আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২০শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, বিকাল ৫:১৯
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণেও অনিয়ম-দুর্নীতি!

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণেও অনিয়ম-দুর্নীতি!

প্রকাশিতঃ
অনলাইন ডেস্ক : আওয়ামী লীগ সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে দেশের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসংখ্য ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে। তবে এসব ভাস্কর্য নির্মাণে রক্ষা করা হয়নি শৈল্পিক মান। ফলে এ নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। অনেক জায়গায় মানা হয়নি ভাস্কর্য নির্মাণে অনুমোদনের নিয়মাবলিও। আবার কোথাও বরাদ্দ পাওয়া অর্থ তছরুপ করা হয়েছে। এতে কাজটি ঘিরে কোটি কোটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

২০২২ সালে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘মুক্তির অগ্নিপুরুষ’ নামে বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়। এটি নির্মাণ করেন ভাস্কর উত্তম ঘোষ। তবে গত বছর ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেওয়া হয়। জানা গেছে, যথাযথ নিয়ম না মেনেই উত্তম ঘোষ ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেন। ভাস্কর্যটি নির্মাণে টেন্ডার পর্যন্ত হয়নি। জাদুঘরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, উত্তম ঘোষ ভাস্কর্যটি নির্মাণের নামে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ভাস্কর্যটির নাম ভাঙিয়ে সাবেক সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের কাছ থেকেও অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
জাতীয় জাদুঘরের সচিব (অতিরিক্ত সচিব) গাজী মো. ওয়ালি-উল-হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘উত্তম ঘোষ নিয়ম মেনে ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেননি। এটি নির্মাণের জন্য জাদুঘর টেন্ডারও দেয়নি। কোন লাভের আশায় তিনি এটি করেছেন, তাঁকে কে টাকা দিয়েছে, সে বিষয়ে জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ কিছু জানে না। তবে ভাস্কর্যটি নির্মাণে জাদুঘর থেকে তাঁকে কোনো টাকা দেওয়া হয়নি।’ বর্তমানে সেটি জাদুঘরের স্টোর রুমে পড়ে আছে।

২০২২ সালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর একটি ব্রোঞ্জের ভাস্কর্য নির্মাণ শুরু হয়। ভাস্কর্যটির উচ্চতা ১৯ ফুট ৬ ইঞ্চি, আর বেদি ৬ ফুট ৯ ইঞ্চি। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়, ‘ঢাকাস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়)’ প্রকল্পটির আওতায় ব্রোঞ্জের ভাস্কর্যটিও রয়েছে। প্রকল্পটির মোট অনুমোদিত প্রাক্কলিত ব্যয় ২৬৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকার বিপরীতে ২০২২ সালের মে পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি হয় ১১৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকার। ভাস্কর্যটির নির্মাণকাজ এখনো শেষ হয়নি। এই প্রকল্পেও ব্যাপক অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে গত বছর অক্টোবরে বঙ্গবন্ধুর কারাজীবনের ওপর ভিত্তি করে একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নগরীর শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবেশ ও বহির্গমন পথের গোলচত্বরে ভাস্কর্যটি নির্মাণ করে। এটি নির্মাণে ব্যয় করা হয় ৮৪ লাখ টাকা। তবে ভাস্কর্যটি নির্মাণ বরাদ্দের বেশির ভাগ টাকা চসিকের কর্মকর্তারা লুটপাট করেছেন বলে জানা গেছে। একইভাবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণে দুর্নীতি এবং দায়সারাভাবে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করার অভিযোগে ২০১৭ সালের আগস্টে সংবাদ সম্মেলন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মুজিব জন্মশতবর্ষে দেশের নানান জায়গায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ও ম্যুরাল নির্মাণের উদ্যোগ নেন বিভিন্নজন। তবে অদক্ষ ভাস্কর দিয়ে এসব ভাস্কর্য ও ম্যুরাল নির্মাণ করায় জনগণের কাছে তা গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। নিয়ম অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ও ম্যুরাল নির্মাণ করতে হলে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অনুমোদন না নিয়েই দেশের অনেক স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়। অনুমোদন নিয়ে কতসংখ্যক ভাস্কর্য ও ম্যুরাল নির্মাণ করা হয়েছে তার হিসাবও জানাতে পারেননি বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কর্মকর্তারা।

বিষয়টি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সঞ্জয় চক্রবর্তী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত সাড়ে ১৫ বছরে দেশজুড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নিয়ম মানা হয়নি। যে যেভাবে পেরেছে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে এসব ভাস্কর্য নির্মাণ করেছে। এতে করে ৯০ শতাংশ ভাস্কর্য নির্মাণে অনিয়ম হয়েছে। যাঁরা এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ তাঁদের কাছ থেকেও কোনো ধরনের মতামত নেওয়া হয়নি।’

দোলাইরপারের ভাস্কর্যটির নির্মাণকাজ এখনো শেষ হয়নি

সাড়ে তিন বছর আগে নির্মাণকাজ বন্ধ হওয়ার পর রাজধানীর দোলাইরপার সড়ক দ্বীপে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনের কাজ নতুন করে শুরু হয়নি। সেখানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন করা হবে কি না এ নিয়ে অস্পষ্টতা এখনো দূর হয়নি। সড়ক বিভাগের পরিকল্পনা ছিল পদ্মা সেতু পেরিয়ে রাজধানীতে প্রবেশের পথেই চোখে পড়বে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাস্কর্যটির নির্মাণকাজ শুরু করে সড়ক বিভাগ। লক্ষ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর বছরই ভাস্কর্যটি উন্মুক্ত করা হবে।

তবে ইসলামপন্থী কয়েকটি রাজনৈতিক দলের বিরোধিতার মধ্যে ওই কাজ আর শেষ করা যায়নি। ২০২০ সালের নভেম্বরে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন এবং পরে হেফাজতে ইসলামের বিরোধিতার কারণে কাজটি বন্ধ রয়েছে। রাজধানীর বিজয় সরণিতে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ‘মৃত্যুঞ্জয়ী’ গত বছর নভেম্বরে উদ্বোধন করা হয়। তবে গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের দিন ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলে ছাত্র-জনতা।

দেশজুড়ে বঙ্গবন্ধুর সহস্রাধিক ভাস্কর্য

সূত্র জানায়, দেশজুড়ে বঙ্গবন্ধুর সহস্রাধিক ভাস্কর্য ও ম্যুরাল নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য খুলনা বিভাগে ২১টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ১২টি, ঢাকা বিভাগে ৪১টি, বরিশাল বিভাগে তিনটি, ময়মনসিংহ বিভাগে পাঁচটি, রংপুর বিভাগে চারটি, রাজশাহী বিভাগে ৯টি, সিলেট বিভাগে একটি এবং বহির্বিশ্বে চারটি।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের নামে সরকারের ব্যয় হয়েছে কয়েক শ কোটি টাকা। কিন্তু মানহীন ভাস্কর্য নির্মাণ করে সরকারের বিপুল টাকা লোপাট করা হয়েছে। ভাস্কর্য অনেক ব্যয়বহুল শিল্পমাধ্যম। মানসম্পন্ন না হলেও আওয়ামী লীগ সরকার সহযোগিতা করায় বঙ্গবন্ধুর অনেক ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে।

 

সংবাদদাতা/ ইলিয়াস

Facebook
WhatsApp
Twitter

এ সম্পর্কিত আরো খবর

সম্পাদকঃ

সুভাষ সাহা

যুগ্ন সম্পাদকঃ

কাজী কবির হোসেন

ঠিকানাঃ

নারায়ণগঞ্জ অফিসঃ
পদ্মা সিটি প্লাজা, কক্ষ নংঃ ২২২, ৫৫/বি
এস, এম মালেহ রোড, টানবাজার
নারায়ণগঞ্জ-১৪০০

যোগাযোগ

ফোনঃ ৭৬৪০৬৯৯
মোবাইলঃ ০১৭১১৫৬১৩৯০
ইমেইলঃ bisherbashi.com.bd@gmail.com

USA OFFICE:

Wasington DC Bureau Chief:
Dastagir Jahangir,
3621 Columbia Pike Suit #104
Arlington USA, VA
22204
Phone: 7036770679
Email: tugrilcz@gmail.com

 

Website Design & Developed By
MD Fahim Haque
<Power Coder/>
www.mdfahim.com
Web Solution – Since 2009

error: Content is protected !!