আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২১শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, রাত ৯:০৬
কক্সবাজারের সংরক্ষিত বনে ডাকাতের আস্তানা, সন্ধ্যার পর শুরু হয় লুটতরাজ

কক্সবাজারের সংরক্ষিত বনে ডাকাতের আস্তানা, সন্ধ্যার পর শুরু হয় লুটতরাজ

প্রকাশিতঃ

অনলাইন ডেস্ক : কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারার সংরক্ষিত বনে অন্তত পাঁচ থেকে ছয়টি ডাকাত বাহিনীর শতাধিক সদস্য রয়েছে। দিনের বেলায় ডাকাতেরা গহিন বনের ভেতরে আত্মগোপনে থাকে। সন্ধ্যার পর থেকে ভোররাত পর্যন্ত গ্রামে ঢুকে লুটপাট, অপহরণ, ধর্ষণ, গরু চুরিতে নেমে পড়ে তারা। বেশির ভাগ সদস্যের আস্তানা চকরিয়ার মালুমঘাটের রিজার্ভপাড়া ও কাটাখালীর গহিন অরণ্যে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকার লোকজন বলেন, কাটাখালী ও রিজার্ভপাড়ায় পাঁচটির বেশি ডাকাত দলে শতাধিক সশস্ত্র ডাকাত রয়েছে। একটি দলের নেতৃত্ব দেন হেলাল উদ্দিন। তিনি সেনা কর্মকর্তা হত্যার ঘটনায় জড়িত। ওই দিন ঘটনাস্থল থেকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা হেলালকে গ্রেপ্তার করেন।

গত সোমবার রাতে ডুলাহাজারার পূর্ব মাইজপাড়ার মাছ ব্যবসায়ী রেজাউল করিমের বাড়িতে ডাকাত দল হানা দিয়েছে, এমন সংবাদের ভিত্তিতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ দল অভিযান চালায়। যৌথ বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাতেরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় লেফটেন্যান্ট তানজিম সারোয়ার এক ডাকাতকে ধাওয়া করে ধরে ফেলেন। তবে ওই ডাকাত তখন অতর্কিতে তানজিমের মাথায় ও গলায় উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে সেনা কর্মকর্তা তানজিম মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে সেনাবাহিনীর অন্য সদস্যরা তাঁকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে তাৎক্ষণিকভাবে মালুমঘাট মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হেলাল উদ্দিন ছাড়াও রিজার্ভপাড়ার আরও কয়েকটি ডাকাত দলের নেতৃত্ব দেন শাহ আলম, নুরুল ইসলাম, আবদুর রশিদ, পুতু ডাকাত ও আবছার। এলাকায় তাঁরা ত্রাস হিসেবে পরিচিত। ডাকাতদের নাম এলাকার মানুষের মুখে মুখে হলেও তাঁদের আস্তানায় কোনো দিন পুলিশের পা পড়েনি বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন।

এলাকার লোকজন জানান, গত ২৫ মার্চ রিজার্ভপাড়ার ডাকাত সরদার আবদুর রহমানকে তুলে নিয়ে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে আরেকটি ডাকাত দলের সদস্যরা। ওই দিন সন্ধ্যায় মালুমঘাট স্টেশন থেকে অস্ত্রের মুখে আবদুর রহমানকে তুলে নেওয়া হয়। আবদুর রহমান আরেক ডাকাত সরদার আমির হোসেন হত্যা মামলার আসামি ছিলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রিজার্ভপাড়ার এক বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, রিজার্ভপাড়া ডাকাতের অভয়ারণ্য। তিনি একটি কলেজে চাকরি করেন। ডাকাতদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে পাঁচ বছর ধরে তিনি অন্য এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। ডাকাতেরা এক রাতে তাঁর মেয়েকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করলেও তিনি আইনের আশ্রয় নিতে পারেননি। রাত গভীর হলে তাঁর বসতঘরকে ডাকাত সদস্যরা ব্যবহার করতেন। সেখানে গরু-ছাগল জবাই করে খেতেন। সে সময় পুলিশের সহযোগিতা চেয়েও পাননি তিনি।

গত ৬ মার্চ ডুলাহাজারা এলাকায় মহাসড়ক থেকে ট্রাক থামিয়ে ১৮টি গরু লুট করে ডাকাতেরা। পরে ডুলাহাজারার রিংভং এলাকা থেকে পুলিশ ১৭টি গরু উদ্ধার করে। আরেকটি গরু আস্তানায় নিয়ে জবাই করে খেয়ে ফেলে ডাকাত সদস্যরা। এ ঘটনায় চকরিয়া থানায় মামলা হয়।

গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি ডুলাহাজারার সাফারি পার্কের সামনের মহাসড়ক থেকে চন্দনাইশের ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিনের ছয়টি গরু লুট করে ডাকাতেরা। পরে এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা নিয়ে পাঁচটি গরু ফেরত দিলেও পরদিন ২৬ ফেব্রুয়ারি আরেকটি গরু জবাই করে ভূরিভোজ করে ডাকাত সদস্যরা।

২০২৩ সালের ৬ মে রাতে রিজার্ভপাড়ায় ডাকাত দলের সদস্যদের মাতৃগর্জনগাছ (মাদার ট্রি) কাটার খবর পেয়ে অভিযানে নামেন ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের বনকর্মীরা। এ সময় বনকর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়। ডাকাত দলের ছোড়া গুলিতে চার বনকর্মী গুলিবিদ্ধ হন। তাঁরা হলেন গোলাম জিলানী মিয়াজী, সূর্য কুমার সিংহ, শাহিদুল মোস্তফা, রহিম উদ্দিন। আহত ব্যক্তিরা সবাই মালুমঘাট বন বিটের গার্ড।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, প্রতি রাতে মাদার ট্রি ও বনের গাছ কাটছে ডাকাতেরা। তাতে রিজার্ভপাড়া গাছশূন্য হয়ে পড়েছে। ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মেহরাজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, রিজার্ভপাড়ায় রাতের আঁধারে গাছ কাটে ডাকাতেরা। যতটুকু সম্ভব বাধা দেওয়া হয়। তবে সেখানকার ডাকাতেরা সংঘবদ্ধ ও শক্তিশালী। কথায় কথায় গুলি ছোড়ে তারা।

চকরিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রাকিব উর রাজা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আবদুর রহমান হত্যার পর আমরা ১৫ জন ডাকাতকে ধরে জেলে পাঠিয়েছিলাম। গত ১ মাসের মধ্যে ১২ জন ডাকাত জামিনে বেরিয়ে আসে। এর মধ্যে মঙ্গলবার গ্রেপ্তার হেলাল উদ্দিনও রয়েছেন। সেনাবাহিনীর সহায়তায় ডুমখালী, রিজার্ভপাড়া ও কাটাখালীতে একটা যৌথ অভিযান চালানো হবে। ডাকাতদের আস্তানা গুঁড়িয়ে দিতে হবে।’

ডাকাতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সোচ্চার মানুষ

সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট তানজিম সারোয়ার খুনের ঘটনায় ফুঁসছেন কক্সবাজারের চকরিয়ার বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ। গতকাল মঙ্গলবার অন্তত চারটি স্থানে পৃথক সমাবেশ, মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন লোকজন। সমাবেশে চকরিয়ার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কাটাখালী ও রিজার্ভপাড়া এলাকায় ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অবস্থান করা অন্তত ১২৬ জন ডাকাতকে গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়।

একই দাবিতে গতকাল বেলা দুইটার দিকে ডুলাহাজারা ডিগ্রি কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল করেন। বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে চকরিয়া পৌর শহরের পুরোনো বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মানববন্ধনে বক্তব্য দেন চকরিয়া আবাসিক মহিলা কলেজের শিক্ষক শওকতুল ইসলাম, চকরিয়া ক্যান্টনমেন্ট স্কুলের শিক্ষক মাসুমুল হাকিম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চকরিয়ার প্রতিনিধি সায়েদ হাসান, মোবারক হোসাইন, শামসুল আলম প্রমুখ।

সায়েদ হাসান বলেন, মালুমঘাটের রিজার্ভপাড়া ও কাটাখালী এলাকা ডাকাত দলের আস্তানা। এই দুই এলাকা ডুলাহাজারার ‘ক্যানসার’। ওখানে ১২৬ জনের মতো সশস্ত্র ডাকাত রয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ, চুরি, ধর্ষণসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে। এই দুই এলাকার ডাকাতেরাই সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট তানজিম সারোয়ারকে হত্যা করেছে। তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। মালুমঘাটকে ক্যানসারমুক্ত করতে হবে।

 

সংবাদদাতা/ ইলিয়াস

Facebook
WhatsApp
Twitter

এ সম্পর্কিত আরো খবর

সম্পাদকঃ

সুভাষ সাহা

যুগ্ন সম্পাদকঃ

কাজী কবির হোসেন

ঠিকানাঃ

নারায়ণগঞ্জ অফিসঃ
পদ্মা সিটি প্লাজা, কক্ষ নংঃ ২২২, ৫৫/বি
এস, এম মালেহ রোড, টানবাজার
নারায়ণগঞ্জ-১৪০০

যোগাযোগ

ফোনঃ ৭৬৪০৬৯৯
মোবাইলঃ ০১৭১১৫৬১৩৯০
ইমেইলঃ bisherbashi.com.bd@gmail.com

USA OFFICE:

Wasington DC Bureau Chief:
Dastagir Jahangir,
3621 Columbia Pike Suit #104
Arlington USA, VA
22204
Phone: 7036770679
Email: tugrilcz@gmail.com

 

Website Design & Developed By
MD Fahim Haque
<Power Coder/>
www.mdfahim.com
Web Solution – Since 2009

error: Content is protected !!