অনলাইন ডেস্ক : ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল মাত্র ৫ বছরে অন্তত ৫০ কোটির টাকা মালিক হয়েছেন খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক উত্তম কুমার দেব।মুজিব বর্ষের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের কাজ ভাগিয়ে নেন তিনি। আর এ কাজে তিনি সহযোগিতা নিয়েছেন সাবেক পাবর্ত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার। বাজে কাজ করায় কিছুদিনের মধ্যে সেসব ঘরে ফাটল তৈরি হয়। এভাবেই শূন্য থেকে কোটিপতি উত্তম।

শুধু তাই নয়, সরকারি ব্রিজ ভেঙে লোহার রড চুরি, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, গুচ্ছগ্রামের প্রকল্প চেয়ারম্যান নিয়োগ বাণিজ্য, সরকারি টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে। উত্তম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিজয় কুমার দেবের ছোট ভাই। ভাইয়ের প্রভাব খাটিয়ে উত্তম দেব অবৈধভাবে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। পানছড়িতে তার সৃষ্টি উত্তম বাহিনী; ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন প্রতারণার কারণে ২০১১ সালে এলাকা থেকে বিতাড়িত হয়ে চট্টগ্রামে আশ্রয় নেয় উত্তম দেব। ২০১৮ সালের পানছড়ি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তার বড় ভাই বিজয় নির্বাচনে অংশ নেন। সেই নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নেওয়ার সুযোগে পানছড়িতে ফেরেন তিনি। এরপর থেকে নানা অপকর্মে জড়ান তিনি।

২০২৩ সালে সরকারি তিনটি ব্রিজের লোহার রড চুরির অভিযোগে উঠে তার বিরুদ্ধে। আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করলে ১৫ দিন জেল খাটেন তিনি। পরে জামিনে বেরিয়ে আসলেও রড চুরির ঘটনায় উত্তর কুমার দেবকে প্রধান আসামি করে চার্জশিট দেয় পুলিশ। চুরির অভিযোগে জেল খাটার পরও তার অপকর্ম থেমে থাকেনি।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের তৎকালীন উপজেলা প্রকৌশলী অরুণ কুমার দাসের যোগসাজশে এলজিইডির সব টেন্ডারের নিয়ন্ত্রণ নেয় উত্তম। পানছড়িতে এলজিইডির ৩০ সরকারি বিদ্যালয় নির্মাণে এলাকায় ঠিকাদারি পায় উত্তম। ২০২২ সালে আব্দুল করিম নামে এক ব্যক্তিকে এলাকাছাড়া করে উত্তম বাহিনী। পানছড়ি বাজারের কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ দখল নিতেই ওই ব্যক্তি ও পরিবারকে এলাকা ছাড়া করা হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী আব্দুল করিম সংবাদ সম্মেলন করেও কোনো সুবিচার পাননি। তাকে নানাভাবে হেনস্থা করে উত্তমের নিজস্ব বাহিনী।

এছাড়া সাবেক পাবর্ত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার প্রভাব খাটিয়ে মুজিব বর্ষের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের কাজ ভাগিয়ে নেন তিনি। নিম্নমানের কাজ করায় কিছুদিনের মধ্যে সেসব ঘরে ফাটল তৈরি হয়। এছাড়া উত্তম-বিজয়ের অনুমতি ছাড়া কেউ গুচ্ছ গ্রামে প্রকল্প চেয়ারম্যান হতে পারতেন না। প্রকল্প চেয়ারম্যান নিয়োগে আদায় করতেন ২ থেকে ৩ লাখ টাকা। এছাড়া ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে চেঙ্গী নদী থেকে বালু উত্তোলন করতেন তিনি। পানছড়ি বাজারে তার নামে রয়েছে মার্কেট ও প্লট। চট্টগ্রামের অভিজাত খুলশিতে ১০তলা ভবনও রয়েছে।

৫ আগস্ট সরকার পতনের পর পানছড়ির দুর্গম দুধকছড়ায় আশ্রয় নেয় উত্তমকুমার দেব। ১৬ আগস্ট তিনি অবৈধ পথে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় আশ্রয় নেন। এখনো সেখানে অবস্থান করছেন তিনি। পালানো সময় তিনি অন্তত ৫ থেকে ৬ কোটি টাকা নিয়ে যান বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।

 

সংবাদদাতা / ইলিয়াস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!