অনলাইন ডেস্ক : সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা গতকাল বুধবার রাজধানীসহ সারা দেশে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেছেন। এতে সড়কে স্থবিরতা নেমে আসে। ঢাকার মূল সড়কগুলোতে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় হেঁটে অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হয়েছে হাজারো মানুষকে। কারওয়ান বাজার এলাকায় রেলপথ আটকে ফেলায় সারা দেশের সঙ্গে ঢাকার রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
দুপুরের পর ঢাকার গুলিস্তান, পল্টন, প্রেস ক্লাব, শাহবাগ, কাঁটাবন, সায়েন্স ল্যাব, নীলক্ষেত, নিউ মার্কেট এলাকা ঘুরে পথের মানুষের দুর্ভোগের চিত্র দেখা যায়। শাহবাগ মোড়ের চারপাশের ব্যারিকেড দিয়ে বাধা তৈরি করে কোটার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ করতে দেখা যায়। এ সময় তিন পাশের মূল সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরীবাগ, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার ও ফার্মগেট এলাকায়ও শাহবাগের প্রভাব পড়েছে।
পেছন দিকে প্রেস ক্লাব, সেগুনবাগিচা ও শান্তিনগর এলাকায়ও তীব্র যানজট তৈরি হয়। মূল সড়কের পাশাপাশি ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েও আটকে দেন শিক্ষার্থীরা। ফার্মগেট এলাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে নামার পথের (র্যাম্প) মুখে শিক্ষার্থীদের বসে অবস্থান নিতে দেখা যায়। এতে ঢাকার উড়াল মহাসড়কেও দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়।
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মিছিল নিয়ে গুলিস্তান এলাকায় আসেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। এ সময় জবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেন সরকারি কবি নজরুল ও সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরাও। সকাল ১০টা থেকে জিরো পয়েন্ট অবরুদ্ধ করে রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হল ও শহীদুল্লাহ হলের শিক্ষার্থীরা। এতে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গুলিস্তানের মতো ব্যস্ত সড়কে যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে। এই সড়কের যানজটের প্রভাব পড়ে আশপাশের সড়কগুলোতে।
গুলিস্তানে কথা হলে মইনুল ইসলাম বলেন, ‘আমি শান্তিনগর যাব। বাস বন্ধ। আবার রিকশায় যেতে গেলে তিন জায়গায় ভেঙে ভেঙে যেতে হবে। রিকশাও যেতে চাচ্ছে না। একটু পথের জন্য ২০ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা চায়। এখন হেঁটে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’ সেগুনবাগিচা থেকে বাড্ডায় যাবেন সিদ্দিকুর রহমান। বাস না পেয়ে অটোরিকশা খুঁজছিলেন। এক অটোরিকশার চালক তাঁর কাছে ৬০০ টাকা ভাড়া চাইলেন। সিদ্দিকুর বলেন, ‘এখান থেকে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকার বেশি ভাড়া হওয়ার কথা না। অথচ ৬০০ টাকা ভাড়া চাইছে। সুযোগ পেয়ে ফায়দা লুটতে চাইছে।’
চালকের ভাষ্য, ‘যানজটে কতক্ষণ আটকে থাকতে হয়, এর নিশ্চয়তা নেই। কোন সড়ক দিয়ে ঘুরে ঘুরে যেতে হবে, সেটিরও ঠিক নেই। এ কারণেই বেশি ভাড়া চাচ্ছি।’ ঢাকাবাসীর জন্য একমাত্র স্বস্তি ছিল মেট্রো রেল। যদিও মেট্রোতে উপচে পড়া ভিড় ছিল। যাত্রীর চাপ সামাল দিতে না পেরে দুপুরের দিকে বিভিন্ন মেট্রো স্টেশনের মূল ফটকে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ সচিবালয় মেট্রো স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, টিকিট কাউন্টারে উপচে পড়া যাত্রীর ভিড়। লাইন সিঁড়িতে গিয়ে ঠেকেছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা বিচ্ছিন্ন ছিল। রেলপথ অবরোধ করে আন্দোলন করার কারণে দুপুর ১২টার দিকে কমলাপুর থেকে আর কোনো ট্রেন ছেড়ে যেতে পারেনি। একইভাবে ঢাকায় কোনো ট্রেন প্রবেশও করতে পারেনি। পরে বিকেল ৫টার পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। ঢাকা (কমলাপুর) রেলস্টেশনের মাস্টার আনোয়ার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ৫ ঘণ্টা ২০ মিনিট বন্ধ থাকার পর ঢাকা থেকে সূচি অনুযায়ী ট্রেন ছাড়া শুরু হয়েছে।
এর আগে দুপুর ১২টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও মহাখালী আমতলী রেললাইন অবরোধ করেন কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীরা। এতে ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা কারওয়ান বাজার লেভেলক্রসিংয়ে রেলপথের বাইরে থাকা স্লিপার তুলে রেললাইনের ওপর রাখেন এবং জাতীয় পতাকা নিয়ে রেললাইনে দাঁড়িয়ে যান।
দেশের অন্যান্য স্থানেও বিভিন্ন মহাসড়ক আটকে রেখে শিক্ষার্থীরা অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। এতে দিনভর ঢাকায় দূরপাল্লার বাস প্রবেশ করতে পারেনি। মহাসড়কগুলোতে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। রাতে ফিরতি পথে ঢাকায় দূরপাল্লার বাসের চাপ বেড়ে যায়। দেশব্যাপী চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনে একাত্মতা জানিয়ে রাস্তায় নেমেছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষার্থীরা। বাংলা ব্লকেডের অংশ হিসেবে গতকাল বিকেল ৩টা থেকে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন করেন তাঁরা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে দুপুর সাড়ে ১২টায় নগরীর বিহাস বাইপাস মোড় অবরোধ করেন। এতে রাজশাহীর সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা গতকাল সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। এ সময় সড়কের দুই পাশে গাছের গুঁড়ি ফেলে যান চলাচল বন্ধ করে দেন আন্দোলনকারীরা।
বাংলা ব্লকেড কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক টানা চার ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় শুরু হওয়া এ কর্মসূচি শেষ হয় বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে।
সংবাদদাতা/ ইলিয়াস