জুলাই, আগস্ট পার হলো, এখন সেপ্টেম্বর চলছে। আমি এখনো ট্রমার মধ্যে আছি। পরিবারকে সময় দিয়ে, কাজে ব্যস্ত হয়ে চেষ্টা করছি, কিন্তু ট্রমা থেকে বের হতে পারিনি। হ্যাঁ, সময় সব কিছু মুছে দেয়। তবে কত দিন লাগবে, জানি না। এ সময়টা আমি কখনো ভুলতে পারব না।
সবাই নিজের কথাটা বলতে পারছে। গত ১৬ বছর কিংবা এর আগের কথাও যদি বলেন, কখনো দেশের মানুষ এ রকম বাকস্বাধীনতা উপভোগ করতে পারেনি। একেবারে গ্রাম থেকে শহরে, সব শ্রেণিপেশার মানুষ কথা বলতে পারছে। তবে হ্যাঁ, যেকোনো অভ্যুত্থানের পর কিছু নেতিবাচক ঘটনাও ঘটে। সেটাকে আমি ফোকাস করতে চাই না। পরিবর্তনের মাধ্যমে ভালো যা কিছু হচ্ছে, সেটাই মুখ্য।
ভুল না করে থাকলে, ১৮ জুলাই থেকে আমি সক্রিয় ছিলাম। নিকেতনে একটি মুভমেন্ট করার কথা ছিল, ওটা বাতিল হয়। এর মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থার অবনতি হয়। রাস্তায় গাড়ি চলাচল ছিল না। কিছু পথ হেঁটে, কিছু পথ ভ্যানে এভাবে নানাভাবে আমরা কয়েকজন মিলে ওখানে গিয়েছিলাম। শিক্ষার্থীদের খাবার ও পানি সরবরাহ করেছিলাম। এ ছাড়া শিল্পীদের অনেকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি, যাতে আমরাও মুভমেন্ট করতে পারি। কিন্তু কারো সাড়া পাইনি। সপ্তাহখানেক বাসায় মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে ছিলাম। সে সময়ই মূলত আমার ভেতরের কথাগুলো জমতে থাকে। যেটা ওই ভাইরাল বক্তব্যে শুনেছে সবাই।
সেই বক্তব্যের প্রসঙ্গটা জানতে চাই.
১ আগস্টের ওই প্রতিবাদে আমাকে প্রশ্ন করা হয়, ‘আপনাদের দাবি কী?’ এই প্রশ্নটা আমাকে ট্রিগার করে! এখানে ‘আপনাদের’ বলে তো কিছু নেই। জুলাইতে যা হয়েছে, ১ আগস্টে এসে তো দেশের প্রায় সবার একটাই দাবি—গণহত্যা, অত্যাচার বন্ধ করতে হবে। কেউ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেছে, কেউ ঘরে থেকে তো কেউ বিদেশে থেকে। আমি সত্যকে সত্য বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। এ কারণে হয়তো আমার কথাগুলো শিক্ষার্থীদের কাছে ছড়িয়ে গেছে। এতে হয়তো তাঁরা আরো অনুপ্রাণিত হয়েছে।
শোবিজেও নানা অনিয়মের কথা শোনা যায়। সেখান থেকে মুক্তি মিলবে কিভাবে?
ব্যাধিটা অনেক পুরনো। থিয়েটার থেকে শুরু করে, টেলিভিশন, সিনেমা—সবখানেই অনিয়ম। যাদের হাত ধরে ইন্ডাস্ট্রি চলেছে, তাঁদের প্রায় সবাই কোনো না কোনোভাবে সরকার থেকে লাভবান হয়েছে। এই জুলাই না এলে আমরা বুঝতেই পারতাম না, যাঁদের এত সম্মান করি, যাঁদের দেখে নতুন প্রজন্ম আর্ট-কালচারে আগ্রহী হয়, তাঁরা আসলে কেমন। কিছু শিল্পী তো আওয়ামী সরকারকে প্রত্যক্ষ মদদ দিয়েছেন। যাঁরা দেশের শিল্প-সংস্কৃতিতে কাজ করে সুনাম কুড়িয়েছেন, কোথায় ছিলেন তাঁরা? কিভাবে ঘুমিয়েছেন একটা মাস, ভাবলেই আমার অবাক লাগে! অপরাধ দেখে চুপ থাকাটাও অপরাধ। তাঁদের বিষয়ে কিছু বলতেও চাই না। তবে আশা করি, নতুন বাংলাদেশে ভালো কিছুই হবে।
আপনার শোবিজযাত্রা শুরু হয়েছিল কিভাবে?
শুরুটা সহকারী পরিচালক হিসেবে। ক্যামেরার সামনে আসি ২০০৮ সালে। তখন থেকে বিজ্ঞাপনচিত্রে অভিনয় করছি। পাশাপাশি কিছু ওটিটি প্রজেক্ট, নাটক ও সিনেমায় অভিনয় করেছি। আমার অভিনীত বিজ্ঞাপনের সংখ্যা সাত শতাধিক। ‘দহন’, ‘পারাপার’, ‘শান’সহ চারটি সিনেমা করেছি। কিছু একক নাটক আর ওটিটি প্রজেক্টেও অভিনয় করেছি।
নায়ক হতে পারতেন তো…
ধরুন, আমি চাচ্ছি ইন্টারভিউ দিতে, আপনি চাচ্ছেন না, কিভাবে হবে? সিন্ডিকেট, স্বজনপোষণ এসব তো আছেই। আর এখন ফ্যান-ফলোয়ার দিয়ে বিচার করা হয়। আমার ঝুলিতে সাত শ বিজ্ঞাপনচিত্র আছে, এটা জরুরি নাকি একটা কাজ করে কয়েক লাখ ফলোয়ার হয়েছে, সেটা জরুরি? নির্মাতা-প্রযোজকদের ভাবা উচিত। অবশ্য এসব নিয়ে আমার আক্ষেপ নেই। কারণ বিজ্ঞাপনের জায়গাটা বেশ সুন্দর। এখানকার বেশির ভাগ মানুষ শিক্ষিত, কাজের ধরনও ভালো। এটা নিয়েই আমি খুশি।
ভবিষ্যৎ নিয়ে কী ভাবেন?
যেকোনো সেক্টরেই সৎ ও নিষ্ঠা নিয়ে টিকে থাকাটা একটা লড়াই। ২০০৮ থেকে ২০২৪—এটা আমার একার জার্নি। নীতি-নৈতিকতার সঙ্গে আপস করিনি, করব না। শিক্ষার্থীদের কাছে আমার যে ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে, সেটা মাথায় রেখেই কাজ করতে চাই। যদি কাজ বন্ধও করে দিতে হয়, নো প্রবলেম।
সংবাদদাতা/ ইলিয়াস