প্রকল্প বা আউটসোর্সিং নিয়োগের বিকল্প: সরকারি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন প্রকল্প বা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে অস্থায়ী মেয়াদে কর্মী নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। তবে মেয়াদ শেষে বিভিন্নভাবে তাঁরা স্থায়ী হচ্ছেন। ফলে কর্মীদের আন্ত বিরোধ, প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও মেধাবী-যোগ্যদের চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ সীমিত হচ্ছে। তাই অস্থায়ী নিয়োগ বন্ধ ও এর বিকল্প নিয়ে ভাবা উচিত। এ ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষের (থার্ড পার্টি) মাধ্যমে ভাড়া করা জনবল দিয়ে প্রকল্পের কাজ করা যেতে পারে।
চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি: বয়স ৩০ বছর পেরোলেই বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। অথচ বিশ্বের ১৬২টি দেশে সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর। কোনো কোনো দেশে আবার এটি উন্মুক্ত। আমাদের দেশেও বয়সসীমা বাড়িয়ে বা এই বাধা তুলে দিলে কিছু ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। যেমন—একটি খাতে অনেক বছর চাকরি করার পর কেউ চাইলে অন্য খাতে চাকরি করতে পারবেন। এর ফলে সরকারি-বেসরকারি খাতের পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময়েরও সুযোগ হবে। তাই চাকরিপ্রার্থীদের দীর্ঘদিনের বয়স বৃদ্ধির প্রত্যাশা শুধু চাকরিপ্রার্থীদের জন্যই নয়, কর্মসংস্থান খাতের উন্নয়নের জন্যও জরুরি।
আবেদন ফি কমান: সরকারি-বেসরকারি প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেই নিয়োগ আবেদনে ফি নেওয়া হয়। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান তুলনামূলক বেশি ফি নির্ধারণ করে। আবেদন ফি সহনীয় রাখতে হবে।
সমন্বিত বিজ্ঞপ্তি ও বিকেন্দ্রীকরণ: চাকরিপ্রার্থীদের সপ্তাহান্তে রাজধানীমুখী না করে বিভাগীয় শহরগুলোতে নিয়োগ পরীক্ষার ব্যবস্থাপনা করা যেতে পারে। ফলে একদিকে যেমন ভোগান্তি কমবে, অন্যদিকে রাষ্ট্রের বিকেন্দ্রীকরণের একটি পদক্ষেপও হবে। এ ক্ষেত্রে বারবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও একাধিক নিয়োগপ্রক্রিয়ার ব্যবস্থাপনার ঝামেলা এড়াতে সরকারি চাকরিতে গ্রেডভিত্তিক সমন্বিত সার্কুলার (নবম গ্রেড, দশম গ্রেড, ১১-১৩তম গ্রেড, ১৪-১৭তম গ্রেড, ১৮-২০তম গ্রেড) নিয়োগকারী ও চাকরিপ্রার্থী উভয়ের জন্যই সুবিধাজনক হবে।
পিএসসির সংস্কার: প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ তদন্ত ও প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি উন্নয়নে গঠনমূলক সংস্কার করা উচিত বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি)। বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের সঙ্গে ‘কাট নাম্বার’ উল্লেখ, লিখিত পরীক্ষায় খাতা নিরীক্ষণের সুযোগ, মৌখিক পরীক্ষা ৫০ নম্বরের মধ্যে সীমাবদ্ধ, মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ (ক্যাডারে সুপারিশ না হওয়া) সব প্রার্থীকে নন-ক্যাডার চাকরিতে সুপারিশ, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগের দুর্নীতি রোধ এবং সব সরকারি নিয়োগ পরীক্ষা পিএসসির অধীনে নেওয়া যেতে পারে। এর পাশাপাশি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নের ধরনে বুদ্ধিবৃত্তিক পরীক্ষা পদ্ধতির ওপর জোর, চাকরির ভেরিফিকেশনে নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা, কর্মমুখী শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এর ফলে কর্মসংস্থান ও রাষ্ট্রের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত সম্ভব হবে।
সংবাদদাতা/ ইলিয়াস