আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২০শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, সকাল ১০:৪৫
মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিদের কোটার বিরোধিতায় কারা?

মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিদের কোটার বিরোধিতায় কারা?

প্রকাশিতঃ

অনলাইন ডেস্ক : ২০১৮ সালের মতো দেশে আবারও সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের আন্দোলন। অভিযোগ আছে: উদ্দেশ্যমূলকভাবে দেশের যুবসমাজকে ক্ষেপিয়ে তোলা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে,মূলত: মুক্তিযোদ্ধাদের সাধারণ জনগোষ্ঠীর মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা নিতেই এই আন্দোলন! মুক্তিযোদ্ধাদের যাঁরা সহ্য করতে পারেন না ওই মহলটি পেছন থেকে কলকাঠি নেড়ে সরকার বিরোধী আন্দোলন পাকাতে চাইছেন। ( আন্দোলনরত: শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীরা দাবি করছে যে, সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহাল করতে হবে।: ) তাদের দাবি- মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি নাতনিদের কোটা বাতিল করতে হবে!

মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের কোটা বহাল থাকলে ভাগে কম পড়বে মনে করছেন আন্দোলনকারীরা। মুক্তিযোদ্ধাদের ‘মুক্তিযোদ্ধাদের’ নাতি নাতনিদের কোটা প্রতিহত করতে মাঠে নেমেছে কারা? মুক্তিযোদ্ধারা ভেসে এসেছেন? তাদের অবদানের জন্যই স্বাধীন বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধকে যারা মেনে নেয়নি তারাই মুক্তিযোদ্ধাদের অবজ্ঞা করে। সুপ্রিয় দর্শক: মেধা ও কোটা কোনভাবেই সাংঘর্ষিক নয়। কোটা ব্যবস্থা হল : অনগ্রসর – অগ্রসর জাতি গোষ্ঠী শ্রেণী পেশার মানুষের জন্য সুসম বন্টন ব্যবস্থা। যা বিশ্বময় প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থা। সকল দেশে রয়েছে এই ব্যবস্থা। বাংলাদেশ বাড়তি যেটা সেটি হল মুক্তিযুদ্ধ কোটা। বিশ্বের কোথাও দ্বিতীয় নজির নেই।

যদি থাকত নিশ্চয়ই সেইসব দেশেও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটা অন্তর্ভুক্ত করা হতো। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে। ৫৩ বছর পর এসে সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি নাতনিদের নিয়ে অপমানজন উক্ত শুনতে হচ্ছে যা খুবই পীড়াদায়ক। যেমন ধরুন: ২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ বীর মুক্তিযোদ্ধা(পরে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনিদের সংযোজন করা হয়।) বন্টনটা এরকম ; ১০ শতাংশ নারী কোটা,১০ শতাংশ জেলা কোটা এবং ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কোটা। এছাড়া ১ শতাংশ পদ প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের দিয়ে পূরণের নিয়ম চালু হয়।

২৬ শতাংশ। অবশিষ্ট ৩০ শতাংশ বীর মুক্তিযোদ্ধা (পরে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনি) দের জন্য। সব মিলিয়ে মোট ৫৬ শতাংশ সংরক্ষিত কোটার বাইরে অবশিষ্ট ৪৪ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে। বিজ্ঞাপন অনেকেই জানতে চান কোটা বা সংরক্ষণ প্রথা বিশ্বের আর কোন কোন দেশে আছে কি না? বিশিষ্ট সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা ঢাকা পোস্ট অনলাইন নিউজ পোর্টালে লিখেছেন, ভারত এবং পাকিস্তানে কোটা প্রথা বড় আকারেই আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষাসহ নানা খাতে সংরক্ষণ প্রথা আছে। বিশেষ করে কালো মানুষের জন্য অনেক রাজ্যেই চাকরিসহ নানা খাতে বিশেষ সুবিধা আছে। শুধু নেই মুক্তিযোদ্ধা কোটা।

সঙ্গত কারণেই নেই কারণ সেইসব দেশ মুক্তিযুদ্ধ হয়নি। একমাত্র বাঙালি জাতির রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাঁথা ইতিহাস। আর ২৫ – ৫০ বছর পর কোন মুক্তিযোদ্ধা বেঁচে থাকবেন না। থাকবেন তাঁদের নাতি নাতনি ও বংশপরম্পরা। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানকে অমর করার নিমিত্তে হলেও মুক্তিযোদ্ধা কোটা অক্ষুন্ন রাখার বিকল্প নেই। মুক্তি যুদ্ধের ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখতেই মুক্তি যোদ্ধাদের নাতি নাতনিদের কোটা বাতিল করা ঠিক হবে না। সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা লিখেছেন, আমাদের মতো দেশে সরকারি চাকরি সবার কাছে এক বড় চাহিদা বা স্বপ্ন যা অন্য দেশে, বিশেষ করে উন্নত দেশেগুলোয় নেই। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, সাউথ আফ্রিকায় ‘পজিটিভ এফারমেটিভ অ্যাসিসটেন্স’ নামে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য নগদ সাহায্য দেওয়া,খাদ্যে ভর্তুকি প্রদান করা, বাড়ি করে দেওয়া, শিক্ষা ও চিকিৎসায় সাহায্য করার বিধান আছে। সাউথ আফ্রিকায় ব্ল্যাকদের জন্য ক্রিকেটেও কোটা সংরক্ষিত আছে।

নরওয়েতে বেসরকারি খাতে পর্যন্ত নারী কোটা রাখার বিধান আছে। ফ্রান্সে রাজনৈতিক দলগুলোয় নারীদের জন্য কোটা রাখা আছে। ব্রাজিলে আদিবাসীদের জন্য চাকরিসহ সব ক্ষেত্রে কোটা প্রথা বজায় আছে। এছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে উপজাতি কোটা রাখা হয়। কোটাব্যবস্থা পেয়ে তাদের জীবনমান ও আর্থ-সামাজিক সূচকে কিছুটা হলেও অগ্রগতি হয়েছে। তেমনিভাবে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জন্যও কোটা আছে এবং এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কেউ আপত্তি করছে না।

আপত্তিটা কী মুক্তিযোদ্ধা পরিবার?? ক্ষেত্র বিশেষে নারীদের জন্যও কোটা ব্যবস্থা বড় অবদান রেখেছে। এই সংরক্ষণ প্রথার সুফল হিসেবে স্বাধীন দেশে সমাজে অন্যদের থেকে তুলনামূলকভাবে আর্থিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া মানুষরা স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। তার পাশাপাশি নিদারুণ দারিদ্রের নাগপাশ কেটে আত্মবিশ্বাসী নাগরিক হয়ে তারা দেশ ও দশের সামগ্রিক উন্নয়নের অন্যতম অংশীদার হতে পেরে গর্ববোধ করছেন। প্রশ্ন হলো, সেই কোটা প্রথা কতটুকু এবং কীভাবে থাকবে? প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্ধারিত এক শতাংশ কোটা কখনো যথাযথভাবে পূরণ করা হয়নি। মুক্তিযোদ্ধাদের কেটাও নাকি দিনশেষে শুন্য থেকে যায়।

এই জায়গায় নজর দিতে হবে। হতে পারে,মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি নাতনিরা কোটার পেছনে না ছুটে স্ব স্ব মেধায় চাকরি পাচ্ছেন। ফলে,তাঁদের কোটা খালি থাকছে! সেক্ষেত্রে শুন্য কোটা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রয়োগ করা হোক। শুধু সরকারি খাতে নয়, বেসরকারি খাতেও বিষয়টি যেন মানা হয় সেই নজরদারি প্রয়োজন। সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা : যারা কোটা বাতিল চান তারা বুঝতে পারছেন না যে, শ্রেণি, জাতি, বর্ণ, লিঙ্গীয় অসমতার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা এই দেশে কোটা বাতিল সমাজের অসমতা এবং বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। কোটা প্রথায় মেধা কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে বাস্তবতা হলো অতি দরিদ্র,পিছিয়ে পড়া পরিবারের সন্তানরাও কোনো কাঠামোতেই সেইভাবে লেখাপড়া করতে পারে না যে মেধা প্রদর্শন করবে।  আবার অনেকক্ষেত্রে ঘুষ বানিজ্যের কারনে মেধাবীরা বঞ্চিত হওয়ার ঘটনাও কম নেই।

তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম স্থান অধিকারী মেধাবী কেন চাকরি না পেয়ে বিদেশে পাড়ি দেন? যে তথাকথিত যোগ্যতার অহমিকায় অনেকে ডগমগ হয়ে আছেন তা আদৌ শুধুমাত্র ব্যক্তিগত মেধা বা দক্ষতা নয়। তারা কে কতটা সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন তার ওপরও নির্ভর করে। যে পড়ুয়া শহুরে বড় প্রতিষ্ঠান, ভালো ভালো শিক্ষকের কাছে পড়ছেন আর যে প্রান্তিক পর্যায়ে অতি ভগ্ন কাঠামোতে ভালো শিক্ষক ছাড়া পড়ছেন, যে পড়ুয়া প্রতিটি বিষয়ে দুইজন করে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ে প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়ার চেয়ে ‘যোগ্যতর’ হয়ে উঠেছেন, তাদের যোগ্যতা কি সত্যিই তুলনীয়! আরও পড়ুন কোটা আন্দোলনকারীরা সরাসরি মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিরোধিতা করে থাকলে তা সুবিবেচ্য দাবি নয়।

মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিদের জন্য কোটা ৩০ শতাংশ হবে নাকি একটা যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনা হবে তা নিয়ে সুচিন্তিত মতামত ও সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। রাজনীতির কান্ডারিরা বরাবরই কোটা সংরক্ষণকে ভোটের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেছেন। সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার বিষয়টি সেইখানে অনেকাংশে গৌণ থাকছে। বাংলাদেশের জন্মই হয়েছিল বঞ্চনা এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ থেকে। সমতার মতাদর্শ চিন্তা করলে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী, দলিত, প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র পেশাজীবী, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা বহাল রাখতে হবে।

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা । প্রধান সম্পাদক, ঢাকা জার্নাল

 

সংবাদদাতা/ ইলিয়াস

Facebook
WhatsApp
Twitter

এ সম্পর্কিত আরো খবর

সম্পাদকঃ

সুভাষ সাহা

যুগ্ন সম্পাদকঃ

কাজী কবির হোসেন

ঠিকানাঃ

নারায়ণগঞ্জ অফিসঃ
পদ্মা সিটি প্লাজা, কক্ষ নংঃ ২২২, ৫৫/বি
এস, এম মালেহ রোড, টানবাজার
নারায়ণগঞ্জ-১৪০০

যোগাযোগ

ফোনঃ ৭৬৪০৬৯৯
মোবাইলঃ ০১৭১১৫৬১৩৯০
ইমেইলঃ bisherbashi.com.bd@gmail.com

USA OFFICE:

Wasington DC Bureau Chief:
Dastagir Jahangir,
3621 Columbia Pike Suit #104
Arlington USA, VA
22204
Phone: 7036770679
Email: tugrilcz@gmail.com

 

Website Design & Developed By
MD Fahim Haque
<Power Coder/>
www.mdfahim.com
Web Solution – Since 2009

error: Content is protected !!