সেখান থেকে আরো ২১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব। চরফ্যাশনে ছয়টি জিওলজিক্যাল ভূতাত্ত্বিক কাঠামো শনাক্ত করা হয়েছে। সেখানে ৩০টি কূপ খনন করা যেতে পারে। এই কূপগুলো থেকে দৈনিক ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা যাবে। ভোলার এই কূপগুলো সঠিক সময়ে বাস্তবায়িত হলে দৈনিক ৯২০ মিলিয়ন ঘনফুট উত্তোলন করা যাবে। এতে একদিকে দেশের গ্যাস সংকট দূর হবে, অন্যদিকে উচ্চমূল্যের এলএনজি আমদানির নির্ভরতাও কমবে। এই গ্যাস দিয়ে ছয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
ভূতত্ত্ববিদ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরূল ইমাম বলেন, ‘আমাদের ভোলা ও সিলেট এ দুটি এলাকা খুবই সম্ভাবনাময়। এই দুটি এলাকাকে গ্যাসের প্রমাণিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ভোলায় কূপ খননের কার্যক্রম আরো বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণের কাজটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে বিদেশি কম্পানিকে বাদ দিয়ে শুধু বাপেক্সের মাধ্যমে গ্যাস অনুসন্ধানের কার্যক্রম চালানো ঠিক হবে না। কারণ বাপেক্সের সেই সক্ষমতা তৈরি হয়নি। তাই পেট্রোবাংলা ও বিদেশি কম্পানিগুলো যৌথভাবে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালাতে পারে। তাহলেই দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশীয় গ্যাসের উত্তোলন বাড়ানো সম্ভব হবে।’
পেট্রোবাংলা ও বাপেক্স সূত্রে জানা গেছে, গ্যাজপ্রম এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের গ্যাস উত্তোলনের কূপ খননের কাজ করছে। কম্পানিটি এরই মধ্যে ২০টি কূপ সফলভাবে খনন করেছে এবং প্রতিটি কূপে গ্যাস পেয়েছে। গ্যাজপ্রমের কূপগুলো প্রায় ৪.৫ টিসিএফ গ্যাসের রিজার্ভ বাড়িয়েছে। গ্যাজপ্রমের কূপগুলো থেকে দৈনিক ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে।
গ্যাজপ্রমের কর্মকর্তারা বলছেন, গ্যাজপ্রম ইন্টারন্যাশনাল তাদের কার্যকর ও দক্ষ কূপ নির্মাণ কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশে গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার ও উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। বহুজাতিক কম্পানিগুলো তাদের নিজস্ব ল্যাব, সফটওয়্যার ও প্রকৌশলীকে ব্যবহার করে কূপ খনন করার ফলে তাদের উত্তোলন অনেক বেশি হয়। বাংলাদেশে গ্যাজপ্রম ২০টি কূপ খনন করেছে, সব কূপে গ্যাস আবিষ্কৃত হয়েছে এবং বর্তমানে এই কূপগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। অনভিজ্ঞ কম্পানি দিয়ে কূপ খনন করা হলে গ্যাস ফিল্ডগুলো হুমকির মুখে পড়ে। শেভরন ও শেলের চেয়ে গ্যাজপ্রমের কূপ খনন খরচ তুলনামূলক কম হয় বলে জানান গ্যাজপ্রমের কর্মকর্তারা।
পেট্রোবাংলার তথ্য মতে, বর্তমানে দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এখন সরবরাহ করা হচ্ছে দুই হাজার ৬৩৩ মিলিয়ন ঘনফুট। ঘাটতি থাকছে এক হাজার ৩৬৭ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। স্বাভাবিক সময়ে দুটি টার্মিনাল থেকে এলএনজি রূপান্তরের মাধ্যমে এক হাজার ৫০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ হতো। প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে সামিটের একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল বন্ধ থাকায় ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ কম হচ্ছে। এলএনজি সরবরাহ কমে যাওয়ায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, শিল্প-কারখানাসহ সব খাতেই গ্যাসের সরবরাহ কমে গেছে।
পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলছেন, ভোলায় গত তিন দশক আগে গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। তবে অর্থনৈতিক মুনাফাযোগ্যতা নিয়ে সংশয় থেকে এসব ক্ষেত্রের গ্যাস মূল ভূখণ্ডে সরবরাহের জন্য পাইপলাইন নির্মাণ করা যায়নি। এখন ভোলায় গ্যাসের রিজার্ভ বাড়ায় পাইপলাইন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ভোলার গ্যাস স্বল্প পরিসরে স্থানীয় বিদ্যুৎকেন্দ্র ও ছোট ছোট কারখানায় সরবরাহ করা হচ্ছে।
সংবাদদাতা/ ইলিয়াস