অনলাইন ডেস্ক : কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে বিনোদন অঙ্গনের শিল্পীদের মধ্যে দুটো ভাগ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সেই বিভক্তিকে কেন্দ্র করে পুরো অঙ্গনেই এখন একধরনের স্থবিরতা চলছে। নিজেদের মধ্যে বসে আলাপ–আলোচনা করে দ্রুত কাজের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে চাইছেন সংশ্লিষ্টরা। এ জন্য সব নাট্য সংগঠন একসঙ্গে বসার পরিকল্পনা করছে। সিনিয়র অভিনয়শিল্পী, পরিচালক, প্রযোজকসহ কলাকুশলীরা এখানে অংশ নেবেন, মতামত দেবেন। তবে রাজনৈতিকভাবে যাঁরা খুব বেশি সক্রিয় ছিলেন, যাঁরা শিল্পী পরিচয়কে ক্ষুণ্ন করেছেন, এই আলোচনা সভায় তাঁদের বাদ রাখা হচ্ছে বলে জানালেন সংগঠনগুলোর নেতারা।
ছোট পর্দার অভিনয়শিল্পীদের সংগঠনের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গুটিকয় কিছু শিল্পীর জন্য পুরো শিল্পী সমাজের সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে। এ শিল্পীদের জন্য বৃহৎ শিল্পী সমাজকে সাধারণ মানুষ ভুল বুঝছে। এই প্রসঙ্গে অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি আহসান হাবীব নাসিম বলেন, ‘কিছু অভিনয়শিল্পী অতিরিক্ত করেছেন, তাঁরা শিল্পীসুলভ আচরণ করেননি। শিল্পীর যে ভাবমূর্তি ছিল, সেটা তাঁরা নষ্ট করেছেন।’
নাসিম আরও জানান, এই মুহূর্তে শিল্পীরা নিজেদের নিরাপত্তাহীন ভাবছেন। অনেকেই আতঙ্কে রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি শিল্পীরা বড় কোনো ক্রিমিনাল না। এখন নতুন করে ভাবনার সময় এসেছে। যে কারণে আমরা দ্রুত সবার কথা শুনতে চাই। সবার সঙ্গে বসব। তবে সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, রাজনৈতিক অঙ্গনে অতিরিক্ত তৎপর কোনো শিল্পীকে এখানে তাঁরা দেখতে চান না। আমরা চাই নিজেদের মধ্যে ভুল–বোঝাবুঝির অবসান হোক। আমরা চাই না কোনো শিল্পী আতঙ্কে থাকুক।’
ছোট পর্দার সব সংগঠনের প্রতিনিধি মিলে তৈরি ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গানাইজেশনের (এফটিপিও) চেয়ারম্যান অভিনেতা মামুনুর রশীদ বলেন, ‘দেখা যাচ্ছে নানা ধরনের মামলা দেওয়া হচ্ছে। এতে শিল্পীরা যেমন আতঙ্কে রয়েছেন, তেমনি কার্যক্রম স্থবির হয়ে যাচ্ছে। সুনির্দিষ্টভাবে যদি কারও নামে কোনো অভিযোগ থাকে, সেটা ভিন্ন কথা। সেগুলো নিয়ে আমাদের কোনো কথা নাই। কিন্তু দীর্ঘদিন আগের কোনো একটি ঘটনায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা আমরা চাই না। এসব মামলার সত্যতা কী? শিল্পীরা কেন কাউকে হত্যা করতে যাবেন? এমন মামলায় শিল্পীরা ভয় পাচ্ছেন, বিব্রত হচ্ছেন, ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন। এ জন্যই আমরা বসার চেষ্টা করেছি।’
উত্তরার একটি শুটিং হাউস থেকে গত বুধবার একজন অভিনেতা জানান, কিছু অভিনয়শিল্পীর মধ্যে মনোমালিন্য এখন অনেকটাই প্রকাশ্য। এর কারণ কোটা সংস্কার আন্দোলনে সমর্থন নিয়ে তাঁরা বিভক্ত হয়েছেন। যাঁরা আন্দোলনে কথা বলেননি, তাঁরাও রোষানলে পড়েছেন। তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘হাতে গোনা কিছু শিল্পী সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার জন্য রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁদের কেউ ব্যবসা, কেউ পদ–পদবি, কেউ মনোনয়ন, কেউ অনুদান পাওয়ার আশায় অন্ধভাবে দলের স্বার্থকে সবার আগে দেখেছেন। শিল্পী হিসেবে যা সবার মধ্যে নেতিবাচক একটা প্রভাব ফেলেছে। বিটিভির ঘটনা দেখলেই সব ক্লিয়ার হয়। তার আগে এক নেত্রীর বাসার সামনে অতিরঞ্জিত ঘটনার জন্যও এরাই দায়ী। এগুলো শিল্পীদের ছোট করেছে। শিল্পীরা এখন ইমেজ–সংকটে রয়েছেন। এই ইমেজ সহজে পুনরদ্ধার করা কঠিন।’
দীর্ঘদিন ধরে নাট্যাঙ্গনে শৃঙ্খলা নেই, মনে করেন অভিনেতা ও টেলিভিশন প্রযোজক সমিতির নেতা সাজু মুনতাসির। তিনি জানান, নাট্যাঙ্গনে এখন অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে। কিছু শিল্পীর জন্য অনেকেই বের হতে পারছেন না। কাজেও স্বাভাবিক পরিবেশ ফেরেনি। সাজু বলেন, ‘আমরা নিয়মিত সিনিয়রদের সঙ্গে কথা বলছি। মামুন ভাইসহ অনেকের সঙ্গে কথা হচ্ছে। দ্রুত বসে আমরা কাজের পরিবেশ ফেরাতে চাই। শিল্পীদের ওপর যেন আস্থা তৈরি হয়, সেটাই চ্যালেঞ্জিং। তা না হলে আমাদের নাট্যাঙ্গনের দুর্দিন শেষ হবে না। কারণ দর্শকই আমাদের প্রাণ। আমরা এক সপ্তাহের মধ্যে একসঙ্গে বসে, এক মাসের মধ্যে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরাতে চাই। এ জন্য সব ধরনের উদ্যোগ নিতে চাই। তবে ঘনিষ্ঠভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, অতিরঞ্জিত কর্মকাণ্ড যাঁরা করেছেন, তাঁরা এখানে থাকবেন না।’
সংবাদদাতা/ ইলিয়াস