আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ বুধবার, ২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২৪শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, সকাল ৬:২৬
কুইক রেন্টালের ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বিলিয়ন ডলার পাচার!

কুইক রেন্টালের ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বিলিয়ন ডলার পাচার!

প্রকাশিতঃ
অনলাইন ডেস্ক : রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জের নামে আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দেশের বাইরে পাচার করেছে। আর এ কাজটি করেছেন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব আহমদ কায়কাউসসহ বিদ্যুৎ বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সিন্ডিকেট।

এ সিন্ডিকেট বিশেষ আইনে, বিনা দরপত্রে প্রতিযোগিতা ছাড়াই তৎকালীন সরকারের ঘনিষ্ঠ ও আওয়ামী সমর্থক ব্যবসায়ীদের রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের সুবিধা দেয়। বছরের পর বছর এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো গড়ে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ চালানো হলেও ক্যাপাসিটি চার্জের নামে এগুলোর মালিকরা হাজার হাজার কোটি টাকা পকেটে ভরেন। ক্যাপাসিটি চার্জের টাকায় ফুলে-ফেঁপে ওঠা এই বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীরা বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশের বাইরে পাচার করে দেন।

যারা এ কাজে তাদের সহযোগিতা করেন সেই সিন্ডিকেটের প্রভাবশালীরাও বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশের বাইরে পাচার করে দিয়েছেন। এ প্রেক্ষাপটে দুর্নীতি দমন কমিশন এরই মধ্যে সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের দুর্নীতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য বলছে, ক্যাপাসিটি চার্জের বিলের নামে গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীদের ১ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে।

যার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ তৎকালীন সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগের নীতিনির্ধারক এবং সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের পকেটে চলে যায়। ঠিক কী পরিমাণ অর্থ এখন পর্যন্ত এ কাজে বিদেশে পাচার হয়েছে এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ বাংলাদেশ থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ হচ্ছে আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড।
কিন্তু এত দিন আওয়ামী লীগ সরকার তাদের প্রিয় লোকদের আবদার পূরণে বিদ্যুৎ না নিয়েও ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়েছে। এর বিনিময়ে তৎকালীন সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তদের সুবিধাভোগী বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীরা অর্থ সুবিধা দিয়েছেন। তাদের মতে, বিদ্যুৎ দেওয়া ছাড়াই ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বিল নেওয়ার মতো মারাত্মক অনিয়ম আর কিছু নেই।  ক্যাপাসিটি চার্জের নামে যে বিপুল পরিামণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে গেছে তা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ, এ টাকা দেশের নাগরিকদের।
তারা আরও বলেন, কোনো ধরনের টেন্ডার ছাড়া এসব রেন্টাল আর কুইক রেন্টালের লাইসেন্স তুলে দেওয়া হয় দেশের প্রভাবশালী কোম্পানিগুলোর কাছে। এর মধ্যে ছিল সামিট গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, ইউনাইটেড গ্রুপ, কনফিডেন্স গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, সিকদার গ্রুপ, ইউনিক গ্রুপ, বারাকাসহ অন্যান্য কোম্পানি। মূলত আওয়ামী লীগ সরকার বিনা টেন্ডারে দায়মুক্তি আইনের আওতায় একসময়ে উচ্চমূল্যের রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অনুমোদন দিয়েছিল। ২০১০ সালে বলা হয়েছিল, এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র আপৎকালীন চাহিদা মেটানোর জন্য। কিন্তু গত দেড় দশকেও এগুলো আর বন্ধ করা যায়নি।পাওয়ার সেলের সাবেক ডিজি বিডি রহমতুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শেখ হাসিনা ছিলেন তৎকালীন সরকারের বিদ্যুৎ মন্ত্রী আর নসরুল হামিদ বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী। গত কয়েকটি মেয়াদে তারা এ মন্ত্রণালয় হাতছাড়া করেননি। কারণ, এ মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রচুর টাকা বরাদ্দ হয়। আর এ টাকার ভাগ শেখ হাসিনা ও নসরুল হামিদ যেভাবেই হোক বিদেশে পাচার করে দিয়েছেন। দেশের অ্যাকাউন্টে তারা এ অর্থ রাখেননি। তারা বেশির ভাগ অর্থই বিদেশে পাচার করে দিয়েছেন।

একইভাবে সামিট গ্রুপের আজিজ খানের মতো ব্যবসায়ী যারা এসব ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে সুবিধা নিয়েছেন তারাও সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় এ বিপুল অর্থ পাচার করে দিয়েছেন। এর সঙ্গে আরও জড়িত ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা, পিডিবির শীর্ষ কর্মকর্তারাও। এ ছাড়া যে বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীরা জেনেশুনে এ অবৈধ কাজ করেছেন তাদের উৎসাহেই শেখ হাসিনা ও নসরুল হামিদরা দুর্নীতি করেছেন।  এজন্য এই দুর্নীতিমূলক কর্মকান্ডে এ ব্যবসায়ীরাও সমানভাবে দায়ী। এদের অনেকেই এখন পলাতক। তারা অন্যায় করেছেন বলেই পালিয়ে গেছেন, তারা অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে লুট করে এ অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন, নিশ্চয়ই তারা ধরাও পড়বেন। আমি আশঙ্কা করছি, ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে।

বিল পরিশোধ হয় ডলারে : ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)-কে যে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে এ বিলের পুরোটাই ডলারে দিতে হয়েছে। রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে ডলারেই ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে। রেন্টাল-কুইক রেন্টালের পর বেসরকারি খাতে বেশকিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়। ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার (আইপিপি) নামক এসব কেন্দ্রের ক্যাপসিটি চার্জ সরাসরি ডলারে পরিশোধ করা হয় না।

তবে আইপিপিগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ ডলারের বিনিময় হার ধরে টাকায় পরিশোধ করতে হয়। এক্ষেত্রে বিনিময় হার নির্ধারিত হয় সোনালী ব্যাংকের বিনিময় হারে। ফলে সরাসরি ডলার না পেলেও বিপুল পরিমাণ অর্থ এখানে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ দিতে হয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে টাকার অবমূল্যায়নে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধের ব্যয়ও বেড়ে গেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, অসাধু ব্যবসায়ীরা ডলারে পাওয়া এই বিল বিদেশে পাচার করে দিয়েছেন।

যেভাবে দুর্নীতি : দেশে ক্যাপাসিটি চার্জ নির্ধারণে নির্দিষ্ট কোনো পদ্ধতি নেই। তবে ক্যাপাসিটি চার্জের হার নির্ধারণে বিভিন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে জড়িত উদ্যোক্তাদের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে দরকষাকষির ভিত্তিতে বছরভিত্তিক ক্যাপাসিটি চার্জ নির্ধারণ করা হয়। কোনো ধরনের দরপত্র ছাড়া সরাসরি লাইসেন্স দেওয়ায় এমনিতেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর নির্মাণ ব্যয় অনেক বেশি ধরা হয়েছে। ফলে ক্যাপাসিটি চার্জের হারও অনেক বেশি। তবে এসব কেন্দ্রের চুক্তি বারবার নবায়ন করে ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়ে তাদের মূলধনি ব্যয়ের কয়েকগুণ অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে।

এ সুযোগে বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানিগুলো সব ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল কেন্দ্রগুলো একাধিকবার সরকারের কাছে বিক্রি করেছেন মালিকরা। ক্যাপাসিটি চার্জের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে বেশ কিছু কোম্পানি। অন্যদিকে শুরুতে তিন বছর মেয়াদে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হলেও দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে এগুলোর মেয়াদ।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, এসব কেন্দ্রের মোট বিনিয়োগের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বিনিয়োগকারী দেয়, বাকিটা ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে মেটানো হয়। পিডিবি তথা সরকার সুদসহ সেই ঋণ (চুক্তি অনুযায়ী) তিন বছরে শোধ করে দেয়। পাশাপাশি ইক্যুইটি ইনভেস্টমেন্টের ওপর দেওয়া হয় মুনাফা (রিটার্ন অব ইক্যুইটি)। সরকার বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ ব্যয় শোধ করে দিলেও বিদ্যুৎ কেন্দ্রটা ওই কোম্পানিরই রয়ে যায়। পরে মেয়াদ বাড়ানো হলেও একই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিপরীতে ফের নির্মাণ ব্যয় পরিশোধ করা হয়। তা আগের চেয়ে কিছুটা কম। এভাবেই রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের মাধ্যমে লুটপাট করা হয়।

নসরুল হামিদের দুর্নীতি

সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরসহ কয়েকটি দেশে। অভিযোগ আছে, বিদ্যুৎ খাত থেকে হরিলুট করে এই বিপুল পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার করেছেন তিনি। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদ্যুৎ খাতে হরিলুটের অন্যতম উৎস ছিল কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। তখন বিনা টেন্ডারে প্রয়োজনের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অনুমোদন দেওয়া হয়। এসব উচ্চমূল্যের বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসিয়ে রেখে চুক্তি অনুযায়ী বছরের পর বছর সরকারকে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা।

এর সিংহভাগই গেছে নসরুল হামিদ ও জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পকেটে। এরই মধ্যে এ ব্যাপারে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসছে বিদেশে বিপুল অর্থ পাচার এবং সে টাকায় বিলাসবহুল বাড়িসহ নানা সম্পদ কেনার তথ্য। দুদকের তদন্ত সংশ্লিষ্ট তথ্য বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি কোম্পানি খুলে সেই কোম্পানির মাধ্যমে নসরুল হামিদের হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগও পাওয়া গেছে। এ কোম্পানি প্রতিষ্ঠাকালে নসরুল হামিদ তার নিজের যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় অবস্থিত বাসভবনের ঠিকানা ব্যবহার করেন। পাঁচ বেডরুমের এই বাসার বাজারমূল্য ৩৬ লাখ ১৭ হাজার ৪১৫ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি টাকায় এর মূল্য ৪২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।

যুক্তরাষ্ট্রে শরীফ হায়দার নামে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে নসরুল হামিদ তার স্ত্রী সীমা হামিদকে নিয়ে ‘পথ ফাইন্ডার ইন্টারন্যাশনাল’ নামে একটি ট্রেড করপোরেশনের লাইসেন্স নেন। এই করপোরেশনের আওতায় মবিল গ্যাস স্টেশনসহ দেড় ডজনের মতো ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ফ্লোরিডায় অবস্থিত ওই গ্যাস স্টেশনটি কেনা হয় কয়েক মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়ে। শরীফ হায়দারের মাধ্যমেই হাজার কোটি টাকা যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেন নসরুল হামিদ। ২০১৪ সালে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সরাসরি দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন নসরুল হামিদ। টানা ১০ বছর ধরে তিনি এই দায়িত্বে ছিলেন। বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীরা বলছেন, নসরুল হামিদ দেশে কোনো লেনদেন করতেন না। তার অধিকাংশ টাকা বিদেশে লেনদেন হতো।

দুর্নীতিতে জড়িত যে সিন্ডিকেট 

বিদ্যুৎ খাতের অপকর্মের নেতৃত্বে ছিলেন নসরুল হামিদ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বসে এসব অপকর্মকে নির্বিঘ্ন করতে কলকাঠি নাড়তেন বিদ্যুৎ খাতের শীর্ষ কর্মকর্তারা। এ সিন্ডিকেট একের পর এক রেন্টাল-কুইক রেন্টাল প্রকল্প হাতে নেয়। বিনা টেন্ডারে সরকারের ঘনিষ্ঠ বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীদের এসব প্রকল্প থেকে হাজার হাজার টাকা আয়ের সুযোগ করে দেওয়া হয়। এর বিনিময়ে সুবিধাভোগী এসব কোম্পানিকে নিজেদের পাশাপাশি শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে এই সিন্ডিকেট।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সচিব থাকাকালে আহমদ কায়কাউসের নেতৃত্বে বিদ্যুৎ খাতের সব উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন মন্ত্রণালয়ে নিয়ে আসতে বাধ্য করা হয়। এরপর তার রুমে চলত কমিশন বাণিজ্য। এই সিন্ডিকেট এভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দেয়। পিডিবির সাবেক চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ দায়িত্ব পান রেন্টাল, কুইক রেন্টাল থেকে প্রতি মাসে মাসোয়ারা আদায় করার। বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর অনুমোদন দেওয়া এবং এগুলোর অনিয়ম তদন্তের কাজ ছিল তার ওপর। এভাবে তিনি ব্ল্যাকমেল করে নসরুল হামিদের জন্য প্রতি মাসে শত শত কোটি টাকার ব্যবস্থা করে দিতেন।

ক্যাপাসিটি চার্জের শীর্ষে সামিট 

বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে প্রতি বছর সরকারের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পায় সামিট গ্রুপ। সরকার ঘনিষ্ঠ এই গ্রুপ গোপালগঞ্জ-১ আসনের আওয়ামী লীগের টানা ছয়বারের এমপি ও সাবেক বিমানমন্ত্রী ফারুক খানদের পারিবারিক ব্যবসা। বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যে, দেশে আইপিপিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়েছে সামিট গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো। ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত সামিট গ্রুপকে ৪ হাজার ৪০৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা শুধু ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে পরিশোধ করা হয়েছে। এটি পরিশোধিত মোট ক্যাপাসিটি চার্জের প্রায় ১২ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

সামিটের হাত ধরেই দেশে প্রথম আইপিপি স্থাপিত হয়। এ গ্রুপই বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের দেওয়া সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার প্রধান সুবিধাভোগী। প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশি আইপিপিগুলোর স্থাপিত সক্ষমতার প্রায় ২১ শতাংশই সামিটের। কোনো প্রতিযোগিতা ছাড়া রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় একের পর এক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়া, বিশেষ আইনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহের নামে হাজার কোটি টাকা পাচার করে সামিট। সামিট গ্রুপকে অসম সুযোগ-সুবিধা দিতে মোটা অঙ্কের অর্থ নেন সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা এবং সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী।

শেখ হাসিনার আমলে ব্যবসা করে দেশের প্রথম শত হাজার কোটি টাকার মালিক হন সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান। এমনকি সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ধনীদের তালিকায় আছে তার নাম। বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগ আছে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার। যা বিদ্যুৎ খাতে সর্বোচ্চ বেসরকারি বিনিয়োগ। আইনি ইনডেমনিটি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের অনুকূল চুক্তির সুবাদে ক্যাপাসিটি চার্জ ও বিক্রয়মূল্যসহ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পাওয়া আয়ই হয়ে উঠেছে সামিট গ্রুপের ব্যবসার বড় ভিত্তি।

 

সংবাদদাতা/ ইলিয়াস

Facebook
WhatsApp
Twitter

এ সম্পর্কিত আরো খবর

সম্পাদকঃ

সুভাষ সাহা

যুগ্ন সম্পাদকঃ

কাজী কবির হোসেন

ঠিকানাঃ

নারায়ণগঞ্জ অফিসঃ
পদ্মা সিটি প্লাজা, কক্ষ নংঃ ২২২, ৫৫/বি
এস, এম মালেহ রোড, টানবাজার
নারায়ণগঞ্জ-১৪০০

যোগাযোগ

ফোনঃ ৭৬৪০৬৯৯
মোবাইলঃ ০১৭১১৫৬১৩৯০
ইমেইলঃ bisherbashi.com.bd@gmail.com

USA OFFICE:

Wasington DC Bureau Chief:
Dastagir Jahangir,
3621 Columbia Pike Suit #104
Arlington USA, VA
22204
Phone: 7036770679
Email: tugrilcz@gmail.com

 

Website Design & Developed By
MD Fahim Haque
<Power Coder/>
www.mdfahim.com
Web Solution – Since 2009

error: Content is protected !!