অনলাইন ডেস্ক : মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে প্রধান অগ্রাধিকার দিয়ে সুদহার বাড়ানোর পাশাপাশি বাজারে মুদ্রা সরবরাহ কমাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগে সমর্থন দিয়ে সরকার ট্রেজারি বিল ও বন্ডের বিপরীতে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে থাকা আগের দায় শোধ করছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের মাধ্যমেও বাজার থেকে ঋণ নেওয়া হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে ৬৫ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা নিয়ে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পরিশোধ করেছে ৪৪ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকা। এতে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের সঞ্চয় ক্ষমতা কমেছে। অক্টোবর পর্যন্ত আমানত বেড়েছে মাত্র ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। এর মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পরিশোধ করায় মুদ্রাবাজার আরও সংকোচন হয়েছে। ট্রেজারি বিল এবং বন্ডে এখন ১১ দশমিক ৬৫ থেকে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত সুদ মিলছে। যে কারণে এসব উপাদানে ব্যাংকের পাশাপাশি ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ অনেক বাড়ছে। এর প্রভাবে ঋণের সুদহার বেড়ে ১৩ থেকে ১৬ শতাংশে উঠেছে। উচ্চ সুদের পাশাপাশি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে এখন আশানুরূপ বিনিয়োগ হচ্ছে না। এতে করে গত অক্টোবর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ বেড়েছে মাত্র ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। এসব কারণে কেবল সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ কতটুকু কার্যকর, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
বেসরকারি এনসিসি ও মেঘনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নূরুল আমিন সমকালকে বলেন, বাংলাদেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে সুদহার বা শুল্ক বড় কোনো বিষয় বলে মনে হয় না। কেননা, আগে সুদহারে ৯ শতাংশ সীমা রেখেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ হয়নি। এখন সুদহার বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতি কমছে না। অবশ্য এখনকার মূল্যস্ফীতির যে তথ্য দেওয়া হচ্ছে, সেখানে হয়তো আগের মতো এদিক-সেদিক নেই। যে কারণে মূল্যস্ফীতি একটু বেশি দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, এখন পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থায় জোর দিতে হবে। উৎপাদক থেকে সরাসরি কীভাবে বাজারে পণ্য সরবরাহ করা যায়, ভাবতে হবে। একই সঙ্গে পরিবহনসহ অন্যান্য বিষয়েও কার্যকর ব্যবস্থাপনা দরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের দায়িত্ব নিয়ে ড. আহসান এইচ মনসুর নতুন করে টাকা না ছাপানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে সেই অবস্থান থেকে আবার সাময়িক সময়ের জন্য সরে এসেছেন। এস আলম গ্রুপসহ বিভিন্ন জালিয়াতির কারণে সংকটে থাকা ছয়টি ব্যাংককে ২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। তবে এই টাকার ব্যাপক প্রভাব যেন বাজারে না পড়ে, সে জন্য আবার ট্রেজারি বিল ও বন্ডের বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের মাধ্যমে বাজার থেকে টাকা তুলে নেওয়া হচ্ছে। গত ২০ নভেম্বর থেকে ৫ নিলামে এরই মধ্যে ২ হাজার ৮৪ কোটি টাকা তোলা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার চলতি বছরের সর্বশেষ নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। করোনা-পরবর্তী অর্থনীতিতে বাড়তি চাহিদা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ২০২১ সালের শেষ প্রান্তিক থেকে মূল্যস্ফীতি বাড়তে শুরু করে। বিগত সরকারের শেষ দিকে এসে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে প্রধান অগ্রাধিকার ঘোষণা করে মুদ্রা সরবরাহ কমানোর কথা বলা হয়। যদিও তথ্য গোপন করে গত অর্থবছরের শেষ তিন মাসে অতিরিক্ত প্রায় ৪১ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে সরকারকে দেওয়া হয়। এখন তা আবার কমিয়ে সীমার নিচে নামানো হয়েছে।
সংবাদদাতা/ ইলিয়াস