হত্যায় ব্যবহার করা হচ্ছে গুলি
সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় জেনেভা ক্যাম্পে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হয় কাল্লু ওরফে জানে নেওয়াজ। নিহতের স্ত্রী আফসানা বলেন, গত বুধবার রাতে ক্যাম্প এলাকায় তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়। মোহাম্মদপুর থানার ওসি (তদন্ত) হাফিজুর রহমান বলেন, এলাকার আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ অভিযান চলছে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার কালারপুল এলাকায় প্রকাশ্যে ভারী অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয় একদল চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী। তাদের মধ্যে শটগান হাতে থাকা সন্ত্রাসী সাজ্জাত হোসেনের নাম জানতে পেরেছে পুলিশ। এক ব্যবসায়ীর কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে অস্ত্র নিয়ে সেখানে হামলা চালান তিনি এবং তাঁর সহযোগীরা।
এই সাজ্জাত বাহিনীর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় গত সোমবার চট্টগ্রামে দিনদুপুরে আফতাব উদ্দিন তাহসীন নামের স্থানীয় এক তরুণকে গুলি করে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ পেয়েছে পুলিশ। পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, অবৈধ অস্ত্রে খুনাখুনির অভিযোগ পেয়ে তদন্ত চলছে। সেই সঙ্গে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে যৌথ বাহিনী অভিযান শুরু করেছে। যৌথ বাহিনীর অভিযানে গত ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত ৩১৮টি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এই সময়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৭৪ জন সন্ত্রাসীকে। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে রিভলভার ১৯টি, পিস্তল ৭৬টি, রাইফেল ২২টি, শটগান ৩৭টি, পাইপগান আটটি, শ্যুটার গান ৪৩টি, এলজি ৩১টি, বন্দুক ৪৮টি, একে৪৭ একটি, এসএমজি পাঁচটি, গ্যাসগান চারটি, এয়ারগান ১০টি, এসবিবিএল ১০টি, টিয়ার গ্যাস লঞ্চার দুটি এবং থ্রি কোয়ার্টার দুটি।
পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, এখনো অনেক অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে থানা থেকে লুট হওয়া বেশির ভাগ অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি। সেসব অস্ত্রও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ কাঁচাবাজার মার্কেটের অফিসকক্ষে ঢুকে মার্কেটটির সভাপতি আবুল হোসেন এবং তাঁর ছোট ভাই মাহবুবকে প্রকাশ্যে গুলি করে সন্ত্রাসীরা। এভাবে গত মাসে এ এলাকায় একাধিক গুলির ঘটনা ঘটে।
চুরি ডাকাতি ছিনতাইয়ে বিপাকে পুলিশ
মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত, এমনকি দিনদুপুরেও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে রাজধানীতে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, ছিনতাই প্রতিরোধে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কার্যত কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। যদিও আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে রাজধানীর ৫০টি থানার পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি গোয়েন্দারা কাজ করছেন।
এর মধ্যে ডাকাতির ঘটনা বিশ্লেষণ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, সড়ক, বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তারা বেশি হানা দিয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংকের গ্রাহকদেরও টার্গেট করা হচ্ছে। আর ভোরের দিকে বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চ টার্মিনাল, রেলস্টেশন ও নিরিবিলি অন্ধকার সড়কে রিকশাযাত্রীদের নিশানা বানিয়েছে ছিনতাইকারী ও ডাকাতদলের সদস্যরা। রাজধানীর সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ডিএমপি কমিশনার মো. মাইনুল হাসান বলেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ অভিযান চলছে। এরই মধ্যে অনেক সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার হয়েছে।
শিল্প-কারখানায় টানা অস্থিরতা
সরকারের নানামুখী উদ্যোগ সত্ত্বেও বিভিন্ন দাবিতে সড়কে আন্দোলন ও বিক্ষোভ প্রদর্শনের ঘটনা থেমে নেই। সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। আশুলিয়া অঞ্চলের পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন বেশি। গত ৩০ সেপ্টেম্বর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর গুলিতে একজন শ্রমিক নিহত হন। এরপর সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুর ১৪ নম্বরে গুলিতে দুই গার্মেন্টসকর্মী গুলিবিদ্ধ হন। গুলিবিদ্ধ পোশাক শ্রমিক আল আমিন (১৮) ও ঝুমা আক্তারকে (১৫) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মাজার আখড়া ধর্মীয় উপাসনালয়ে ভাঙচুর
ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় গত তিন মাসে বেশ কিছু মাজার, ধর্মীয় উপাসনালয় ও আখড়ায় হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল মুনীম চৌধুরী বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে র্যাব তৎপর রয়েছে।
মানবাধিকারকর্মী ও অপরাধ বিশ্লেষক নুর খান বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। এরই মধ্যে গুলিতে অনেক মানুষ মারা গেছে। এতে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। দ্রুত এসব ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা না হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে।
সংবাদদাতা / ইলিয়াস