে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে মহল্লার দোকানগুলোতে এখনো তা ১৬০ টাকা। চাহিদা কমায় মুরগির দাম কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত কমে ব্রয়লার মুরগি কেজি ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা এবং মানভেদে সোনালি মুরগি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঈদের পর বাজারে আদা ও রসুনের চাহিদা কিছুটা কমে যাওয়ায় দামও কিছুটা কমেছে।
তার পরও অবশ্য দাম বেশ চড়াই রয়েছে। ভালো মানের আদার কেজি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা। ঈদের আগে আগে ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত ছিল আদার দাম। রসুন কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। দেশি-বিদেশি রসুন কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পেঁয়াজের দাম বেশি যে কারণে
রাজধানীর রামপুরা কাঁচাবাজারের মহিউদ্দিন এন্টারপ্রাইজের ব্যবসায়ী মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘এখন আমাদের মাঝারি সাইজের পেঁয়াজ ৮৭ টাকায় কিনে ৯০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতার কথা চিন্তা করে লাভ ছাড়া বিক্রি করছি। আর বড় সাইজের পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে আরো বেশি দামে।’ রাজধানীর বাড্ডা কাঁচাবাজারের বিক্রেতা আব্দুল হাই বলেন, ‘বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের সরবরাহ না থাকায় দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়তি। দেশি বড় সাইজের পেঁয়াজ কেজি ১০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।’
রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গত বুধবারের বাজারদর প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এক মাসের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম ২১ থেকে ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এখন প্রতি কেজি মানভেদে ৮৫ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক মাস আগে ছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা।
মহাখালী কাঁচাবাজারের ডিম ব্যবসায়ী রাজিব মিয়া রাজু বলেন, ‘ডিমের দাম এখন কমতির দিকে। খুচরায় প্রতি ডজন ১৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। দুই দিন আগেও ডজন ১৫৫ টাকা ছিল।’ কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের মেসার্স মা আয়েশা ব্রয়লার হাউসের ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন বলেন, ‘মূলত বাজারে চাহিদা কম থাকার কারণে এখন দাম কমেছে। তবে আস্তে আস্তে আবার মুরগির চাহিদা বাড়ছে, যে কারণে দু-এক দিনের মধ্যে মুরগির দাম কিছুটা বাড়বে।’
সবজির বাজার
রাজধানীর উল্লিখিত কাঁচাবাজারগুলোতে কাঁচা মরিচ ২৪০ থেকে ২৮০, টমেটো ১২০ থেকে ১৪০, গোল বেগুন ৮০ থেকে ৯০, পেঁপে ও পটোল ৫০ থেকে ৬০, ঢেঁড়স, চিচিঙ্গা ও ঝিঙ্গা ৬০, শসা ১০০ থেকে ১২০, করলা ৮০ থেকে ১০০, কচুর লতা ৮০, মিষ্টিকুমড়া ৩০ থেকে ৪০ ও আলু ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি এবং লাউ প্রতিটি ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
তেজগাঁওয়ে তিন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
মূল্যতালিকার চেয়ে বেশি দামে ডিম বিক্রি, ক্যাশ মেমোতে দাম উল্লেখ না করা ও এসএমএসের মাধ্যমে সারা দেশে ডিম বাজার নিয়ন্ত্রণের অভিযোগে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এর মধ্যে মেসার্স আমানত এন্টারপ্রাইজকে ৫০ হাজার টাকা এবং বাকি দুটি প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।
গতকাল ভোরে তেজগাঁওয়ের পাইকারি ডিমের আড়তে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মণ্ডল এই অভিযান পরিচালনা করেন। তিনি বলেন, ‘পাইকারি বাজারে গিয়ে আমরা প্রমাণ পেলাম ক্যাশ মেমোতে আগে থেকে তাঁরা দর লেখেন না। কী দরে বিক্রি করছেন, ক্যাশ মেমোতে তার উল্লেখ থাকে না। সে রকম ক্যাশ মেমো আমাদের কাছে আগে থেকেই ছিল। এ ছাড়া মূল্যতালিকার চেয়ে বেশি দামে ডিম বিক্রির প্রমাণও পাওয়া গেছে। তারা শুধু সংখ্যা লেখেন যে এত হাজার পিস ডিম বিক্রি করা হলো।’
ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার বলেন, ‘এখান থেকে পাইকারি মূল্যে ডিম বিক্রি হচ্ছে। যখন ভোক্তা পর্যায়ে যাচ্ছে তখন প্রতি পিস ডিমের দাম চার থেকে পাঁচ টাকা অতিরিক্ত নেওয়া হচ্ছে। এখান থেকে এসএমএসের মাধ্যমে সারা দেশে ডিম কী রেটে বিক্রি হবে তা নির্ধারণ করে দেওয়া হতো।’
মেসার্স আমানত এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্দিষ্ট নীতিমালা হলে আমরা নীতিমালা অনুযায়ী চলব। নীতিমালার বাইরে গেলে জেল-ফাঁসি দেন, জরিমানা করেন আপত্তি নেই। কোনো নীতিমালা ছাড়া হঠাৎ এসে এটা অন্যায়, ওটা অন্যায় দেখিয়ে জরিমানা করে যাবেন, এটা অন্যায়।’
সংবাদদাতা/ ইলিয়াস