MENU

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ বুধবার, ১৬ই অক্টোবর, ২০২৪ ইং
  • ১লা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ১২ই রবিউস-সানি, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, সন্ধ্যা ৬:২৮
Search
Close this search box.
যার ছত্রছায়ায় ভয়ঙ্কার অপকর্ম চালাতেন কাফি

যার ছত্রছায়ায় ভয়ঙ্কার অপকর্ম চালাতেন কাফি

প্রকাশিতঃ

অনলাইন ডেস্ক : ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছিলেন আব্দুল্লাহহিল কাফি। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের ছেলে সাফি মোদ্দাছের খান জ্যোতির বন্ধু পরিচয়ে পুলিশে তার প্রভাব ছিল আন্ডার ওয়ার্ল্ডের গডফাদারদের মতো। তার দাপটে তটস্থ থাকতেন ঢাকার পুলিশ। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও তিনি মানতেন না। ঘুস, দুর্নীতিসহ নানা অনৈতিক কাজে যুক্ত করতে অধস্তনদের রাখতেন দৌড়ের ওপর। পুলিশের কেউ তার অবাধ্য হলে দিতে হতো চরম মূল্য, তাকে করতেন কোণঠাসা।

কাফি ঢাকা জেলা উত্তরের সাভার, ধামরাই ও আশুলিয়ায় পছন্দের পুলিশ সদস্যদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন নিজস্ব বলয়। কাফি সিন্ডিকেটের পুলিশ সদস্যরা এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন যে, থানার ওসিকেও তাদের কেউ কেউ পরোয়া করতেন না। আশুলিয়ায় ভ্যানে লাশ পোড়ানোর ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর এর মাস্টারমাইন্ড হিসাবে সামনে আসে কাফির নাম। এরপর বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে ২ সেপ্টেম্বর রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আটক হন তিনি। তিন দফায় তাকে ১৩ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে নিজের অপকর্মের অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন কাফি। তার দেওয়া তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই চলছে।

তিনদিনের অনুসন্ধানে কাফি ও তার সিন্ডিকেটের নানা অপকর্মের তথ্য এসেছে যুগান্তরের কাছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কাফি ডিএমপির রমনা বিভাগের ধানমন্ডি জোনের এডিসি থাকা ওই এলাকার অপরাধীদের কাছ থেকে মাসোহারা নিতেন নিয়মিত।

তাছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলের সঙ্গে বন্ধুত্বের সুবাদে পুলিশ প্রশাসনে তিনি হয়ে উঠেন একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় বসে পুলিশের আইজি থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাক্ষাৎ, বদলি, পদোন্নতি থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ নানা বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতেন কাফি। তার ভয়ে রীতিমতো তটস্থ ছিলেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও। জ্যোতির বদৌলতে কাফি ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর ঢাকা জেলায় ‘প্রাইজ পোস্টিং’ পান। এরপর তিনি ঢাকা জেলা উত্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের (ক্রাইম অ্যান্ড অপস ও ট্রাফিক, উত্তর বিভাগ) দায়িত্ব পান। শিল্পাঞ্চল অধ্যুষিত সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই থানায় নিজের পছন্দের পুলিশ সদস্যদের নিয়ে অপরাধের সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। জমি দখল, ফ্যাক্টরি দখল, পরিবহণ খাত, বিভিন্ন হাউজিং প্রতিষ্ঠান, ভেজাল জমি, শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিত কাফি সিন্ডিকেট। আর বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দমন-পীড়ন ছিল তার নিত্যদিনের কর্ম।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পুলিশ সদস্য যুগান্তরকে বলেন, কাফির পছন্দের বাইরে এই তিন থানায় কোনো ওসি কাজ করতে পারতেন না। তার অপছন্দের ওসিকে অধস্তন কর্মকর্তারাও অপদস্থ করতেন। সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ মুহূর্তে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশে ওসি রদবদল হয়। এ সময় সাভার থানায় পোস্টিং হয় ওসি আকবর আলী খানের। কাফির পছন্দের ওসি না হওয়ায় তিন মাসের মাথায় স্বেচ্ছায় তাকে বদলি হয়ে চলে যেতে হয় অন্য থানায়। আকবর এখন সারদায় পুলিশ একাডেমিতে কর্মরত। তিনি যুগান্তরকে বলেন, আমি কাফি স্যারকে আগে থেকে চিনতাম না। সাভার থানায় যোগদানের পর পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে নিজের সম্মান বাঁচিয়ে সরে আসি।

সূত্র জানায়, আকবর সরে যাওয়ার পর কাফি তার পছন্দের ওসি শাহ জামানকে সাভার থানায় নিয়ে আসেন। এরপর এ থানার এসআই, এএসআই ও কনস্টেবলসহ অন্তত ১২ জনের একটি টিম গঠন করেন। সেই টিম সব সময় ব্যস্ত থাকত নানা অপকর্মে। আশুলিয়া ও ধামরাই থানায়ও ছিল কাফির পছন্দের পুলিশের সিন্ডিকেট। তার আস্থাভাজন আশুলিয়া থানার পরিদর্শক তদন্ত মাসুদুর রহমান ও পরিদর্শক অপারেশন নির্মল চন্দ্র দাস ওই থানার ওসিকেও পাত্তা দিতেন না। শিল্পাঞ্চল অধ্যুষিত ওই এলাকায় মাসুদ ও নির্মল রীতিমতো ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। ঝুট ব্যবসা, গার্মেন্ট ব্যবসা, অবৈধ বিভিন্ন কারখানা, পরিবহণসহ বিভিন্ন খাত থেকে প্রতিমাসে তারা কোটি কোটি টাকা চাঁদা তুলতেন।

৫ আগস্টের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভ্যানের ওপর লাশ স্তূপ করে রাখার একটি ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়। পরে চিহ্নিত হয় ওই ক্লিপটি আশুলিয়া থানার সামনের সড়কে ধারণ করা। ভ্যানের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া ডিবি ঢাকা উত্তরের পরিদর্শক তদন্ত আরাফাত হোসেনকে শনাক্ত করে র‌্যাব ১৩ সেপ্টেম্বর ভোরে আফতাবনগর থেকে গ্রেফতার করে। পরে তাকে তিনদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।

আশুলিয়া এলাকা ঘুরে ওইদিনের ঘটনা সম্পর্কে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় তিন ব্যক্তি যুগান্তরকে জানান, ৫ আগস্ট সকাল থেকে আশুলিয়ার নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল মোড়ের দিকে আন্দোলনকারীরা জড়ো হতে থাকেন। সেখানে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে দফায় দফায় ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করলে সেখানে বেশ কয়েকটি লাশ পড়ে। লাশগুলো ভ্যানে তুলে নিয়ে থানার দিকে এগোতে থাকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। ছাত্র-জনতা দাবি করতে থাকে ঢাকা-১৯ আসনের সংসদ-সদস্য সাইফুল ইসলাম আশুলিয়া থানায় রয়েছেন। তাকে তাদের হাতে তুলে দিতে হবে। তখন সাইফুল ইসলাম থানায় নেই জানিয়ে আশুলিয়া থানার ওসি হ্যান্ডমাইকে বারবার ছাত্র-জনতার উদ্দেশে বলতে থাকেন, ‘আপনারা বিজয়ী হয়েছেন। আমরা হেরেছি। আপনাদের কাছে করজোড়ে ক্ষমা চাইছি। আমাদের মাফ করে দেন।’ এরপরও ছাত্র-জনতা লাশ বোঝাই ভ্যানটি থানার সামনে রাখে। তখন থানার সামনের কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। এ খবর শুনে কাফি আশুলিয়া থানার ওসিকে ফোন করে গালাগাল করেন এবং ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেন। কিন্তু আশুলিয়া থানার ওসি ও ডিবির ওসি তার নির্দেশ অমান্য করে আত্মরক্ষার্থে থানার ভেতরের দিকে চলে যান। পরে কাফি সেখানে রিজার্ভ ফোর্স এবং নিজের বিশ্বস্ত অফিসারদের গুলি করার নির্দেশ দেন। পুলিশ শটগান ও গ্যাসগান দিয়ে গুলি ছুড়লে ছাত্র-জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। থানায় আগুন জ্বলতে থাকে দাউদাউ করে। এতে পুড়ে যায় সেখানে রাখা লাশের স্তূপ। একপর্যায়ে সেনাবাহিনীর সহায়তায় থানা এলাকা ছেড়ে যায় দুই শতাধিক পুলিশ।

ডিবি ঢাকা উত্তরের সাবেক পরিদর্শক রিয়াজ উদ্দিন বিপ্লব যুগান্তরকে বলেন, ঢাকা জেলার এসপি আসাদুজ্জামান স্যার, কাফি স্যারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমাদের জোর করে আশুলিয়ায় পাঠান। আমরা কোনো গুলি চালাইনি। তিনি বলেন, আমরা দোষী হলে আমাদের বিচার হোক। যোগাযোগ করা হলে আশুলিয়া থানার তৎকালীন ওসি সায়েদ যুগান্তরকে বলেন, আমি কক্সবাজারে এপিবিএন-১৪তে যোগদান করেছি। আমরা ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালাইনি। তদন্ত কমিটি এ নিয়ে কাজ করছে। আমি তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষ্য দিয়ে এসেছি। নিরপেক্ষ তদন্ত হলে বেরিয়ে আসবে প্রকৃত সত্য। লাশ পোড়ানোর বিষয়ে ঢাকা জেলা পুলিশ চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র যুগান্তরকে জানায়, লাশ পোড়ানোর বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

 

সংবাদদাতা/ ইলিয়াস

Facebook
WhatsApp
Twitter

এ সম্পর্কিত আরো খবর

সম্পাদকঃ

সুভাষ সাহা

যুগ্ন সম্পাদকঃ

কাজী কবির হোসেন

ঠিকানাঃ

নারায়ণগঞ্জ অফিসঃ
পদ্মা সিটি প্লাজা, কক্ষ নংঃ ২২২, ৫৫/বি
এস, এম মালেহ রোড, টানবাজার
নারায়ণগঞ্জ-১৪০০

যোগাযোগ

ফোনঃ ৭৬৪০৬৯৯
মোবাইলঃ ০১৭১১৫৬১৩৯০
ইমেইলঃ bisherbashi.com.bd@gmail.com

USA OFFICE:

Wasington DC Bureau Chief:
Dastagir Jahangir,
3621 Columbia Pike Suit #104
Arlington USA, VA
22204
Phone: 7036770679
Email: tugrilcz@gmail.com

 

Website Design & Developed By
MD Fahim Haque
<Power Coder/>
www.mdfahim.com
Web Solution – Since 2009

error: Content is protected !!