অনলাইন ডেস্ক : বৈভব, বিলাসিতা আকণ্ঠ মদ্যপান ছিল, একই সঙ্গে ছিল বকশিস দেওয়ার ঝোঁক। জীবনের শেষ কয়েকটি দিনেও বখশিস দিতে ভুল হয়নি। আলিপুরের জেনারেল হাসপাতালে, গলার অসুখ যকৃতের সিরোসিস নিয়ে মধু কবি ভর্তি। একদিন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এলেন তাঁর এক সময়ের মুন্সি মনিরুদ্দিন। মাইকেল তাঁর কাছে টাকাপয়সা আছে কিনা জানতে চাইলেন। মনিরুদ্দিন বললেন, দেড় টাকা আছে। ওটাই চাইলেন মধু, তারপর তা বখশিস হিসেবে দিয়ে দিলেন তাঁর সেবারতা নার্সকে।
আরও আগে মাইকেলের নিদারুণ অভাব,যার কোনো ইতি অন্ত নেই। একটা ঠিকাগাড়িতে বিদ্যাসাগরের বাড়িতে এসেছেন মাইকেল। কোচ ম্যানকে দিলেন আধুলি নয় আস্ত একটা মোহর। কোচম্যানকে এত বেশি দেওয়া আদপে অপব্যায়। বিদ্যাসাগর মাইকেল কে দু’চার কথা শোনালেন। কিন্তু বখশিস দেওয়া যে তাঁর স্বভাবে, নিজের স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বললেন, বিদ্যাসাগর,আজ দুদিন যাবৎ এই কোচম্যান আমাকে নানা জায়গায় নিয়ে গিয়েছে। ওকে আর বেশি কি দিলাম। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের কাছে মাইকেল হলেন ব্যতিক্রমী প্রতিভা।
সেই প্রতিভাকে স্বযত্নে রক্ষা করতে তিনি বারবার ত্রাতা হয়েছেন। দুর্দিনে তাঁকে বাঁচিয়েছেন। আবার ‘বীরাঙ্গানা’ কাব্য মাইকেল উৎসর্গ করেছেন বিদ্যাসাগরকে।
মাইকেলের ইচ্ছে ব্যারিস্টারি পড়বেন,বিলাত যাবেন। উৎসাহ দিলেন বিদ্যাসাগর, শুধু মুখের কথায় নয় কাজে। গ্ৰেজ ইন থেকে ব্যারিস্টারি পাস করে মাইকেল দেশে ফিরেছেন, কলকাতা হাইকোর্টে ব্যারিস্টারি করার অনুমতি প্রার্থনা করে প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করলেন। তিনি অপ্রসন্ন নন, একাধিক বিচারপতি মাইকেলের প্রতি প্রসন্ন। কিন্তু জ্যাকসন ও ম্যাফফারসনের আপত্তিতে মাইকেল অনুমতি পেলেন না। উভয়েই মাইকেলের চরিত্র নিয়ে আপত্তি করেছেন, তাদের বিবেচনায় মাইকেলের চরিত্র নিষ্কলঙ্ক নয়। আগে মাইকেলের চরিত্রের তদন্ত প্রয়োজন।
কি হবে নিজের চরিত্র সম্বন্ধে কিছু সার্টিফিকেট জোগাড় করতে পারলে আশা আছে। বিদ্যাসাগরের শরণাপন্ন হলেন তিনি। ১৮৬৭ সালের ২০ এপ্রিল বিদ্যাসাগর, রামকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়,প্রসন্নকুমার সর্বাধিকারী একসাথে মাইকেল কে প্রশংসাপত্র দিয়েছেন। ৩ মে জজেরা একমত হয়ে মাইকেল কে ব্যারিস্টারি করার অনুমতি দিলেন। সেদিন ছিল রবিবার ২৯ জুন, মাইকেলের অন্তিম অবস্থা ঘনিয়ে এল। বেলা দুটোর সময় তিনি চিরঘুমের দেশে চলে গেলেন। কিন্তু কলকাতার খ্রিস্টান সমাজ তাঁকে সমাহিত করার জন্য মাত্র ছয় ফুট জায়গা ছেড়ে দিল না। কবির মরদেহে পচন ধরল।
অবশেষে এগিয়ে এলেন অ্যাংলিকান চার্চের রেভারেন্ড পিটার জন জার্বো।বিশপের অনুমতি ছাড়াই, জার্বোর উদ্যোগে, ৩০ জুন বিকেলে, মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টারও পরে লোয়ার সার্কুলার রোডের কবরস্থানে মাইকেলকে সমাধিস্থ করা হয়। চার দিন আগে এখানেই হেনরিয়েটাকে সমাধিস্থ করা হয়েছিল। কবির কবর খোঁড়া হয় তার পাশেই। সে দিন ভক্ত ও বন্ধুবান্ধব মিলে উপস্থিত ছিলেন প্রায় এক হাজার মানুষ। কিন্তু একদিন শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় নিজের গ্রন্থ উৎসর্গ করে যাঁদের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বিখ্যাত করে গেলেন, সেই ভিড়ে ছিলেন না তাঁদের একজনও। আজ অমিত্রাক্ষর ছন্দের স্রষ্টা মাইকেল মধুসূদন দত্তের প্রয়াণ দিবসে আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।
সংকলনে অরুণাভ সেন। সংগৃহীত ধ্রুবতারাদের খোঁজে পুস্তক ঋণ ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার,করুণাসাগর বিদ্যাসাগর ইন্দ্রমিত্র, আনন্দবাজার অনলাইনে শুভাশিস চক্রবর্তীর নিবন্ধ দত্তকুলোদ্ভব
(নেট থেকে সংগৃহীত)
সংবাদদাতা/ ইলিয়াস