লেখক : সুভাষ সাহা : শৈশব থেকেই সার্বজনীন শব্দটির সাথে আমার পরিচয়। কিভাবে? সনাতনীদের বারো মাসে তের পার্বনের মধ্যে এই দুর্গা পূজাকে বলা হয় ব্যয়বহুল অনুষ্ঠান। রাজকীয় পূজা। রাজা-বাদশা তথা ধনাঢ্য পরিবারগুলো একসময় এই পূজার আয়োজন করতেন। অনেকটা পারিবারিক পূজা। কালের বিবর্তনে রাজা-বাদশাদের ব্যয়বহুল দুর্গা পূজা ধর্মপ্রাণ সাধারণ সনাতনীরা চাঁদা তুলে সম্মিলিতভাবে পাড়ায় মহল্লায় দুর্গা পূজার আয়োজন শুরু করেন।
অনেকের ভাষায় বারোয়ারী পূজা। সবার জন্য উন্মুক্ত। সকল শ্রেণীর হিন্দু নারীপুরুষ শিশু পাঁচদিনব্যাপী দুর্গা পূজা উৎসব ব্যাপকভাবে উপভোগ করেন। একক থেকে সংঘবদ্ধ বহুমাত্রিক রূপ। বিভিন্ন ক্লাব বা সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত দুর্গা পূজা সার্বজনীন তথা বারোয়ারী দুর্গা পূজা নামে অভিহিত হয়। স্বর্ণযুগে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের পক্ষ থেকেও বারোয়ারী দুর্গা পূজায় চাঁদা দিয়ে স্বতস্ফূর্তভাবে সহযোগিতার সংস্কৃতি ছিল সাধারণ ঘটনা। অন্যরকম স্মৃতি।
এখনো কলকাতা শহরের পুরনো ধনী পরিবারগুলোর দুর্গাপূজা “বনেদি বাড়ির পূজা” নামে পরিচিত। পারিবারিক দুর্গাপূজাগুলোতে শাস্ত্রাচার পালনের উপরেই বেশি জোর দেওয়া হয়। পূজা উপলক্ষে বাড়িতে আত্মীয়-সমাগম হয়ে থাকে। অন্যদিকে আঞ্চলিক স্তরে এক একটি অঞ্চলের বাসিন্দারা যৌথভাবে যে দুর্গাপূজার আয়োজন করেন তা বারোয়ারি পূজা বা সর্বজনীন পূজা নামে পরিচিত। ভারতে ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনের সময় সর্বজনীন পূজা শুরু হয়।
মূলতঃ দেবী দুর্গাকে মাথায় রেখেই দেশমাতা বা ভারতমাতা বা মাতৃভূমির জাতীয়তাবাদী ধারণা বিপ্লবের আকার নেয়।
দেবী দুর্গার ভাবনা থেকেই বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বন্দে মাতরম গানটি রচনা করেন যা ভারতের স্বাধীনতা-আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্র। সুভাষচন্দ্র বসু প্রমুখ বিপ্লবী ও জাতীয়তাবাদী নেতারা বিভিন্ন সর্বজনীন পূজার সঙ্গে যুক্ত থাকতেন। এখন সর্বজনীন পূজায় “থিম” বা নির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিক মণ্ডপ, প্রতিমা ও আলোকসজ্জার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। থিমগুলোর শ্রেষ্ঠত্ব বিচার করে বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে “শারদ সম্মান” নামে বিশেষ পুরস্কারও দেওয়া হয়।
সার্বজনীন’ শব্দের অর্থ ‘সকলের মঙ্গল বা সবার হিত বা কল্যাণ বা সকলের মঙ্গলের জন্য কৃত বা সকলের জন্য উদ্দিষ্ট’। শ্বাশত বাংলায় সার্বজনীন পূজা নিয়ে বিতর্কের অবতারণা মোটেও কাম্য নয়। এককথায় এটি সনাতনীদের সার্বজনীন। অন্যদের গায়ে মাখার চিন্তা অর্থহীন।
সংবাদদাতা/ ইলিয়াস