একবার অতিবৃষ্টিতে তাঁর সব পুকুর তলিয়ে যায়। প্রায় ৭০ লাখ টাকার মাছ এক রাতের বৃষ্টিতে ভেসে যায়। এই শূন্য অবস্থান থেকেও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন জাহাঙ্গীর। তিনি জানেন, প্রতিটি উদ্যোগে লাভ-লোকসানের হিসাব রাখতে হবে সমানে সমান। স্ত্রীর গয়না বেচে পুনরায় শুরু করেন নতুন করে। লাভের সূত্র তিনি শিখে নিয়েছেন আগেই। ফলে ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগেনি। এখন ৪৬টি পুকুরের বাইরেও নতুন প্রজেক্ট চালু করছেন; আরো বেশি জায়গাজুড়ে মাছ চাষ। চাষের পাশাপাশি নিত্যনতুন মাছের জাত নিয়েও তাঁর রয়েছে নিজস্ব গবেষণা। দেশি জাতের শিং মাছকে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে চাষের আওতায় আনায় এর মধ্যে জাতীয় পর্যায়ে পেয়েছেন স্বর্ণপদক।
জাহাঙ্গীরের মতে, মাছ ব্যবসার জন্য এখন প্রতিকূল সময়। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে নানা সমস্যার মুখোমুখি মাছ চাষিরা। মাছের খাবার ও ওষুধের দাম বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে তিনি লাভের কথা চিন্তা করছেন না। নানাভাবে চেষ্টা করছেন ব্যবসাটা ধরে রাখতে। বিরূপ পরিবেশেও টিকে থাকার জন্য মাছ চাষের পাশাপাশি কৃষির নতুন কৌশল শিখে নিয়েছেন জাহাঙ্গীর। পুকুরের পারজুড়ে লাগিয়েছেন পেঁপে ও কলা গাছ। আবাদ করছেন নানা শাক-সবজি। বলছেন, এসব থেকে মাছ চাষের খরচ উঠে যায়।
জাহাঙ্গীরের অনুপ্রেরণায় এলাকার অনেকে মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। দেশে এখন প্রায় চার কোটি লোক মৎস্য খাতে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে জড়িত। মাছ চাষের জোয়ারে সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে আধুনিক সব কৌশল। তরুণ শিক্ষিত যুবক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানও প্রযুক্তির সহায়তায় আধুনিক মাছ চাষ শুরু করেছে। আরএএস (রিসার্কুলেটিং অ্যাকোয়া কালচার সিস্টেম), বায়োফ্লক, বটম ক্লিন কিংবা ইনপন্ড রেসওয়ে সিস্টেমসহ নানা প্রযুক্তির ব্যবহারে যেমন মাছের উৎপাদনে বাড়ানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত, তেমনি সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা জাতের মাছ চাষের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। অনেক ক্ষেত্রেই মিলছে সফলতা।
মাছ উৎপাদনে বিশ্বের অনন্য দৃষ্টান্ত যেমন আছে, তেমনি এ নিয়ে আশঙ্কার বিষয়ও আছে। একদিকে বিশ্বে মাছের উৎপাদন বাড়ছে, অন্যদিকে মোট মাছের মজুদও কমে যাচ্ছে। ১৯৯০ সালে মাছের মজুদ ছিল ৯০ শতাংশ। ২০১৮ সালে সেটা কমে ৬৫ শতাংশে এসে ঠেকেছে। আবার মাছের অনেক জাত হারিয়েও যাচ্ছে। হারিয়ে যাওয়া জাত সংরক্ষণে কাজ করছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট। পাশাপাশি জাহাঙ্গীরের মতো উদ্ভাবনী মানসিকতার মাছ চাষিরাও কাজ করছেন দেশি জাতের মাছকে চাষের আওতায় নিয়ে আসার। জাহাঙ্গীরের মতো সংগ্রামী মানুষের হাত ধরেই দেশের মৎস্য খাত আজ পৌঁছে যাচ্ছে অন্য মাত্রায়। একদিকে পূরণ হচ্ছে আমিষের চাহিদা, অন্যদিকে তৈরি হচ্ছে কর্মসংস্থানের পথ।
সংবাদদাতা/ ইলিয়াস