অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছরই হাজার হাজার শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিয়ে থাকেন। বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের যে সব দেশে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী যেতে আগ্রহী থাকেন তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা। এই দুটি দেশে পড়াশোনার বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশুনা করতে যেতে হলে প্রথমেই আপনাকে একটি কলেজ বা ইউনিভার্সিটি ও সাবজেক্ট খুঁজে বের করতে হবে যেটা আপনার জন্য সবচেয়ে উপযোগী। যুক্তরাষ্ট্রে ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোন তালিকা নেই। তাই বলা হয় যে, আপনার শিক্ষাগত, আর্থিক এবং ব্যক্তিগত সামর্থ্য ও প্রয়োজনের সাথে যেটি সবচেয়ে বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ, সেটিই আপনার জন্য সবচেয়ে ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
ভাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোর্স খুঁজে বের করার এই কাজটি আপনাকে শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার এক বছর বা ১৮ মাস আগেই শুরু করতে হবে।এক্ষেত্রে আপনাকে মাথায় রাখতে হবে আপনি কোন স্টেটে (মার্কিন অঙ্গরাজ্যে) থাকতে চান, কোন কলেজ বা ইউনিভার্সিটি আপনার সাথে সবচেয়ে বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ, আপনার আর্থিক সহযোগিতা দরকার কি না, ভর্তি ও বৃত্তি আবেদনের শেষ তারিখ কবে ইত্যাদি।
ভর্তির আবেদনের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার সব সার্টিফিকেট দরকার হবে। সেগুলো ইংরেজি ভাষায় হয়ে না থাকলে সেটি ইংরেজিতে অনুবাদ করে নোটারী করতে হবে। ইংরেজি ভাষার দক্ষতার সার্টিফিকেট থাকতে হবে। অ্যাকাডেমিক ও অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট ও রেকমেনডেশন লেটার দরকার হবে। সেই সাথে আপনার আগ্রহ, লক্ষ্য ইত্যাদি বিষয়ে একটি রচনা বা ব্যক্তিগত বিবৃতি লিখতে হবে এবং সেগুলো ভিসা আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেট এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে খরচ ভিন্ন। প্রতিযোগিতা বেশি হলেও এখানে বৃত্তি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাই আপনার আর্থিক পরিকল্পনা যত দ্রুত সম্ভব শুরু করুন। মনে রাখতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন ও বৃত্তির আবেদন এক সাথেই শুরু হয়। ভর্তি ও আর্থিক নিশ্চয়তার পরের ধাপ হচ্ছে ভিসার জন্য আবেদন। তবে ভিসা আবেদন করতে হলে অবশ্যই আপনার কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অফার লেটার থাকতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা আবেদনের জন্য আপনার বিভিন্ন রেকমেনডেশন লেটার, এসে (essay) লেখা এবং বিভিন্ন ধরণের অ্যাকাডেমিক সার্টিফিকেট পৌঁছানোর বিষয় রয়েছে। তাই এটি সময় নিয়ে ধীরে সুস্থে করতে হবে।
কানাডা
কানাডায় পড়তে যেতে হলে কী ধরণের বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে তা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কোর্স অনুযায়ী ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে কিছু সাধারণ নিয়ম রয়েছে যা মোটামুটি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্যই প্রযোজ্য। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোঁজার বিষয়ে এডুকানাডা নামে কানাডার সরকারি ওয়েবসাইট, বা আপনি যে প্রদেশে পড়াশুনা করতে আগ্রহী সেই প্রদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট এবং কানাডা ব্যুরো ফর ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন এর ওয়েবসাইটে গিয়ে খোঁজ নিতে পারেন।
সেখানে বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা ও বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়ার পর আপনাকে পছন্দের বিষয়ে আবেদন করতে হবে। সেক্ষেত্রে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্স শুরুর অন্তত এক বছর আগে আবেদনের প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আপনি আবেদন করতে চান, তাদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা ওই নির্ধারিত বিষয় সম্পর্কে, আবেদনের ফি, টিউশন ফি, স্বাস্থ্য বীমা, বাড়ি ভাড়া এবং কানাডায় বসবাসের খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাবে।
কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আপনাকে নিতে আগ্রহী হলে তারা একটি লেটার অব অ্যাক্সেপটেন্স পাঠাবে। যেটি আপনার স্টাডি পারমিট আবেদনের সময় দরকার হবে। কানাডার অভিবাসন সংক্রান্ত সরকারি ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, যে কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে হলে আপনাকে অবশ্যই সব ধরণের অ্যাকাডেমিক সার্টিফিকেট বা আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার সব ধরণের সার্টিফিকেট থাকতে হবে।
এগুলো ইংরেজিতে না থাকলে অনুবাদ করে নোটারী করিয়ে নিতে হবে। কানাডায় ইংরেজি ও ফরাসি – দুই ভাষাতেই পড়াশুনা করা সম্ভব। ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার সার্টিফিকেট থাকতে হবে। এক্ষেত্রে আইইএলটিএস ও টয়েফেল গ্রহণযোগ্য। সাথে দরকার হবে স্টেটমেন্ট অব পারপাস, যা সংক্ষেপে এসওপি নামে পরিচিত অর্থাৎ কেন আপনি কানাডায় পড়তে যেতে চাইছেন, যে বিষয়ে পড়াশুনা করতে চাচ্ছেন সেটিতে কেন পড়তে চান, আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী ইত্যাদি বিষয় সংক্রান্ত একটি লেখা।
আর এসব কিছুর সাথে দরকার হবে রেকমেনডেশন লেটার যেটা আপনার সরাসরি শিক্ষক বা কো-অর্ডিনেটর দিয়ে থাকেন। আর্থিক বিষয়ে কানাডাতে ব্যাচেলর বা স্নাতক পড়তে বার্ষিক আনুমানিক ১৫ হাজার পাউন্ড থেকে শুরু করে ৫০ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত খরচ হতে পারে। মাস্টার্স ও পিএইচডির ক্ষেত্রে এই খরচ আলাদা হয়ে থাকে। বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য কানাডায় বৃত্তির কিছু ব্যবস্থা রয়েছে। তবে এগুলো অত্যন্ত প্রতিযোগিতাপূর্ণ। তাই আগে থেকেই আপনার জন্য কোন বৃত্তি সামঞ্জস্যপূর্ণ সেটি সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে আবেদন করতে পারেন।
কানাডায় পড়তে যাওয়ার জন্য স্টাডি পারমিট দরকার হবে। এর জন্য আবেদন করতে হলে কোনও একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অফার লেটার বা লেটার অব অ্যাক্সেপটেন্স দরকার হবে। থাকতে হবে বৈধ পাসপোর্ট।এসবের সাথে দিতে হবে একটি লেটার অব এক্সপ্লেনেশন বা পারসোনাল স্টেটমেন্ট। সহজ কথায় বলতে গেলে আপনি কেন কানাডায় পড়াশুনা করতে চান, পড়াশুনা শেষে আপনি কী করবেন ইত্যাদি সম্পর্কিত তথ্য দিতে হয় এই লেটারে।
আর সর্বশেষ আপনি যে কানাডাতে আপনার পড়াশুনা ও জীবনযাপন করার মতো পর্যাপ্ত অর্থ আছে তার প্রমাণপত্র স্টাডি পারমিটের আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে। একই সাথে আপনার সাথে যদি আপনার স্ত্রী বা স্বামী ও সন্তানরা যেতে চায় তাহলে তাদের খরচ বহন করার মতো অর্থ থাকারও প্রমাণপত্র দরকার হবে।
সংবাদদাতা/ ইলিয়াস