অনলাইন ডেস্ক : পিরোজপুর জেলার নাজিরপুরে ‘রাজ-লক্ষ্মী কলেজের অধ্যক্ষ মিলন কান্তি মন্ডল ও শিক্ষক প্রতিনিধি সজল রায়ের বিরুদ্ধে কোটি টাকার নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগে এলাকায় তোলপাড়। এ ব্যাপারে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে লিখিত নালিশ করে প্রতিকার চেয়েছেন এলাকার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আতিক হাসান। অভিযোগ গ্রহন নম্বর ২৫০৩। একই বিষয়ে গত ৬ অক্টোবর সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আরেকটি অভিযোগ করেছেন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি জাহাঙ্গীর হোসাইন,অভিযোগ গ্রহণ নং ৪৯৪১।
উল্লেখ্য,রাজ- লক্ষ্মী মহাবিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন বিশিষ্ট আয়কর আইনজীবী সুকুমার মৃধা। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বোর্ড গঠন করে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো’ ব্যানবেইজ তৈরি হয়। পরবর্তীতে এমপিও ভুক্তিতে বিলম্ব হওয়ার কারনে কিছু শিক্ষক অন্যত্র চলে গেলে পদগুলো শূন্যই থাকে। পরবর্তীতে ২০২২ সালে মহাবিদ্যালয়টি এমপিওভুক্তির পর শূন্য পদগুলোতে অনৈতিকভাবে পিছনের তারিখে নিয়োগ দেখিয়ে কিছু শিক্ষককে এমপিওভুক্তি করা হয়।
ওই মহাবিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক অপূর্ব বালা,হিসাব বিজ্ঞানের শিক্ষক জয়দেব,বাংলা সুব্রত হালদার,কৃষি বিজ্ঞানের শিক্ষক অভিজিত রায় ও সমাজকল্যাণ বিষয়ের শিক্ষক গৌরাঙ্গ বিশ্বাসের জায়গায় অন্য শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জাল জালিয়াতির মাধ্যমে বানোয়াট বোর্ড গঠন করে এসব শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়। এসব নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ত্রুটির অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় ইতোমধ্যে বাংলা ও পৌরনীতি বিষয়সহ ছয়টি বিষয়ের এমপিও এখনো আটকে আছে বলে জানা গেছে।
এজন্য অবশ্য জোর তদবির এর গুঞ্জন শোনা যায়। এছাড়াও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী নিয়োগে অবৈধভাবে অর্থ গ্রহন করে নিয়োগের তৎপরতা চলছে একই সূত্রে জানা গেছে। ইতোপূর্বে এই মহাবিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে যাওয়া পূর্ববর্তী শিক্ষকের জায়গায় পিছনের তারিখ উল্লেখ করে নিয়োগের জন্য প্রত্যেক শিক্ষকের কাছ থেকে ১৫ লক্ষ টাকার অধিক নেওয়া হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এভাবে বেআইনি নিয়োগ চক্রের সদস্য শিক্ষক প্রতিনিধি সজল রায় ও কলেজ অধ্যক্ষ মিলন কান্তি মন্ডল হাতিয়ে নিয়েছেন বিপুল অংকের টাকা।
এছাড়াও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী নিয়োগেও টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে এই দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়োগ বানিজ্যের মাধ্যমে উপার্জিত টাকায় তিন তলা বাড়ি করেছেন কলেজ অধ্যক্ষ মিলন কান্তি মন্ডল। শিক্ষক প্রতিনিধি সজল রায় বরিশালে জায়গা কিনেছেন এবং স্ত্রীর নামে সোনালী ব্যাংকে এফডিআর এবং ৩ লাখের অধিক টাকা মূল্যে ক্রয় করেছেন এফজেড ব্রান্ডের একটি মটর সাইকেল। অভিযোগ রয়েছে,শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের উপ-পরিচালক বিপুল চন্দ্র বিশ্বাসের যোগসাজসে কয়েকজন শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে এবং বাকীদের শিক্ষকদের এমপিও করার জন্য জোর চেস্টা চলছে।
বিপুল চন্দ্র বিশ্বাসের সাথে যোগাযোগে সহায়তা করেন শিক্ষক প্রতিনিধি সজল রায়। উল্লেখ্য, এই মহাবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সুকুমার মৃধা দীর্ঘদিন কারাবাসে থাকার কারনে অধ্যক্ষ মিলন কান্তি মন্ডল এবং শিক্ষক প্রতিনিধি সজল রায় প্রতিষ্ঠানটিকে অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন। উপ-পরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ,বরিশাল অঞ্চলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তবে,এ ব্যাপারে খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন। এদিকে পিরোজপুর জেলা শিক্ষা অফিসার ইদ্রিস আলী আযিযী বলেন,আমাদের কাছে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অভিযোগ আসে। কাগজপত্র না দেখে কিছু বলা যাচ্ছে না। তিনিও বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন।
সংবাদদাতা/ ইলিয়াস