অনলাইন ডেস্ক : চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার সংগ্রামে আওয়ামী লীগের পতন এবং দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী স্লোগানের প্রেক্ষাপটে শিক্ষা দিবস পালনের গুরুত্ব বহুগুণ বেড়ে গেছে। শিক্ষার অধিকার আদায়ে ১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার রাজপথে তৎকালীন পাকিস্তান সামরিক শাসকের পুলিশ বাহিনীর বুলেটে জীবন দিতে হয়েছিল মোস্তফা ওয়াজিল্লাহ, বাবুল প্রমুখ ছাত্রনেতাকে। সামরিক শাসক ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের শাসনামলে শরীফ কমিশনের নেতৃত্বে একটি শিক্ষানীতি করা হয়েছিল। শিক্ষানীতির বেশ কিছু বক্তব্য তৎকালীন পাকিস্তানের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থায় বেমানানই ছিল না, অপ্রাসঙ্গিকও ছিল। এগুলোর মধ্যে উচ্চশিক্ষা সংকোচন, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বছর শেষে পরীক্ষা ব্যবস্থা, তিন বছর মেয়াদি ডিগ্রি পাস কোর্স চালু এবং ছাত্র বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাবনা অন্যতম। এগুলো বাতিলের দাবিতে ’৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ছাত্র ধর্মঘট আহ্বান করা হয়েছিল। সেই ধর্মঘট পালনকালেই পুলিশি এই হত্যাকাণ্ড। পরে আইয়ুব খান শরীফ কমিশনের শিক্ষানীতি বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিল।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনমুক্ত হয়ে স্বাধীন ভারত ও পাকিস্তানের জন্ম হলেও পাকিস্তানে ব্রিটিশদের মতোই পুঁজিবাদী তথা ধনিক বণিকনির্ভর লুটেরা অর্থনীতির পথ অনুসরণ করে। ১৯৫৬ সালের গৃহীত সংবিধানে সম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটায়। প্রগতিশীলতা অবরুদ্ধ হয়, বাঙালি সংস্কৃতি ও বাংলা ভাষাকে ধ্বংসের চক্রান্ত হয়। সব মিলিয়ে বাঙালিদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। সামরিক শাসন বলবৎ থাকায় সভা¬-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং বন্ধ হয়ে যায়। একুশে ফেব্রুয়ারি সীমিত পরিসরে প্রভাতফেরি অনুষ্ঠিত হতো। ১৯৬২ সালের ১ য়েব্রুয়ারি ছাত্র ধর্মঘটের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটে ১৭ সেপ্টেম্বর ছাত্রনেতাদের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে।
২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিজয়ের মধ্য দিয়ে সংস্কার ও পরিবর্তনের যে ভাবনার কথা শোনা যাচ্ছে, সেটাকে ধারণ করা এবং বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিলে ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনের উদ্দেশ্য সফল হবে; শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে; অন্যথায় আগামী প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য এটা সুখকর হবে না এবং বিশ্বায়নের প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশকে টিকে থাকা কঠিন হবে। জাপান ১৮৬০ সালে শিক্ষা নিয়ে ভাবনা শুরু করে। ১৮৬৬ সালে শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে তাদের জাতীয় বাজেটের ৪৩ শতাংশ এ খাতে বরাদ্দ করে। চার দশক পরে জাপান পৃথিবীতে উন্নত দেশের মডেল হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে। আর আমরা সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন করে ফেলি। নাগরিকের মৌলিক একটি অধিকার হওয়ার পরও রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও শিক্ষাবিদদের মধ্যে ঐকমত্য হয় না। এটা জাতির জন্য লজ্জাজনক। দেশ ও জাতির উন্নয়নে সবাই ঐকমত্যে আসার এখনই সময়। এর বিকল্প কোনো পথ থাকতে পারে না ।
সংবাদদাতা/ ইলিয়াস