অনলাইন ডেস্ক : মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’-এর পরিচালনা পর্ষদ ও শীর্ষ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বিলুপ্ত করে প্রশাসক বসানোর পর প্রতিষ্ঠানটির সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তানভীর আহমেদ মিশুক নগদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ তুলেছেন। ফেসবুকে মন্তব্য প্রকাশের পাশাপাশি তিনি তা প্রথম আলোর কাছেও পাঠিয়েছেন। নগদ প্রতিষ্ঠার পর থেকে যত অনিয়ম হয়েছে, তা খুঁজে বের করতে ফরেনসিক নিরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়ার খবর প্রকাশতি হওয়ার পর তানভীর আহমেদ তাঁর ক্ষোভের কথা প্রকাশ করেন। গত ২২ আগস্ট প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন পরিচালককে। তিনি ফরেনসিক পরীক্ষার ব্যাপারে অনুরোধ জানিয়ে ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি দিয়েছেন।
তানভীর আহমেদ আরও লিখেছেন যে স্বচ্ছতার স্বার্থে ফরেনসিক তদন্তে তাঁর আপত্তি নেই। কিন্তু কোনো বিদেশি কোম্পানি দিয়ে তদন্ত করতে হবে। ফেসবুকে কেন তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছেন এমন প্রশ্নে নগদের তানভীর আহমেদ মিশুক প্রথম আলোকে বলেন, ‘নগদ আমাদের কোম্পানি, আমাদের টাকায় নগদ চলে। এটাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। এসব আমরা আইনিপথে মোকাবিলা করব। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এই প্রক্রিয়া শুরু হবে।’
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আহসান এইচ মনসুরকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গর্ভনর নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক ১০টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করে দিয়েছে। এদিকে নগদে নিযুক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রশাসককেই হুমকি দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে তানভীর আহমদে মিশুকের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে রাজধানীর বনানী থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছেন প্রশাসক মুহম্মদ বদিউজ্জামান দিদার। যোগাযোগ করা হলে মুহম্মদ বদিউজ্জামান দিদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘দাপ্তরিক সিদ্ধান্তে আমরা দায়িত্ব নিয়েছি। নগদকে নিয়মের মধ্যে রেখে সুসংহত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
তানভীর আহমেদের অভিযোগের ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। তবে গত ২২ আগস্ট গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছিলেন যে নগদের মাধ্যমে গ্রাহকেরা যাতে প্রতারিত না হন, সে জন্য প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, নগদের মালিকানা ও অনুমোদন নিয়ে প্রশ্ন আছে। এ ছাড়া নগদে যে পরিমাণ টাকা জমা আছে, নিয়মের বাইরে তার চেয়ে বেশি ডিজিটাল অর্থ তৈরি করেছে। প্রতিষ্ঠানটি যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে না চলে যায় ও কেউ প্রতারিত না হন, সে জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
গভর্নর বলেন, ‘ভবিষ্যতে নগদ আরও বড় আকারে গড়ে উঠুক, এটা আমাদের চাওয়া। তবে সেটা নিয়মের মধ্যে হতে হবে, এটিকে স্বচ্ছভাবে চলতে হবে। বাজারে সম প্রতিযোগিতা করে বড় হতে হবে।’ সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৯ সালে শুরু হয় নগদের কার্যক্রম। এরপর যথাযথ প্রক্রিয়া না মেনে গ্রাহক ধরতে প্রতিষ্ঠানটি একচেটিয়া সুবিধা ভোগ করে। শেখ হাসিনার সরকার সব সরকারি ভাতা বিতরণের জন্য নগদকে বেছে নেয়। ফলে সরকারি ভাতাভোগীদের বাধ্য হয়ে নগদের গ্রাহক হতে হয়। নগদকে ডাক বিভাগের সেবা বলা হলেও বাস্তবে এতে সরকারি বিভাগটির কোনো মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ ছিল না।
আর্থিক খাত–সংশ্লিষ্ট একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, দেশের আর্থিক খাতে মালিকানার সঙ্গে যুক্তদের কেউ প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় যুক্ত নেই। অন্যদিকে নগদ যাঁরা পরিচালনা করেছেন, তাঁরাই আবার মালিকানার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। নগদকে নিয়ে বড় উদ্বেগ সে কারণেই। ডিজিটাল আর্থিক খাতকে সঠিক পথে এগিয়ে নিতে নিয়মের মধ্যে রেখে নগদকে পরিচালনা করতে হবে।
সংবাদদাতা/ ইলিয়াস