এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ পেয়েছিল নাফিসা কামালের এনকে সফট, স্মার্ট টেকনোলজি, চীনের সিনোসফট, সিএনএস, ইএসএল, শামীম আহসান ই-জেনারেশন। নাফিসা কামালের সঙ্গে স্মার্ট টেকনোলজির সম্পর্কের কারণে এসব প্রকল্পের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারেনি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)।
জানা গেছে, এই প্রকল্পের ২০ শতাংশ কাজও করেনি অথচ বরাদ্দের পুরো অর্থ তুলে নিয়েছে স্মার্ট টেকনোলজি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ সময়ে গত ২০ জুন তাড়াহুড়ো করে স্মার্ট টেকনোলজির ঠিকানায় এনকে সফট এবং সিনোসফটের জয়েন্ট ভেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ৪ দশমিক ৭৬ মিলিয়ন ডলার ছাড় করে নাফিসা কামালের নিয়ন্ত্রিত প্রকল্প পরিচালক। ডলারের পাশাপাশি অতিরিক্ত ২ কোটি ৩১ লাখ টাকাও বরাদ্দ দেওয়া হয় এ প্রতিষ্ঠানকে।
২০২২ সালের ৩১ মে আরেক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেমকে (সিএনএস) একটি এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং (ইআরপি) সফটওয়্যার ও ইমেইল ব্যবস্থাপনার জন্য ২৩ কোটি ৪ লাখ টাকা দেওয়া হয়। প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠানের আসল লাইসেন্স দেয়নি সিএনএস। তার এক সপ্তাহ আগে ২৪ মে ভারতের জেরক্স ইন্ডিয়া এবং আইওই বাংলাদেশ নামে প্রতিষ্ঠানে জয়েন্ট ভেঞ্চারকে ডকুমেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সরবরাহের জন্য ৩ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি অনুমোদন করা হয়।
এই ধাপে ১৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকার অতিরিক্ত বরাদ্দ পায় সিন্ডিকেটটি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিমা প্রকল্পের এই অর্থ পুঁজিবাজারভুক্ত ই-জেনারেশনে বিনিয়োগ করেছেন সালমান এফ রহমানের আশীর্বাদপুষ্ট শামীম আহসান। যিনি বেসিসের সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালকও হয়েছিলেন।
প্রকল্পের নথি থেকে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২১ ডিসেম্বর নাফিসা কামালের এনকে সলিউশনস, এক্সপ্রেস সিস্টেমস এবং আসপায়ার টেক সার্ভিসেসের জয়েন্ট ভেঞ্চার প্রতিষ্ঠানকে ২৮ দিনের মধ্যে সাইবার সিকিউরিটি, রানসমওয়্যার এবং এন্ডপয়েন্ট পণ্য সরবরাহের জন্য ১ দশমিক ৭১ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি অনুমোদন করেন প্রকল্প পরিচালক মো. কামরুজ্জামান।
প্রকল্পের এ ধাপে, ডলারের পাশাপাশি বাংলাদেশি টাকায় ৫৮ লাখ ৬১ হাজার টাকা আলাদাভাবে বরাদ্দ পায় নাফিসা কামালের সিন্ডিকেট। কাগজপত্রে সংখ্যাটা কম পাওয়া গেলেও অনুসন্ধান বলছে, এ প্রকল্প থেকে ৮০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে স্মার্ট টেকনোলজি এবং নাফিসা কামালের এনকে সফট।
আইডিআরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তিন বছরের জন্য বিমা উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হলেও আর্থিক সুরক্ষা খাতের অবস্থা আগের মতোই রয়েছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সপরিবারে সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমিয়েছেন লোটাস কামাল এবং তার মেয়ে নাফিসা কামাল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) এক সাবেক সভাপতি বলেন, বিমা উন্নয়নে বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পের অগ্রগতি না হলেও অর্থ তুলে নেওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। আরেকটা বিষয় হলো এখানে কয়েকটি বিদেশি সফটওয়্যার কোম্পানির অংশগ্রহণ। ফলে বিদেশের টাকা বিদেশেই চলে গেছে। বিমা উন্নয়নে প্রযুক্তিগত সাপোর্ট সফটওয়্যার উন্নয়নের কাজ দেশি প্রতিষ্ঠান করলে ৩০ কোটি টাকা সমমানের ডলার সাশ্রয় হতো বলে মনে করেন তিনি।
সার্বিক বিষয়ে নাফিসা কামাল এবং স্মার্ট টেকনোলজিসের চেয়ারম্যান মাজহারুল ইসলামের বক্তব্য জানার চেষ্টা করলে তারা মোবাইল ফোনের কল রিসিভ করেননি। বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমি, সাধারণ বিমা করপোরেশন এবং জীবন বিমা করপোরেশনের পেশাদারিত্ব এবং প্রযুক্তিগতভাবে আরো সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশের বিমা খাত উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয় বিশ্বব্যাংক।
সংবাদদাতা/ ইলিয়াস