MENU

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ বৃহস্পতিবার, ১৭ই অক্টোবর, ২০২৪ ইং
  • ২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ১৩ই রবিউস-সানি, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, সকাল ৭:৩৮
Search
Close this search box.
বাষট্টির আন্দোলন ও শিক্ষার টেকসই সংস্কার

বাষট্টির আন্দোলন ও শিক্ষার টেকসই সংস্কার

প্রকাশিতঃ

অনলাইন ডেস্ক : চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার সংগ্রামে আওয়ামী লীগের পতন এবং দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী স্লোগানের প্রেক্ষাপটে শিক্ষা দিবস পালনের গুরুত্ব বহুগুণ বেড়ে গেছে। শিক্ষার অধিকার আদায়ে ১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার রাজপথে তৎকালীন পাকিস্তান সামরিক শাসকের পুলিশ বাহিনীর বুলেটে জীবন দিতে হয়েছিল মোস্তফা ওয়াজিল্লাহ, বাবুল প্রমুখ ছাত্রনেতাকে। সামরিক শাসক ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের শাসনামলে শরীফ কমিশনের নেতৃত্বে একটি শিক্ষানীতি করা হয়েছিল। শিক্ষানীতির বেশ কিছু বক্তব্য তৎকালীন পাকিস্তানের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থায় বেমানানই ছিল না, অপ্রাসঙ্গিকও ছিল। এগুলোর মধ্যে উচ্চশিক্ষা সংকোচন, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বছর শেষে পরীক্ষা ব্যবস্থা, তিন বছর মেয়াদি ডিগ্রি পাস কোর্স চালু এবং ছাত্র বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাবনা অন্যতম। এগুলো বাতিলের দাবিতে ’৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ছাত্র ধর্মঘট আহ্বান করা হয়েছিল। সেই ধর্মঘট পালনকালেই পুলিশি এই হত্যাকাণ্ড। পরে আইয়ুব খান শরীফ কমিশনের শিক্ষানীতি বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিল।

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনমুক্ত হয়ে স্বাধীন ভারত ও পাকিস্তানের জন্ম হলেও পাকিস্তানে ব্রিটিশদের মতোই পুঁজিবাদী তথা ধনিক বণিকনির্ভর লুটেরা অর্থনীতির পথ অনুসরণ করে। ১৯৫৬ সালের গৃহীত সংবিধানে সম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটায়। প্রগতিশীলতা অবরুদ্ধ হয়, বাঙালি সংস্কৃতি ও বাংলা ভাষাকে ধ্বংসের চক্রান্ত হয়। সব মিলিয়ে বাঙালিদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। সামরিক শাসন বলবৎ থাকায় সভা¬-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং বন্ধ হয়ে যায়। একুশে ফেব্রুয়ারি সীমিত পরিসরে প্রভাতফেরি অনুষ্ঠিত হতো। ১৯৬২ সালের ১ য়েব্রুয়ারি ছাত্র ধর্মঘটের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটে ১৭ সেপ্টেম্বর ছাত্রনেতাদের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে।

পৃথিবীর যেসব দেশ শিক্ষা, সংস্কৃতি আর অর্থনীতিতে এগিয়েছে, তাদের শিক্ষার ইতিহাস এমনটাই। শিক্ষার দর্শন হিসেবে ভাববাদ, যুক্তি, দর্শন সর্বশেষে বিজ্ঞানই অন্যতম মাধ্যম। এ ধারাবাহিকতাকে উপেক্ষা করে শিক্ষার বিষয়বস্তু নির্ধারণ করলে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী যুগের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে না; ডিগ্রিধারীর সংখ্যা বাড়লেও কর্মক্ষম মানুষ বাড়বে না। ১৮৩৫ সালে ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষে লর্ড মেকলেকে দিয়ে সেই শিক্ষানীতি দেওয়া হয়েছিল, যা অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন ও হিসাবনিকাশ করার মতো একটি জাতি সৃষ্টি ছাড়া সৃজনশীল ও সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোর মতো চেতনাবোধ ওই শিক্ষা ব্যবস্থায় সৃষ্টি হয়নি। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের সংবিধানের চার মূলনীতি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার আলোকে এবং সংবিধানের ১৭-এর খ ধারার আলোকে একই ধারার সর্বজনীন বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। জাতীয় বাজেটে জিডিপির প্রাথমিকভাবে ৫ শতাংশ এবং পর্যায়ক্রমে ইউনেস্কোকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৭ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছিল। তারই অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু একবারে ৩৫ হাজার ১৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি করেছিলেন। পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগের আমলে ২৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারীকরণ হয়েছে, তবে এখনও চার হাজারের মতো বেসরকারি রয়ে গেছে।
মাধ্যমিক পর্যায়ে ৯০ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেসরকারি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস, শিক্ষা ব্যবস্থাকে সাম্প্রদায়িক করা হয়েছিল। সেখান থেকে বের হওয়া সম্ভব হয়নি; আওয়ামী লীগের আমলেও নয়। নতুন অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়টি নিয়ে ভাববে, সেটা শিক্ষাবিদদের ভাবনা। সংবিধানে একই ধারার সর্বজনীন বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা বাস্তবায়নের কথা থাকলেও বর্তমানে মাদ্রাসা শিক্ষা, সাধারণ শিক্ষা ও ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা বহাল রয়েছে। শিক্ষায় অর্থায়ন প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাড়েনি; শিক্ষা প্রশাসন ও বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডিতে দলীয়করণ এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি বাদে সবগুলোতে দলীয়করণের ভূত চেপে বসেছে; দলীয়ভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলায় তুলনামূলক কম যোগ্যতার লোক শিক্ষা প্রশাসনে অগ্রাধিকার পাচ্ছে। ফলে শিক্ষার গুণগত মানের ক্ষেত্রে বিরাট সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজের টাকার কমিশন বণ্টনে সমঝোতা করতে দেখা যাচ্ছে প্রভাবশালীদের। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে বিজয় হওয়ার পর এ অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন হবে– এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা। সৃজনশীল আর এমসিকিউ পরীক্ষা পদ্ধতিতে গ্রুপ অব কোম্পানির মালিকরা শিক্ষা ব্যবসা শুরু করে শিক্ষার বারোটা বাজিয়েছেন।
মৌলিক অধিকার শিক্ষা আজ সুপারমার্কেটের পণ্যের মতো, যার টাকা আছে সে-ই সেটা কিনতে পারবে। এটি জীবন দিয়ে স্বাধীন করা একটি দেশের জন্য কাম্য নয়। তবে এটাই এখন বাস্তব হয়ে উঠেছে। ২০১০ সালের শিক্ষানীতি, শিক্ষার দর্শনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ১৯৭২ সালের সংবিধানের বিধান যেমন উপেক্ষিত হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থাপনা ও অর্থায়নের ক্ষেত্রেও কোনো ইতিবাচক অগ্রগতি হয়নি; বরং মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দলটির ক্ষমতাশীল আমলে শিক্ষা কারিকুলামে সাম্প্রদায়িকতা প্রশ্রয় পেয়েছে। আগে-পিছের শিক্ষার একাডেমিক ও কারিকুলামগত স্বীকৃতি না থাকা, এ প্লাস আর গোল্ডেনের সংখ্যা বাড়লেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ক্ষেত্রে ন্যূনতম যোগ্যতা প্রদর্শন করতে পারছে না। এর সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হলো এইচএসসি পরীক্ষার অনেক বিষয়ে পরীক্ষা না দিয়ে অটো পাসের সিদ্ধান্ত, যা জাতিকে আরেক ধাপ পিছিয়ে দেবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও আন্তর্জাতিক মানের দিক থেকে অনেক নিচে অবস্থান করছে।

২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিজয়ের মধ্য দিয়ে সংস্কার ও পরিবর্তনের যে ভাবনার কথা শোনা যাচ্ছে, সেটাকে ধারণ করা এবং বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিলে ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনের উদ্দেশ্য সফল হবে; শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে; অন্যথায় আগামী প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য এটা সুখকর হবে না এবং বিশ্বায়নের প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশকে টিকে থাকা কঠিন হবে। জাপান ১৮৬০ সালে শিক্ষা নিয়ে ভাবনা শুরু করে। ১৮৬৬ সালে শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে তাদের জাতীয় বাজেটের ৪৩ শতাংশ এ খাতে বরাদ্দ করে। চার দশক পরে জাপান পৃথিবীতে উন্নত দেশের মডেল হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে। আর আমরা সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন করে ফেলি। নাগরিকের মৌলিক একটি অধিকার হওয়ার পরও রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও শিক্ষাবিদদের মধ্যে ঐকমত্য হয় না। এটা জাতির জন্য লজ্জাজনক। দেশ ও জাতির উন্নয়নে সবাই ঐকমত্যে আসার এখনই সময়। এর বিকল্প কোনো পথ থাকতে পারে না ।

 

সংবাদদাতা/ ইলিয়াস

Facebook
WhatsApp
Twitter

এ সম্পর্কিত আরো খবর

সম্পাদকঃ

সুভাষ সাহা

যুগ্ন সম্পাদকঃ

কাজী কবির হোসেন

ঠিকানাঃ

নারায়ণগঞ্জ অফিসঃ
পদ্মা সিটি প্লাজা, কক্ষ নংঃ ২২২, ৫৫/বি
এস, এম মালেহ রোড, টানবাজার
নারায়ণগঞ্জ-১৪০০

যোগাযোগ

ফোনঃ ৭৬৪০৬৯৯
মোবাইলঃ ০১৭১১৫৬১৩৯০
ইমেইলঃ bisherbashi.com.bd@gmail.com

USA OFFICE:

Wasington DC Bureau Chief:
Dastagir Jahangir,
3621 Columbia Pike Suit #104
Arlington USA, VA
22204
Phone: 7036770679
Email: tugrilcz@gmail.com

 

Website Design & Developed By
MD Fahim Haque
<Power Coder/>
www.mdfahim.com
Web Solution – Since 2009

error: Content is protected !!