MENU

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ বৃহস্পতিবার, ১৭ই অক্টোবর, ২০২৪ ইং
  • ২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ১৩ই রবিউস-সানি, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, সকাল ১১:৩৬
Search
Close this search box.
বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন সত্যি হোক

বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন সত্যি হোক

প্রকাশিতঃ
অনলাইন ডেস্ক : পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমরা এখন নতুন অভিজ্ঞতা পাচ্ছি, যা কিছুদিন আগেও ছিল কল্পনা। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি পরবর্তী সময়ে বিপ্লবে পরিণত হয় এবং এর ফল সবার জানা। তাদের মূল দাবি ছিল সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার করা। এর মধ্যে প্রধান ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা, যা কোনো যুক্তিতেই গ্রহণযোগ্য ছিল না।

১৯৭২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে দেশে জনমিতিক পরিবর্তন হয়েছে, শিক্ষিত তরুণ-তরুণীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে, আর কমেছে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা। অথচ কোটার ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন না হওয়া শুধু হতাশার নয়, এটা অধিকার হরণের মাধ্যম হয়েছিল এবং মানুষের সাংবিধানিক অধিকারের বিপরীত ছিল। শিক্ষার্থীদের চাওয়া ছিল কোটার যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য সংস্কার করা। যদিও ২০১৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিল করেছিলেন, কিন্তু সম্প্রতি আদালতের এক রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের ছাত্রসমাজ আবার রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়।
মজার বিষয় হলো, আদালত কোটা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নিলেও কোনো কিছু আর ছাত্রসমাজকে দমাতে পারেনি। দুঃখ এখানেই, সেই সবই হলো, কিন্তু কত তাজা প্রাণ চলে গেল, কত মায়ের বুক খালি হলো, কত সন্তান এতিম হলো। তাদের সবার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা রইল। জাতি তাদের বীরত্বপূর্ণ ত্যাগের কথা ভুলে যাবে না। পরিবর্তিত পরিস্থিতিযে কোটা নিয়ে এত কিছু হয়েছে, এর সমাধান আদালতই দিয়েছেন। এখন মাত্র ৭ শতাংশ কোটা রয়েছে, বাকিটা হবে মেধার ভিত্তিতে। খুব ভালো সিদ্ধান্ত, কিন্তু এখানে আরো কিছু বিষয় আছে, যা এখন বিবেচনায় নেওয়ার সবচেয়ে ভালো সময়। কেননা শুধু কোটা সংস্কার করেই যদি ভাবা হয় সরকারি চাকরিতে বৈষম্য শেষ, তাহলে প্রকৃত সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য থেকে যাবে বলেই মনে করি।
বিসিএস পরীক্ষা হচ্ছে সরকারি চাকরি পাওয়ার মাধ্যম। এর মাধ্যমে কারিগরি ও সাধারণ ক্যাডার এবং নন-ক্যাডার পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এখানে একটা কথা বলে রাখা ভালো যে সাধারণ ক্যাডারে যে কেউ আবেদন করতে পারলেও কারিগরিতে শুধু নির্দিষ্ট যোগ্যতাসম্পন্নরাই আবেদন করতে পারেন। যে কারণে সাধারণ ক্যাডারে আবেদনের সংখ্যা অনেক বেশি এবং স্বাভাবিকভাবে প্রতিযোগিতাও বেশি হয়। বিপরীতে কারিগরি ক্যাডারে পদের সংখ্যা কম থাকলেও আবেদনও কম থাকে।

আমাদের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় দেখা যায়, মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়ন করে বা তাঁদের অভিভাবকরাও তাই চান। সেই শিক্ষার্থীরা পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় বা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রেও ভালো করেন এবং বেশির ভাগ নিজেদের পছন্দের বিষয় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে ডিগ্রি নেন। বিশেষ করে যাঁরা প্রকৌশল, কৃষি বা চিকিৎসা বিষয়ে অধ্যয়ন করেন, তাঁদের জন্য কারিগরি ক্যাডারে চাকরি পাওয়ার সুযোগ থাকে। বিপরীতে যাঁরা এর বাইরের বিষয়ে ডিগ্রি নেন, তাঁদের জন্য শিক্ষা ক্যাডার বা সাধারণ ক্যাডারই ভরসা থাকে।

বিগত অনেক বছর ধরে লক্ষ করা যাচ্ছে, প্রশাসন ক্যাডারে বিভিন্ন কারিগরি বিষয়ে ডিগ্রিধারীরা যোগ দিচ্ছেন। আইন বা নিয়মের হিসেবে এটা কোনো অন্যায় নয়, কিন্তু যৌক্তিকভাবে ব্যাখ্যা করলে এর ভিন্ন অর্থ রয়েছে। সরকারি মেডিক্যাল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারকে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়, যার বড় অংশ ব্যয় হয় কারিগরি শিক্ষার্থীদের জন্য। রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য হচ্ছে বিভিন্ন কারিগরি পদে উপযুক্ত লোকবল তৈরি করা, যাঁরা দেশকে সেবা দেওয়ার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখবেন। বিশেষ করে চিকিৎসক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদসহ কিছু পদের জন্য রাষ্ট্রের প্রয়োজন অনেক বেশি এবং সে জন্য ভর্তুকিও অনেক। সব দেশই চায় নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী পেশাদার জনগোষ্ঠী তৈরি করতে, যাতে মানুষ সেবা পায়।

দুর্ভাগ্য যে রাষ্ট্র এত অর্থ ব্যয় করে যোগ্য লোকবল তৈরি করলেও তাঁদের সবার কাছ থেকে আমরা সেবা নিতে পারি না। তাঁদের একাংশ দেশের বাইরে চলে যান, অনেকে নিজের মতো করে কর্মসংস্থান করে নেন। কিংবা নিজের পেশার বদলে প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেন। যদি বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পছন্দের ক্যাডার নিয়ে তাঁদের আবেদনপত্র যাচাই করা হয়, তাহলে আমি নিশ্চিত যে বেশির ভাগেরই পছন্দের তালিকায় প্রশাসন, পুলিশ, করসহ কিছু ক্যাডার থাকবে। আমি তাঁদের যোগ্যতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন করছি না, বরং কৌতূহল হলো এর কারণ নিয়ে। নিশ্চয় ওই ক্যাডারগুলোতে এমন কিছু আছে যা সবাইকে উৎসাহিত করছে।

আজ আমরা দুর্নীতি নিয়ে নিয়মিত সংবাদ পাই এবং দেখা যায় কিছু ক্যাডার সার্ভিসে এর প্রভাব অন্যদের চেয়ে অনেক অনেক বেশি। আবার এ ক্যাডারগুলোতে যেভাবে বৈধ বা অবৈধ ক্ষমতা চর্চা করা গেছে, তা-ও হয়ত অনেকের কাছে আকর্ষণীয় হতে পারে। এর সঙ্গে সুযোগ-সুবিধার বিষয়টিও আছে। অর্থাৎ আমাদের ক্যাডারগুলোর মধ্যেও কোটাবৈষম্য রয়েছে। আর এভাবেই অনেকেই নজিরবিহীন দুর্নীতির মাধ্যমে বেগমপাড়াসহ বিদেশের বাসিন্দা হয়েছেন। কিংবা দেশে তাঁদের রয়েছে অঢেল সম্পত্তি, যার একাংশ গৃহিণী ও শিক্ষার্থী সন্তানদের নামে, যাদের দৃশ্যমান কোনো আয় নেই। তাই বিসিএস পরীক্ষায় কিছু পরিবর্তন এখন সময়ের দাবি।

প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্ন নিয়েও অনেকের ভিন্নমত আছে। যে শিক্ষার্থী মানবিকে অধ্যয়ন করেছেন, তাঁর জন্য গণিত ও বিজ্ঞানের উত্তর দেওয়া বেশ কঠিন। ফলে পরীক্ষার্থীরা কোচিং ও গাইড নির্ভর হচ্ছেন, যা দিয়ে মেধা যাচাই করা কতটুকু সম্ভব? বরং কিছু বিষয় সবার জন্য বাধ্যতামূলক রেখে কিছু বিষয় তাঁদের পছন্দের বা অধীত বিষয়ের মধ্যে থাকা উচিত। একই সঙ্গে প্রশ্নগুলোর ধরন ও মান যেন তাদের মেধা যাচাইয়ের জন্য হয়, তাদের সীমাবদ্ধতা যাচাই করার জন্য নয়।

কারিগরি বিষয়ে ডিগ্রিধারীদের সাধারণ ক্যাডারে নিয়োগের বিধান বন্ধ করা জরুরি। চিকিৎসক বা প্রকৌশলী যদি প্রশাসন, পুলিশ বা অন্যান্য সাধারণ ক্যাডারে আবেদন করেন, তাহলে রাষ্ট্রের তাঁদের জন্য ব্যয়িত অর্থের অপচয় ছাড়া কিছুই হয় না। যদি কারিগরি পদে প্রার্থীর সংখ্যার তুলনায় উপযোগী পদের সংখ্যা অনেক কম হয়, শুধু তখন আনুপাতিক হার নির্ধারণ করে তাঁদের নিয়োগের সুযোগ থাকতে পারে। এমনকি পরবর্তী সময়ে পদ সৃষ্টি বা খালি হলে সিনিয়রিটি বজায় রেখে সেখানে পদায়নের নিয়মও করা যেতে পারে।

পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে যে বাণিজ্য আর বৈষম্য তৈরি হয়েছে তা বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে। কী কী বিষয় যাচাই করে পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থা প্রতিবেদন দেবে তা পিএসসি ঠিক করে দেবে। অবশ্যই প্রার্থী বা তার পরিবারের রাজনৈতিক পরিচয় সেখানে বিবেচ্য হবে না। এমনকি কারো ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রতিবেদন এলে তা সংশ্লিষ্ট প্রার্থী জানার এবং এর বিপরীতে তাঁর বক্তব্য প্রদানের সুযোগ থাকা দরকার। যাঁরা চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হবেন, ভবিষ্যতের দুর্নীতি রোধে অবশ্যই তাঁদের আয় বা সম্পত্তির হিসাব জমা দেওয়ার বিধান বাধ্যতামূলক করতে হবে, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর সম্পদের হিসাবও নিতে হবে।

দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যোগ্য শিক্ষকদের নিয়ে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার জন্য শিক্ষক প্যানেল তৈরি করা দরকার, নির্দিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা শিক্ষকদের দিয়ে নয়। তাঁদের মধ্য থেকে প্রতিবছর নতুন নতুন পরীক্ষক রাখার বিধান করাও জরুরি, যাতে একই ব্যক্তি বারবার পরীক্ষক না হন। যাঁরা প্রত্যক্ষভাবে শিক্ষক রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাঁদের সেখানে না রাখাই সঠিক হবে বলে মনে করি। আর মৌখিক পরীক্ষায় ৫০-১০০-এর মধ্যে থাকাই উত্তম হবে বলে মনে করি।

বৈষম্য শুধু কোটায় নয়, স্তরে স্তরে। তাই এখনই সময় পিএসসির নিয়োগপ্রক্রিয়াকে বৈষম্যমুক্ত করার। একই সঙ্গে পিএসসিকে কিভাবে আরো গতিশীল, দুর্নীতিবাজমুক্ত ও নিরপেক্ষ করা যায় সেদিকে সরকারের সুদৃষ্টি আশা করি। মনে রাখা দরকার, সংস্কার করার এখনই উত্তম সময়, নতুবা রাজনৈতিক সরকারের সময় তা হওয়া অনেক কঠিন হবে। বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন দেখা শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন সত্যি হোক।

 

সংবাদদাতা/ ইলিয়াস

Facebook
WhatsApp
Twitter

এ সম্পর্কিত আরো খবর

সম্পাদকঃ

সুভাষ সাহা

যুগ্ন সম্পাদকঃ

কাজী কবির হোসেন

ঠিকানাঃ

নারায়ণগঞ্জ অফিসঃ
পদ্মা সিটি প্লাজা, কক্ষ নংঃ ২২২, ৫৫/বি
এস, এম মালেহ রোড, টানবাজার
নারায়ণগঞ্জ-১৪০০

যোগাযোগ

ফোনঃ ৭৬৪০৬৯৯
মোবাইলঃ ০১৭১১৫৬১৩৯০
ইমেইলঃ bisherbashi.com.bd@gmail.com

USA OFFICE:

Wasington DC Bureau Chief:
Dastagir Jahangir,
3621 Columbia Pike Suit #104
Arlington USA, VA
22204
Phone: 7036770679
Email: tugrilcz@gmail.com

 

Website Design & Developed By
MD Fahim Haque
<Power Coder/>
www.mdfahim.com
Web Solution – Since 2009

error: Content is protected !!