আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ সোমবার, ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২২শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, দুপুর ২:০৪
আন্তঃসীমান্ত নদীতে বাংলাদেশের অধিকার

আন্তঃসীমান্ত নদীতে বাংলাদেশের অধিকার

প্রকাশিতঃ

অনলাইন ডেস্ক : আন্তঃসীমান্ত নদী বলতে সাধারণত সেই সমস্ত নদীকে বোঝায়, যেগুলো অন্তত এক বা একাধিক দেশের রাজনৈতিক সীমা অতিক্রম করে। এই সীমা একটি দেশের অভ্যন্তর অর্থাৎ প্রদেশগত বা আন্তর্জাতিক দুই-ই হতে পারে। বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী প্রায় ২৬০টি আন্তঃসীমান্ত নদী রয়েছে। বঙ্গোপসাগরের উপকূলে দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশে আন্তঃসীমান্ত নদীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত এবং মিয়ানমার থেকে ৫৭টি মতান্তরে ৫৮টি বা আরও অধিক নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

জলতাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক উভয় দিক থেকেই এ আন্তঃসীমান্ত নদীগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে যেমন নদীগুলো প্রচুর পরিমাণে পলি বহন করে এনে মোহনা এলাকায় নতুন নতুন ভূমি গঠন করছে, আবার এ পলির অংশবিশেষ নদীর তলদেশ ভরাট করে তুলছে; যা বন্যা সংঘটনের জন্য অনেকাংশে দায়ী। এ নদীগুলোর উজান অঞ্চলের রাষ্ট্র দুটির সঙ্গে অনেক সময়ই নদীর পানি বণ্টনে আন্তর্জাতিক রীতি প্রয়োগ না হওয়ায় দুর্যোগ ও রাজনৈতিক সমস্যার ঘনঘটা হয়। বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে ৫৫টি আন্তঃসীমান্ত নদী রয়েছে, যার মধ্যে কেবল গঙ্গা নদীর পানি বণ্টনের চুক্তি হয়েছে দু’দেশের মাঝে। ভারতের সঙ্গে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তির খসড়া হয়েছে, কিন্তু তা আলোর মুখ দেখেনি।

গঙ্গা চুক্তি নবায়ন ও তিস্তা চুক্তি প্রয়োজন 
‘বাংলাদেশ-ভারত গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি’ স্বাক্ষরিত হয় ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর। প্রতিবছর ৩১ জানুয়ারি হতে ৩১ মে এই সময়ে ফারাক্কায় প্রবাহিত পানির পরিমাপের ভিত্তিতে দুটি দেশের মধ্যে পানি বণ্টন হবে বলে নির্ধারণ করা হয়। পূর্ববর্তী ৪০ বছরের গড় মাত্রা অনুযায়ী ভারত গঙ্গার পানির ভাগ পেতে থাকে। তবে সংকটের সময় বাংলাদেশকে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি সরবরাহ করার গ্যারান্টি রয়েছে। ৩০ বছর মেয়াদি এ চুক্তি ২০২৬ সালে দুটি দেশের সম্মতির পরিপ্রেক্ষিতে নবায়নের কথা।

উল্লেখ্য, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলায় গঙ্গা নদীর ওপর ১৯৬১ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত নির্মিত হয় সোয়া ২ কিলোমিটার লম্বা ফারাক্কা ব্যারাজ। এখান থেকে ভাগীরথী-হুগলি নদী পর্যন্ত ফিডার খালটির দৈর্ঘ্য ৪০ কিমি। তৎকালীন বিভিন্ন সমীক্ষায় বিশেষজ্ঞরা অভিমত প্রকাশ করেন যে গঙ্গা-পদ্মার মতো বিশাল নদীর গতি বাঁধ দিয়ে বিঘ্নিত করলে নদীর উজান এবং ভাটি উভয় অঞ্চলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য মারাত্মকভাবে নষ্ট হতে পারে। তা সত্ত্বেও ফারাক্কা ব্যারাজটি নির্মাণ করা হয়। এর প্রভাবে বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বিহার রাজ্যে ব্যাপক পরিবেশ বিপর্যয় নেমে আসে।

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে রংপুর বিভাগের মধ্য দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করা সিকিমে উৎপন্ন তিস্তা নদী বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম নদী। তিস্তার প্লাবনভূমি ২ হাজার ৭৫০ বর্গকিলোমিটার জুড়ে বিস্তীর্ণ। লাখ লাখ মানুষ কৃষি, খাদ্য উৎপাদন, মাছ ধরা এবং গৃহস্থালি দৈনন্দিন পানির চাহিদা ও জীবিকা নির্বাহের জন্য তিস্তা নদীর ওপর নির্ভর করে। এ নদীতেও উজানে পশ্চিমবঙ্গ এবং সিকিমে বাঁধ, ব্যারাজ, জলবিদ্যুৎসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এই অবকাঠামোগুলো তিস্তার উজানে পানির চাহিদা পূরণ করছে। কিন্তু তা ভাটিতে বাংলাদেশ অংশে তিস্তা নদীতে পানির প্রাপ্যতা দারুণভাবে হ্রাস করেছে।

ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় দেখা যায়, তিস্তায় পানির ঘাটতির কারণে প্রতিবছর প্রায় ১৫ লাখ টন বোরো ধান উৎপাদন থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হয়। এটা দেশের মোট ধান উৎপাদনের প্রায় ৯ শতাংশের সমান। গবেষণায় আরও ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, এ ক্ষতি ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ১৪ শতাংশ হতে পারে।

তিস্তা অববাহিকায় পানির ঘাটতির কারণে কৃষকরা ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করে জমিতে সেচ দিচ্ছে। এতে করে কৃষকদের সেচের খরচ অনেক গুণ বেড়ে গেছে এবং কৃষিব্যবস্থাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে যে উত্তরাঞ্চলের খাল-বিল, পুকুর, জলাশয় শুকিয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, এর সঙ্গে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় পানি না থাকার সম্পর্ক রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থা চলতে থাকলে তা ভবিষ্যতে পুড়ো উত্তরাঞ্চলের পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।

তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিন আলাপ-আলোচনার পর স্বাক্ষরের জন্য চুক্তির একটি খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী শুষ্ক মৌসুমে তিস্তার পানির ৩৭ দশমিক ৫ ভাগ বাংলাদেশের এবং ৪২ দশমিক ৫ ভাগ ভারতের পাওয়ার কথা ছিল। বাকি ২০ ভাগ থাকবে নদীর পরিবেশ রক্ষার উদ্দেশ্যে। ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় তিস্তার পানি নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষরের কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়নি। এরপর নরেন্দ্র মোদির সরকার তিস্তার পানি চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে একাধিকবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবুও এক দশকের বেশি সময় ধরে বিষয়টি অমীমাংসিত রয়ে গেছে।

সাম্প্রতিক বন্যা

গত আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহের মাঝামাঝি  অকস্মাৎ ভয়াবহ বন্যায় ভেসে যায় বাংলাদেশের ১২টি জেলা। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, কক্সবাজার, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের অন্তত ৫০ লাখ মানুষ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী এ বন্যায় ১৯ শিশুসহ ৭১ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভারত সরকার অস্বীকার করলেও বাংলাদেশের  বিশেষত কুমিল্লা অঞ্চলের বন্যার জন্য অনেকে ত্রিপুরার গোমতী নদীর ডুম্বুর ড্যামের কপাট খোলাকে দায়ী করেন।

বাংলাদেশের অধিকার, অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগ 

এবারের বন্যার মধ্যেই ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বন্যা মোকাবিলায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি উচ্চতর কমিটি গঠন করার প্রস্তাব করেন। অতি সম্প্রতি ভারতীয় সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া-পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও প্রধান উপদেষ্টা আন্তঃসীমান্ত নদী নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের পানি বণ্টনের বিষয়টি অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী হতে হবে। বাংলাদেশের মতো ভাটির দেশগুলোর হিস্যা সমুন্নত রাখার সুনির্দিষ্ট অধিকার রয়েছে।’

শান্তিপূর্ণ আন্তঃসীমান্ত নদী ব্যবস্থাপনা 

ইউরোপ মহাদেশের নিবিড় সীমান্তের দেশগুলো তাদের আন্তঃসীমান্ত নদীর ন্যায্য পানি বণ্টন নিশ্চিত করেছে। নিজেরা করেছে, প্রয়োজনে জাতিসংঘের ইউরোপভিত্তিক সংস্থা ইউএনইসিইর সহায়তা নিয়েছে। গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনার পানির ন্যায্য হিস্যা সবার জন্য নিশ্চিত করতে আমরাও পারি একই পথ অনুসরণ করতে। এ জন্য সারাদেশকে জাগিয়ে তুলতে হবে, এগিয়ে আসতে হবে বোদ্ধা-গবেষক-কর্মী-সংগঠকসহ প্রতিটি মানুষকে। ২০০৪ সাল থেকে নদী ও পরিবেশ সংরক্ষণের দাবিতে আন্দোলনরত সংগঠন ‘নোঙর’ মনে করে দেশের মানুষ তাদের অধিকার সম্পর্কে যত সচেতন হবে, ততই তারা জাতিগতভাবে উন্নতির পথে এগিয়ে যাবে। দেশের জন্য নিয়ে আসতে পারবে নদীজলের অধিকার।

 

সংবাদদাতা/ ইলিয়াস

Facebook
WhatsApp
Twitter

এ সম্পর্কিত আরো খবর

সম্পাদকঃ

সুভাষ সাহা

যুগ্ন সম্পাদকঃ

কাজী কবির হোসেন

ঠিকানাঃ

নারায়ণগঞ্জ অফিসঃ
পদ্মা সিটি প্লাজা, কক্ষ নংঃ ২২২, ৫৫/বি
এস, এম মালেহ রোড, টানবাজার
নারায়ণগঞ্জ-১৪০০

যোগাযোগ

ফোনঃ ৭৬৪০৬৯৯
মোবাইলঃ ০১৭১১৫৬১৩৯০
ইমেইলঃ bisherbashi.com.bd@gmail.com

USA OFFICE:

Wasington DC Bureau Chief:
Dastagir Jahangir,
3621 Columbia Pike Suit #104
Arlington USA, VA
22204
Phone: 7036770679
Email: tugrilcz@gmail.com

 

Website Design & Developed By
MD Fahim Haque
<Power Coder/>
www.mdfahim.com
Web Solution – Since 2009

error: Content is protected !!