আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২০শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, সকাল ১০:৪৮
মাধ্যমিকে বিভাগ বিভাজনসহ অন্যান্য সিদ্ধান্ত

মাধ্যমিকে বিভাগ বিভাজনসহ অন্যান্য সিদ্ধান্ত

প্রকাশিতঃ
অনলাইন ডেস্ক : পূর্ববর্তী সরকারের তথাকথিত নতুন শিক্ষাক্রমে নবম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের বিভাগ বিভাজন অর্থাৎ বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য তুলে দেওয়া হয়েছিল। এর পেছনে শক্ত কোনো যুক্তি ছিল না। যে শিক্ষার্থী গণিত বোঝে না, তাকেও গণিত ও বিজ্ঞান পড়তে হবে, যে শিক্ষার্থীর গণিত, বিজ্ঞানে আগ্রহ বেশি তাকেও সাধারণ বিজ্ঞান অর্থাৎ বিজ্ঞানে যাদের আগ্রহ নেই তাদের জন্য দায়সারা গোছের যে বিজ্ঞান সিলেবাস সেই বিজ্ঞান পড়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। একইভাবে বাণিজ্যে পড়ার প্রতি যাদের কোনোই আগ্রহ নেই, তাদেরও সেই বিষয় পড়তে হবে।

এটি কোনো সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নয়। আমি তৎকালীন মেম্বার কারিকুলামকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, বিজ্ঞান শিক্ষার্থীরা যদি বিজ্ঞানের বিষয় আরো বিশদভাবে জানতে চায় তাদের সেটি করতে দেওয়া উচিত কি না। তিনি উত্তরে বললেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান পড়ে আমাদের দেশকে সার্ভ করে না, তারা আমেরিকাকে সার্ভ করে। অতএব মাধ্যমিকে  শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান পড়ার কোনো দরকার নেই।
আমি এ কথার উত্তরে বলেছিলাম, বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা আমেরিকা চলে যায় বলে তারা বিজ্ঞান পড়বে না? তার কোনো সদুত্তর পাইনি, অর্থাৎ আমাদের কথার কোনো গুরুত্ব তাদের কাছে ছিল না। তাঁরা দু-চারজন যা ভাবতেন তা-ই করতেন। যাদের জন্য বিজ্ঞান, মানবিক, বাণিজ্য বিভাগ বা যাদের ছেলেমেয়ে এসব বিভাগে পড়বে তাদের সঙ্গে কথা না বলে এনসিটিবির কয়েকজন মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে সবাইকে সব বিষয় পড়তেই হবে। যার সাহিত্য ও ইতিহাস ভালো লাগে, কিন্তু বিজ্ঞানে আগ্রহ কম কিংবা বোঝে না তাদেরও বিজ্ঞান পড়তে হবে।
বিষয়টি নিয়ে বারবার বলেছি, লিখেছি কিন্তু তাঁরা তাঁদের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। তাঁরা সবাইকে সব বিষয় পড়িয়ে পূর্ণ জ্ঞান দান করার কথা বলেছিলেন। আমি বলেছিলাম যে বিজ্ঞানে পড়েও অনেকে নিজ আগ্রহে সাহিত্য পড়েন, কিন্তু জোর করে পড়ানো যায় না। এটি আমি প্রত্যক্ষভাবে দেখেছি অনেক মেডিক্যালের শিক্ষার্থী, বুয়েটের শিক্ষার্থী নিজ আগ্রহে সাহিত্যের বহু বই পড়ে ফেলেছেন। এটি সবাই করবে না।
কিন্তু যাদের আগ্রহ আছে তারা করবে। তাই বলে জোর করে সবাইকে সব কিছু পড়তে বলার মানে হলো কুইনিন খাওয়ানো। দ্বিতীয়ত, উচ্চ মাধ্যমিকে গিয়ে হঠাৎ করে বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও মানবিকে বিশাল সিলেবাস অনুসরণ করতে পারা অনেক শিক্ষার্থীর জন্য মানানসই হয় না। কারণ উচ্চ মাধ্যমিকে সময় কম, বিষয় ও বিষয়ের কনটেন্ট অনেক বেশি। ফলে অনেকেই তা ডাইজেস্ট করতে পারে না। তাই ফল খারাপ করে। এসব কোনো চিন্তাই তাদের স্পর্শ করেনি।
অন্তর্বর্তী সরকার মাধ্যমিকে বিভাজনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের অনেক বিষয় ফিরিয়ে আনছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২ অনুসারে প্রণীত বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষাভিত্তিক পাঠ্যপুস্তকগুলোর একটি সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করা হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা এক শিক্ষাবর্ষের মধ্যেই পাঠ্যসূচিটি সম্পন্ন করতে পারে। অর্থাৎ এখন যারা নবম শ্রেণিতে পড়ে তারা বিভাগ বিভাজনের সুযোগ পায়নি, তারা দশম শ্রেণিতে উঠে বিভাগ বিভাজনের সুযোগ পাবে যেটি সংক্ষিপ্ত হবে।

এটি একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত, যা শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষাসংক্রান্ত ব্যক্তিবর্গের দুশ্চিন্তাকে অনেকটাই লাঘব করবে। আরো বলা হয়েছে শিক্ষাবিদ, শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ, মূল্যায়ন বিশেষজ্ঞ, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, সংশ্লিষ্ট প্রশাসক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও অভিভাবক প্রতিনিধিদের সহযোগিতায় ২০২৫ সালে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম চূড়ান্ত করা হবে, যা ২০২৬ সাল থেকে পরিপূর্ণরূপে কার্যকর করা হবে। এটিও চমৎকার প্রস্তাব। কারণ পূর্ববর্তী কারিকুলাম পরিবর্তন বা পরিমার্জনের সময় মুখচেনা কিছু শিক্ষাবিদ যাদের মাঠের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই, বর্তমান শ্রেণিকক্ষ সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই, তাঁদের নিয়ে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো। আর বেশি সময়ই শিক্ষা প্রশাসকদের নিয়ে মিটিং করা হতো, যাদের বই সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না। কারণ এখানে অর্থের ব্যাপার আছে।

আমরা আর একটি কথা ভুলে যাই যে শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশি হচ্ছে শিক্ষক ও শিক্ষা গবেষকরা। কারণ তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টির সঙ্গে লেগে থাকেন, বলা যায় সারা জীবন। শিক্ষা প্রশাসকরা কয়েক বছর মন্ত্রণালয়ে থাকেন। অথচ তাঁদের সিদ্ধান্তকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাঁরা এক মন্ত্রণালয় থেকে আরেক মন্ত্রণালয়ে ঘুরতেই থাকেন। শিক্ষার সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক কম। অথচ পূর্ববর্তী কারিকুলামের কাজের সময় তাঁরাই মিটিং, ওয়ার্কশপে থাকতেন। আবার মাউশি ও এনসিটিবিতে যেসব শিক্ষক ডেপুটেশনে বা বদলি হয়ে আসেন তাঁরাও কিন্তু বই, কারিকুলাম, শ্রেণিকক্ষ এগুলোর কথা ভুলে যান। তাঁরা শিক্ষকের চেয়ে কর্মকর্তা পরিচয় দিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। বই পড়া, শ্রেণিকক্ষের অবস্থার কথা কিন্তু তারা ভুলে যান। এই শ্রেণিকেও গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাসংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলোতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এগুলো সবই কিন্তু ভুল ও আংশিক সিদ্ধান্ত। তাই বর্তমান সরকার যা বলেছে তা যুক্তিযুক্ত।

জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২২ ও নতুন পুস্তক মুদ্রণ এবং চলমান মূল্যায়ন পদ্ধতিসংক্রান্ত জরুরি নির্দেশনায় বলা হয় ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে চলমান পাঠ্যপুস্তকগুলো ২০২৪ সালব্যাপী বহাল থাকবে। ২০২৫ সালে যথাসম্ভব সংশোধিত ও পরিমার্জিত পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করা হবে। ২০২৪ সালের অবশিষ্ট সময়েও বার্ষিক পরীক্ষায় ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের সংশোধিত ও পরিমার্জিত মূল্যায়ন পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করা হবে এবং তার একটি রূপরেখা শিগগিরই বিদ্যালয়ে পাঠানো হবে। যেসব শিক্ষার্থী ২০২৫ সালে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হবে, তাদের জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২-এর আলোকে প্রণীত শাখা ও গুচ্ছভিত্তিক সংশোধিত ও পরিমার্জিত পাঠ্যপুস্তকগুলো (বর্তমানে অর্থাৎ ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ব্যবহার করছেন) প্রদান করা হবে। এই শিক্ষার্থীরা নবম ও দশম শ্রেণি মিলিয়ে দুই শিক্ষাবর্ষে সম্পূর্ণ পাঠ্যসূচি শেষে ২০২৭ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। নতুন কারিকুলামে ছিল যে শুধু দশম শ্রেণির সিলেবাসে শিক্ষার্থীদের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে, সেটিও পরিবর্তন হলো।

নির্দেশনায় প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কে বলা হয়—প্রাথমিক স্তরে প্রাক-প্রাথমিক, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির পাঠ্য বইয়ের সঙ্গে ধারাবাহিকতা রেখে এরই মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্য বইগুলোর পাণ্ডুলিপি প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পরিমার্জন করে মুদ্রণ করা হবে। নতুন কারিকুলাম যে গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে এবং এটি বাস্তবায়নযোগ্য নয়, সেটি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়। শিক্ষার এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি এত সহজে অনুধাবন করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।

 

সংবাদদাতা/ ইলিয়াস

Facebook
WhatsApp
Twitter

এ সম্পর্কিত আরো খবর

সম্পাদকঃ

সুভাষ সাহা

যুগ্ন সম্পাদকঃ

কাজী কবির হোসেন

ঠিকানাঃ

নারায়ণগঞ্জ অফিসঃ
পদ্মা সিটি প্লাজা, কক্ষ নংঃ ২২২, ৫৫/বি
এস, এম মালেহ রোড, টানবাজার
নারায়ণগঞ্জ-১৪০০

যোগাযোগ

ফোনঃ ৭৬৪০৬৯৯
মোবাইলঃ ০১৭১১৫৬১৩৯০
ইমেইলঃ bisherbashi.com.bd@gmail.com

USA OFFICE:

Wasington DC Bureau Chief:
Dastagir Jahangir,
3621 Columbia Pike Suit #104
Arlington USA, VA
22204
Phone: 7036770679
Email: tugrilcz@gmail.com

 

Website Design & Developed By
MD Fahim Haque
<Power Coder/>
www.mdfahim.com
Web Solution – Since 2009

error: Content is protected !!